বেলঘরিয়া, 11 জুলাই: আড়িয়াদহের 'ত্রাস' জয়ন্ত সিংয়ের আরও এক 'কীর্তি' ফাঁস ! এবার হদিশ মিলল তাঁর কোটি টাকার প্রাসাদোপম বাড়ির । যা ঘিরে কৌতূহল বেড়েছে সকলের । বাড়ি বললে ভুল হবে ! এ যেন শ্বেতপ্রাসাদ । সাদা রঙের এই বাড়িটির সঙ্গে হোয়াইট হাউসের মিলও খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে । তাই তো কেউ কেউ জয়ন্ত'র এই বিলাসবহুল বাড়িটিকে বলতে শুরু করেছেন 'হোয়াইট হাউস'!
কিন্তু, সামান্য দুধের ব্যবসা থেকে কীভাবে এতবড় দুধ সাদা প্রাসাদ বানালেন, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্য ৷ কোথা থেকে এল এত বড় বাড়ি তৈরির টাকা, উঠছে প্রশ্ন ৷ জয়ন্তর আয়ের উৎস কী ? কার মদতে তিনি ফুলেফেঁপে উঠেছিলেন ? এমনই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনীতির অন্দরে ।
উত্তর 24 পরগনার আড়িয়াদহের মৌসুমী মোড় থেকে কিছুটা এগিয়ে প্রতাপ রুদ্র লেন । সেখানেই দুটি বাড়ি জয়ন্ত'র। একটি তাঁদের পৈতৃক বাড়ি । জনবসতিপূর্ণ এলাকার সেই বাড়িতে এখনও দিব্য চলছে খাটাল । এদিকে নতুন যে প্রাসাদোপম বাড়িটি ঘিরে জোর চর্চা শুরু হয়েছে, সেই জমিটি একসময় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল । বিকেল হলেই সেখানে পাড়ার খুদেরা খেলাধূলা করতে যেত । দু'বছরের মধ্যেই নাকি জমিটি জয়ন্ত সিংয়ের কব্জায় চলে যায় । এনিয়েও অভিযোগ রয়েছে বিস্তর !
কান পাতলেই শোনা যায়, শাসকদলের মদতেই নাকি অন্যের জমি রাতারাতি দখল করে সেখানে নির্মাণ কাজ শুরু করেন জয়ন্ত সিং । বছর খানেকের মধ্যেই সেই বিলাসবহুল বাড়ির নির্মাণ কাজ শেষ হয় । বাড়ির প্রতিটি কোণ বিদেশি মার্বেল এবং কাঁচ দিয়ে মোড়া । রয়েছে দুষ্প্রাপ্য পাথরও । গোটা বাড়িটিই সাজানো হয়েছে দুরন্ত ইন্টেরিয়রে । চোখ ধাঁধানো তিনতলা এই বাড়িতে কী নেই ! দামি টিভি, ফ্রিজ, এসি থেকে আমোদ প্রমোদের সমস্ত উপকরণই রয়েছে । আছে কয়েক লক্ষ টাকার মাহিন্দ্রা থর-এর মতো গাড়িও । ইতিমধ্যে বাইরের অংশে সিসিটিভি বসানো হয়ে গেলেও ভিতরে এখনও চলছে কাজ ।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, কয়েক বছর আগেও বাড়ি তৈরির জায়গাটি ছিল জঙ্গলে ভরা ৷ তারপর গত বছর সেখানে অট্টালিকা তৈরির কাজ শুরু হয় ৷ একবছরের মধ্যেই নাকি বাড়িটি তৈরি হয়ে যায় ৷ তবে এই বাড়ি তৈরি নিয়েও একাধিক অভিযোগ উঠেছে ৷ পুকুরের অনেকটা অংশ বুজিয়ে বাড়ি তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে । বাড়ি তৈরির কোনও বৈধ অনুমতিও পৌরসভার থেকে নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ । বিরোধী শিবিরের তরফে অভিযোগ, এটাই ভবিতব্য ছিল শাসকদলের কাছে । কারণ, তাঁদের ছত্রছায়ায়াতেই আড়িয়াদহের ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন জয়ন্ত সিং ও তাঁর দলবল । এখন পিঠ বাঁচাতে তাঁরা দায় ঝেড়ে ফেলছে ।
শোনা যাচ্ছে, জয়ন্তর এই প্রভাব-প্রতিপত্তির নেপথ্যে রয়েছে শাসকদলের একাধিক প্রভাবশালী নেতার মদত । যার মধ্যে তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রের নামও জড়িয়েছে । যদিও আড়িয়াদহের বেতাজ বাদশা জয়ন্ত সিং-কে তাঁর ঘনিষ্ঠ হিসেবে দেখতে নারাজ কামারহাটির এই বিধায়ক । শুধু শাসকদলের সঙ্গেই যোগ ছিল না জয়ন্তের । এলাকার প্রোমোটারদেরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন এই 'বাহুবলী'। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এলাকা কার্যত নিজের দখলে করে নেন বলে অভিযোগ ।
তোলাবাজি, হুমকি, খুনের চেষ্টা, মারধর অসামাজিক নানা কাজের সঙ্গে নাকি যুক্ত জয়ন্ত ৷ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় কেউ জমি কিনলেও মোটা টাকা দিতেই হত জয়ন্তকে । আইন-আদালত কোনও কিছুরই পরোয়া করতেন না তিনি । ফলে নিজের মতো করে সাম্রাজ্য তৈরি করছিলেন । বিহার থেকে ছেলেদের নিয়ে আসতেন কাজে লাগানোর জন্য ।