বহরমপুর, 23 জুলাই: আমরা বাঁচব কি না জানতাম না ৷ চারিদিকে বোমার আওয়াজে ঘুম ভাঙত ৷ জানালায় উঁকি দিয়ে দেখতাম রাস্তায় সকলে ছুরি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ৷ তাতে আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম ৷ ঢাকার বেসরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ডাক্তারি পড়ুয়া নওসিন আহম্মেদ ৷ বাড়ি ফিরে শোনালেন বাংলাদেশের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কাটানো দিনগুলির কথা ৷ 26 ঘণ্টা ঢাকা বিমানবন্দরে আটকে থাকার পর সোমবার ভোররাতে অবশেষে মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলায় বাড়ি ফিরেছেন 20 বছরের এই ছাত্রী ৷
সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ ইস্যুতে ছাত্র আন্দোলনে উত্তপ্ত বাংলাদেশ । ছাত্র সংগঠনগুলির আন্দোলনে প্রাণ গিয়েছে শতাধিক। সুপ্রিম কোর্ট কোটার শতাংশ কমিয়ে দিলেও আন্দোলন এখন থিতিয়ে যায়নি । ঢাকা-সহ বিভিন্ন জায়গায় চলছে কারফিউ। নামানো হয়েছে সেনা, সাঁজোয়া ফোর্স । কিন্তু উত্তাপের রেশ এখনও কাটেনি । ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত 24 ঘণ্টা খোলা রেখে সেদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের ফেরানোর চেষ্টা চলছে । ইতিমধ্যে প্রায় 1200 ভারতীয়কে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ফেরানো হয়েছে দেশে । উড়ান পরিষেবা বন্ধ থাকায় বহু পড়ুয়া বিমানবন্দরে আটকে ছিলেন । তাঁদের মধ্যেই একজন হলেন ভগবানগোলার বাসিন্দা নওসিন আহম্মেদ । ঢাকার এক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিলেন তিনি ৷
নওসিনের কথায়, চোখের সামনে এক কলেজ ছাত্রের গুলিতে মৃত্যু দেখেছেন তিনি । উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ঢাকা শহরে বহু ঘর বাড়ি পুড়তে দেখেছেন । অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশে চারদিন তাঁদের হোস্টেলের ঘরে নিরাপদে রাখা হয়েছিল । অবশেষে কলেজ থেকে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছে দেওয়া হয়। নওসিনের সঙ্গে আরও কয়েকজন ভারতীয় ও নেপালি পড়ুয়া ছিলেন। সোমবার রাত দু'টো নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছন নওসিন । এরপর সেখান থেকে ভগবানগোলার বাড়িতে ৷ বাবা মাকে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন এই মেডিক্যাল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ।
তবে চোখের সামনে ছাত্র মৃত্যু ও ঘর বাড়ি জ্বলতে দেখার আতঙ্ক এখনও নওসিনের চোখে মুখে ভাসছে । তিনি বলেন, "আমরা জানতামই না কোটা আন্দোলন কী ৷ কলেজ থেকে ফিরে দেখলাম কোটা আন্দোলন চলছে ৷ আমাদের হস্টেলের বাইরে বেরোতে বারণ করা হল ৷ একটি ঘরে সকলে আটকে রইলাম ৷ তারপরেই চোখের সামনে দিনের পর দিন বাংলাদেশের পরিস্থিতি খারাপ থেকে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে দেখলাম ৷ বাড়ির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না ৷ ইন্টারনেট বন্ধ ছিল ৷"
কয়েকদিন একমাত্র মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না-পেরে উদ্বেগে কাটিয়েছেন বাবা-মাও । নওসিনের বাবা রুকন আহম্মেদ বলেন, "মেয়ের সঙ্গে হোস্টেলে শেষ কথা হয়েছিল চারদিন আগে । তখন মেয়ে বলেছিল, ভালো আছি চিন্তা করো না । মেয়ের গলা শুনে আমি বুঝতে পেরেছিলাম মোটেই সে ভালো নেই । কিন্তু ওঁর মাকে কিছুই বুঝতে দিইনি ৷ পাছে আরও উৎকন্ঠায় ভোগে । নিজের উৎকন্ঠা জোর করে চেপে রেখেছিলাম ।"
বাংলাদেশে আন্দোলন একদিন থামবে । কিন্তু কবে? নওসিনরা সেদিকেই চেয়ে রয়েছেন । পরিস্থিতি শান্ত হলে আবারও বাংলাদেশ যাবেন বলেই জানালেন তিনি । নওসিন আহম্মেদ বলেন, "আমার জীবনের সব থেকে আতঙ্কের দিন কেটেছে বাংলাদেশে । তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার আমি সেখানে যাব । কারণ আমি এখন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী । আমার ডাক্তারি পড়া শেষ করতে হবে ৷"