বর্ধমান, 10 জুলাই: মাওবাদী নেতা অর্ণব দামের কারণেই স্থগিত রয়েছে ইতিহাস বিভাগের পিএইডডি-এর ভর্তি প্রক্রিয়া ৷ কার্যত সেই কথা স্বীকার করে নিল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ভর্তির তারিখও নির্ভর করছে অর্ণবের উপর, সেকথাও স্বীকার করে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে পিএইচডি করার জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম হন মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম ৷ ইতিহাস নিয়ে গবেষণার জন্য মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল ৷ কিন্তু তা হয়নি ৷ কেন হয়নি, সে নিয়ে উঠতে থাকে প্রশ্ন ৷ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, অর্ণব দামকে ভর্তি নিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মত বিরোধ শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশের আতঙ্ক, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে অর্ণব ফের যদি মাওবাদী কার্যকলাপ শুরু করে, তবে তার দায় কে নেবে ! যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দাবি, তাঁদের জানা নেই অর্ণব মাওবাদী কি না।
সূত্রের খবর হুগলি জেলা সংশোধানাগারের তরফে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে একটা চিঠি পাঠানো হয়। সেখানে এক জেলবন্দি পিএইডডি করতে চাইছে বলে উল্লেখ করা হয়। সেই মতো তাঁকে অনুমতি দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি, জেলে থেকে কেউ পিএইডডি করতেই পারে। কিন্তু অর্ণব মাওবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তা সংশোধনাগারের তরফে জানানো হয়নি।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম চন্দ্র বলেন, "উনি মাওবাদী কি না আমরা জানি না । আমাদের কাছে একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে নাম এসেছে তাঁর । মিডিয়ার কাছ থেকেই কানে এসেছে মাওবাদী কথাটা । আমাদের কিছু জানা নেই । আমরা নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে পরীক্ষায় বসতে অনুমতি দিই।" তিনি আরও বলেন, "এরপর তিনি যদি পোস্ট ডক্টরেট করেন সেক্ষেত্রে ইউজিসি-র নিয়ম অনুযায়ী 6 মাসের কোর্সে তাঁকে উপস্থিত থেকে ক্লাস করতে হবে। সেক্ষেত্রে তিনি কীভাবে ক্লাস করবেন, সেই সমস্ত কিছু জানার জন্য জেল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। আপাতত ভর্তি প্রক্রিয়া থামিয়ে রাখা আছে বন্ধ করা হয়নি । এটা তো এমএ, এমএসসি কোর্স নয় ৷ তাই এখনই শুরু করার প্রয়োজনীয়তা নেই । দু'দিন পরে করলে কোনও অসুবিধা নেই ।"
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সৈয়দ তানভীর নাসরিন বলেন, "অর্ণব দাম সমাজের মূলস্রোতে ফিরতে চাইছেন। জেলে বসেই তিনি পড়াশোনা করছেন। তাঁকে মূলস্রোতে ফেরানোর জন্য সরকার বিচার বিভাগ, কারা বিভাগ সকলে যেভাবে ইতিবাচক ভূমিকা নিয়েছে তাতে সাধুবাদ জানাই । তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সমাজের আমাদের সকলের কর্তব্য।"
তিনি আরও বলেন, "1977 সালে জেলের ভিতর থেকে জর্জ ফার্ন্ডান্ডেজ লোকসভা নির্বাচনে লড়েছিলেন। শুধু তাই নয়, চলতি লোকসভা নির্বাচনেও পঞ্জাব ও কাশ্মীরে জেলের ভিতর থেকে নির্বাচনে লড়ে সাংসদ হয়েছেন । তাঁরা যদি এসে শপথ গ্রহণ করতে পারেন, তাহলে অর্ণব তো পড়াশোনা করতে আসছেন। তাই অসুবিধা কিছু থাকার কথা নয়।"
এপিডিআর-এর রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত সুর বলেন, "একজন মাওবাদী সমাজের মূলস্রোতে ফেরার চেষ্টা করছেন। তাঁকে সহযোগিতা করছে কারা কর্তৃপক্ষ, সরকার সকলেই। তিনি জেল থেকে পড়াশোনা করে পিএইচডির প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন। তাঁকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ভর্তি হতে দেওয়া হচ্ছে না । এটা তো অন্যায় ।"