মেদিনীপুর, 30 জুন: পিএনডিপে অ্যাপ ডাউনলোডের পর মাস পেরলো না ৷ সব টাকা উধাও ৷ সাইবার ক্রাইম বিভাগে এই নিয়ে অভিযোগ দায়ের করলেন গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র সিএসপি এবং সিএসসি-র মালিকরা । মেদিনীপুর শহর ও জেলাজুড়ে প্রায় 10 থেকে 15 লক্ষ টাকার প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে । যদিও এই ঘটনার পর থেকে অ্যাপটি উধাও হয়ে গিয়েছে এবং এর কর্মকর্তাদের ফোন সুইচড অফ ।
লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা, চাষীদের টাকা, বার্ধক্য ভাতা-সহ বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দিতে ছোট ছোট কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট বা সিএসপি এবং কমন সার্ভিস সেন্টার বা সিএসসি ব্রাঞ্চ খুলেছেন শিক্ষিত বেকার যুবকরা । এই সিএসপি এবং সিএসসির ব্রাঞ্চগুলি বেশিরভাগই বেসরকারি ব্যাংক এবং আধা সরকারি ও সরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে কাজ করে ৷ মূলত গ্রামের বেকার শিক্ষিত যুবকরা চাকরি-বাকরি না পেয়ে এই কাজ শুরু করেছে ৷ ছোট ছোট অফিস খুলে তাঁরা গ্রামের মানুষকে অতি সহজেই অনলাইনের টাকা নগদে পাইয়ে দেন ।
জানা গিয়েছে, সম্প্রতি বেশ কয়েকজন যুবক তাঁদের কাছে আসেন এবং জানান যে তাঁরা নতুন অ্যাপ নিয়ে এসেছেন ৷ যার নাম পিএনডি পে ৷ এই অ্যাপের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করা হলে একদিকে যেমন বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে, তেমনই অতি সহজে লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন করা যাবে ৷ এই কথা শুনে সিএসপি ও সিএসসি-র যুবকরা ওই অ্যাপ ডাউনলোড করেন তাঁদের মোবাইল এবং কম্পিউটারে । মাসখানেক বেশ চলছিল ৷ কিন্তু গত 28 তারিখ থেকে সমস্যা সৃষ্টি হয় । সিএসপি চালানো যুবকদের অভিযোগ, তাঁরা 28 তারিখ সকালে উঠে দেখেন তাঁদের মোবাইল এবং ল্যাপটপ কম্পিউটার থেকে অ্যাপটি উধাও হয়ে গিয়েছে । পাশাপাশি এই অ্যাপ সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁরা যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন, তাঁদের ফোনও সুইচড অফ ৷
সিএসপি ও সিএসসি-র যুবকরা দেখেন, একাধিকবার ফোন করেও তাঁরা নিজেদের টাকা ওয়ালেট থেকে তুলতে পারছেন না ৷ অবশেষে তাঁরা দ্বারস্থ হন মেদিনীপুরের সাইবার ক্রাইম বিভাগে । মেদিনীপুর জেলা শহরে প্রায় 10-15 জন সিএসপি ও সিএসসি মালিক পুলিশের দ্বারস্থ হন । কারও 50 হাজার, কারও এক লাখ টাকা এই অ্যাপের ওয়ালেটে রাখা ছিল ৷ যার জেরে প্রায় 10 থেকে 15 লক্ষ টাকা প্রতারণা হয়েছে বলে অভিযোগ । ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ ৷
প্রতারণার শিকার হওয়া প্রীতম প্রতিহার, জগবন্ধু মাইতিরা বলেন, "আমরা ছোট ছোট সিএসপি গ্রামে খুলেছিলাম বাড়ির জমি বন্ধক দিয়ে । সম্প্রতি এই যুবকরা আমাদের অফিসে আসে এবং আমাদেরকে এই অ্যাপের কথা বলে । সেই অ্যাপের মাধ্যমে টাকা ট্রানজাকশনও হয় । কিন্তু 28 তারিখ থেকে আর কোনও টাকা আমাদের অ্যাকাউন্টে ঢোকেনি এবং সমস্ত ফোন সুইচড অফ ৷ অন্যদিকে অ্যাপ আনইনস্টল হয়ে গিয়েছে অটোম্যাটিক ।এখন আমরা সর্বস্বহারা ৷ কোথায় যাব ভেবে উঠতে পারছি না । যদিও থানায় এসে জানতে পারি একই অভিযোগ আগেও অনেকে করে গিয়েছে ।"
অন্যদিকে সফিউল আলম নামে আরেক অভিযোগকারী বলেন, "অনলাইনে আমরা টাকা বিভিন্ন গ্রামের মানুষকে পাঠিয়ে সাধারণত টাকা রোজগার করি । আমি নিজে এয়ারটেল পেমেন্ট ব্যাংকের একজন অথরাইজড সদস্য । কিছু যুবক এসে আমাদের এই ধরনের একটি অ্যাপ ডাউনলোড করে দিয়ে টাকা পাঠানোর সহজ পদ্ধতি বাতলে দেয় । এবং এটা যে গুগল ভেরিফাইড তা প্লেস্টোর থেকে আমরা জানতে পারি । কিন্তু এই গত 27-28 তারিখের পর থেকে এই অ্যাপটি অটোম্যাটিক আনইনস্টলড দেখাচ্ছে এবং আমরা প্রতারিত হয়েছি বলেই অভিযোগ করেছি থানায় ।"