ETV Bharat / state

বিধায়কদের শপথ নিয়ে অধ্যক্ষের পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্যপালকে ‘লাইন মেনে চলার’ পরামর্শ মুখ্যমন্ত্রীর - Mamata Banerjee - MAMATA BANERJEE

Mamata Banerjee: চার বিধায়কের শপথ নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছিল, তা নিয়ে মঙ্গলবার রাজ্যপালকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ রাজ্যপালকে লাইন মেনে চলার পরামর্শও দেন তিনি ৷ পাশাপাশি তিনি জানান যে অধ্যক্ষ নিয়ম মেনেই শপথগ্রহণ করিয়েছেন ৷

Mamata Banerjee
মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়-সিভি আনন্দ বোস (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jul 23, 2024, 3:36 PM IST

Updated : Jul 23, 2024, 7:59 PM IST

কলকাতা, 23 জুলাই: বিধায়কদের শপথগ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়ে বিধানসভা ও রাজভবনের টানাপোড়েন নিয়ে আরও একবার সরব হলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ মঙ্গলবার সদ্য হওয়া উপ-নির্বাচনে জয়ী চার বিধায়ক বিধানসভায় শপথগ্রহণ করেন ৷ এই নিয়ে অধ্য়ক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থানকেই সমর্থন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ পাশাপাশি আক্রমণ শানিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস সম্বন্ধে ৷

এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘অধ্যক্ষ তাঁর যে চেয়ারের গুরুত্ব, বিধানসভার সিস্টেম অনুযায়ী হাউসের কনসেন্ট নিয়ে রুল ফাইভকে বেস করে যে শপথ হয়েছে, তা সর্বসম্মতক্রমে হয়েছে । কেউ বিরোধিতা করেনি । যদি কারও কিছু বক্তব্য থাকত হাজির থেকে বলতেই পারতেন । বলেননি ।’’

এর পর মুখ্যমন্ত্রী পরিষদীয় রাজনীতিতে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি সাতবারের সাংসদ ছিলাম, এখানে তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী । এই নিয়ে দশবারের জনপ্রতিনিধি । সেক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে কনস্টিটিউশন (সংবিধান) যেমন আছে, তেমন কনভেনশনও আছে । অনেক কাজ আমরা কনভেনশন মেনে করি । যখন কনস্টিটিউশন ও কনভেনশন এক হয়ে যায়, তখন গণতন্ত্রের ধ্বজা ধরে নতুন নতুন প্রিসিডেন্ট (নজির) তৈরি হয় । এর নজির সারা ভারতের সংবিধানে আছে । সংসদ থেকে বিধানসভাতেও অনেক আছে ।’’

এর পরই রাজ্যপালের প্রসঙ্গে আসেন মুখ্যমন্ত্রী৷ মমতা বলেন, ‘‘মাননীয় রাজ্যপাল যা বলছেন, আমি সংবাদমাধ্যমে দেখেছি । তবে আমি অধ্যক্ষের সঙ্গে একমত । সায়ন্তিকা ও রেয়াত নির্বাচিত হয়েছিলেন 4 জুন । 13 জুন রাজ্যপালের কাছে লেটার পাঠানো হয়েছিল । 19 জুন রাজ্যপাল কিছু তথ্য চেয়েছিলেন । যেগুলি শপথের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় । এরপর 20 তারিখ আবার অধ্যক্ষ চিঠি পাঠান । 21 জুন রাজভবনে শপথের জন্য সায়ন্তিকা ও রেয়াতকে চিঠি দেওয়া হয় । এক্ষেত্রে রাজ্যপাল স্বীকার করে নিয়েছিলেন তিনি রাজভবনে শপথ পাঠ করাতে পারেন ।’’

মুখ্যমন্ত্রী এরপর প্রশ্ন তোলেন, ‘‘রাজভবনে যদি শপথ পাঠ করানোর অধিকার থাকে, তাহলে কেন বিধানসভায় অধিকার থাকবে না ? রাজভবন নমিনেটেড (মনোনীত) । বিধানসভা সেখানে নির্বাচিত । এখানে নতুন করে কনভেনশন তৈরি হয় । আর 25 তারিখে রাজ্যপাল সায়ন্তিকা ও রেয়াতের বিরুদ্ধে পেনাল্টি জারি করেন ।’’ মমতার কথায়, ‘‘যারা আসল ডাকাত, আসল ক্রিমিনাল, তাদের পেনাল্টি হয় না । নিট নিয়ে যারা নিজেদের ফিট মনে করে, তাদের পেনাল্টি হয় না । পেনাল্টি কাদের হয় ! যাদের সাধারণ মানুষ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন ।’’

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘আমি প্রভিশন দেখেছি । একটা প্রভিশন আছে, সেটা ইংরেজদের তৈরি করে দেওয়া রুল । অনেক আগেকার । তারপর ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার পর অনেক রুল হয়েছে ৷ সেগুলোর সংস্কারও হয়েছে কিছু সময় পরপর । এমনকি সংবিধানও অনেকবার সংশোধন হয়েছে । এই রুলটার দিকে কেউ তাকাইনি ৷ কারণ প্রয়োজন পড়েনি । আমি যতবার সংসদে নির্বাচিত হয়েছি, দেখেছি শপথ সবসময় অধ্যক্ষ দেন । আমি কখনোই দেখিনি সাধারণ সদস্য়দের রাষ্ট্রপতি শপথ দিচ্ছেন । এমনকি রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকেও তার নিজের ঘরে শপথবাক্য পাঠ করাতে দেখাতে গিয়েছে । কিন্তু আজ এমন কি ঘটল বাংলায়, যা এত বছরে হয়নি ? তিনি নতুনভাবে আইনের সব ব্যাখ্যা দিচ্ছেন । আইনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বেআইনি ব্যাখ্যা দিলে চলবে না ।’’

এর পর মুখ্যমন্ত্রীর মুখে রাজ্যপালের সম্বন্ধে হুঁশিয়ারি শোনা যায় ৷ তিনি বলেন, লাইনে চলুন ৷ বেলাইনে চলার চেষ্টা করবেন না । গণতন্ত্র লাইনে থেকে লাইনটাকে মজবুত করে । আপনার যেমন সাংবিধানিকভাবে কিছু ক্ষমতা রয়েছে, আপনাকেও সংবিধানকে মানতে হবে । আপনি কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাত দুষ্ট হতে পারেন না । আপনাকে সম্পূর্ণভাবে পশ্চিমবঙ্গ প্রতি ডেডিকেটেড থাকতে হবে । কিন্তু তেমনটি হচ্ছে না । আপনি এটা মেনে চলেন না । তাহলে আপনার বিরুদ্ধে কে পেনাল্টি দেবে ?’’

বিধানসভায় দাঁড়িয়ে রাজ্যপালকে উদ্দেশ্য করে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘আপনি পেনাল্টি চাইছেন সংবিধানে রুলস আছে । পেনাল্টি নিতে পারেন । কাকে দেবেন ! প্রয়োজনটা কার ? কোথাও ধার বাকি আছে কিছু ? নাকি কিছু কিছু জল-টল খাওয়ার ব্যাপার আছে । তাহলে আমি জল-পানের ব্যবস্থা করে দিতে পারি কোনও অসুবিধা নেই । অথবা কাউকে কাউকে সন্তুষ্ট করে দেওয়ার ব্যবস্থা ।’’ এর পর ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কিন্তু আমি কখনও শুনিনি বেচারা সবে জিতে এসেছেন, আজ পর্যন্ত হাউসে পা রেখে উঠতে পারলেন না, তাঁকে পেনাল্টি দিতে হবে । তাঁকে উৎসাহিত করার পরিবর্তে পেনাল্টি দিতে বলা হচ্ছে । এটা কি নিষ্ঠুরতা নয় ?’’

মুখ্যমন্ত্রী আরও প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এসব থেকে কী শিখবে মানুষ ! কী জানবে নবাগত বিধায়কেরা ! একবার তাঁরা নির্বাচনে জিতে এসেছেন ৷ মানুষের দরজায় দরজায় ঘুরে পরিশ্রম করে জিতে যেদিন স্বপ্ন দেখার দিন, সেদিনই তাঁকে পেনাল্টি করা হবে । স্বপ্নের বদলে তাঁকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে ! এটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় হতে পারে না ।’’

এর পর শপথ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অধ্যক্ষ যে সিদ্ধান্ত নেবেন, বিধানসভা তা মেনে নেবে । কারণ, হাউসে অধ্যক্ষই সুপ্রিম । দুই নবনির্বাচিত বিধায়ককে বলেছিল রাজ্যপাল বিধানসভায় এসে শপথবাক্য পাঠ করান । কেন এলেন না ! বিধানসভার স্পিকার তো খুলে রেখে দিয়েছিলেন দরজা । কেন আপনি আসেননি ? এখন যখন চার বিধায়কের শপথের জন্য লেখা হল, এখন বিধানসভার সেশন চলছে । আপনি তো হাউস চলাকালীন আসতেই পারেন । হাউস না চলাকালীনও আপনি আসতে পারেন ৷ কেউ আপনাকে বাধা তো দেয়নি । আপনি এলেন না কেন ! আপনি দিল্লিতে বসে না থেকে এক পা দূরেই রাজভবন হাঁটি-হাঁটি পা-পা করলেই হয়ে যেত... ।’’

মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, ‘‘কতদিন পর্যন্ত বিধায়করা অপেক্ষা করবেন । সায়ন্তিকারা নির্বাচিত হয়েছিলেন পয়লা জুন । ওঁদের দুর্ভাগ্য ওঁদের দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে । অধ্যক্ষ চিঠি লিখেছেন, ওঁরা নিজেরা চিঠি লিখেছেন । উনি হ্যালেনও না, নড়েনও না । শুধু চিঠিতে কিছু সাংবিধানিক ভাষা লেখেন । আপনার যেমন সাংবাধিনক ভাষা আছে, আমাদেরও আছে । মনে রাখবেন মানুষ সব ভাষার উর্ধ্বে ।’’

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘এই বিষয়টা নিয়ে অধ্যক্ষ রাষ্ট্রপতিকে পর্যন্ত চিঠি দিয়েছেন । 27 দিনের মাথায় শেষ চিঠি তিনি রাজ্যপালকে লেখেন । রুল ফিফটিন মেনে পরবর্তীতে বিধানসভার অধিবেশন ডাকা হল । তারপরে 31 দিনের মাথায় রুল ফাইভ ধরে বিধায়কের শপথ হল ।’’ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘এমনিতেই এরা পুরো সময় পাবে না মানুষের সেবা করার । তাঁদের একটা মাস নষ্ট করে দেওয়ার আগে একবার মনে হল না এটা করা উচিত নয় । মনে হল না এক একটা মিনিটে এক একটা সেকেন্ডে কত কাণ্ড হয়ে যায় ।’’

এ দিন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে মমতা বলেন, ‘‘রাজ্যপাল ডেপুটি স্পিকারকে অথরাইজ করেছিলেন শপথের জন্য । কিন্তু বিধানসভায় স্পিকার থাকাকালীন ডেপুটি স্পিকার শপথবাক্য পাঠ করাতে পারেন না । এক্ষেত্রে তিনি বলতেই পারেন স্পিকার আমার ঊর্ধ্বে, এই অবস্থায় আমি শপথবাক্য পাঠ করাবো না । যেহেতু তিনি আমার ঊর্ধ্বতন, তিনি যখন আছেন তিনিই শপথবাক্য পাঠ করান । এর মধ্যে অন্যায় কী আছে ? তিনি তো ঠিকই করেছেন । তুমি কাউকে অটো লাইক করেছ । তার পালটা হিসাবে তিনি চেয়ারকে অথরাইজ করেছেন । এতে অন্যায়ের কি আছে ? ডেপুটি স্পিকার যা বলেছেন সব রেকর্ডেড রয়েছে । এবং হাউসের প্রসিডিংস রেকর্ডেড রয়েছে ।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘ঐতিহ্য মেনে সাধারণত বিধায়কদের শপথ হয় বিধানসভায় । সংবিধানের 188 নম্বর ধারা অনুসারে এই বিষয়টাতে অনুমতি দেন রাজ্যপাল । কই এতদিন তো এর অন্যথা হয়নি । ভুলে যাবেন না অতীতে এক রাজ্যপালের সময় বামেরা রাজভবনেই যায়নি । তারা রাজ্যপাল কে বয়কট করেছিলেন । এই বিষয়টা একদমই নতুন নয় । কিন্তু সেই সময়ও এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি ।’’

কেন অধ্যক্ষ শপথবাক্য পাঠ করাতে পারেন, তাও রুলবুক পড়ে জানিয়েছেন মমতা । তিনি বলেন, ‘‘যদি বিধানসভা চলাকালীন কোনও বিধায়কের শপথ না হয় । পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার রুলবুক অনুসারে অধ্যক্ষ পারেন তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করাতে । তবে এক্ষেত্রে প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে প্রিভিয়াস নোটিশ দিতে হবে । রুল ফাইভ স্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছে স্পিকারের এই ক্ষমতা রয়েছে । অতএব রুল অনুযায়ী অধ্যক্ষ যে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন, তা সঠিক ।’’

কলকাতা, 23 জুলাই: বিধায়কদের শপথগ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়ে বিধানসভা ও রাজভবনের টানাপোড়েন নিয়ে আরও একবার সরব হলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ মঙ্গলবার সদ্য হওয়া উপ-নির্বাচনে জয়ী চার বিধায়ক বিধানসভায় শপথগ্রহণ করেন ৷ এই নিয়ে অধ্য়ক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থানকেই সমর্থন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ পাশাপাশি আক্রমণ শানিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস সম্বন্ধে ৷

এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘অধ্যক্ষ তাঁর যে চেয়ারের গুরুত্ব, বিধানসভার সিস্টেম অনুযায়ী হাউসের কনসেন্ট নিয়ে রুল ফাইভকে বেস করে যে শপথ হয়েছে, তা সর্বসম্মতক্রমে হয়েছে । কেউ বিরোধিতা করেনি । যদি কারও কিছু বক্তব্য থাকত হাজির থেকে বলতেই পারতেন । বলেননি ।’’

এর পর মুখ্যমন্ত্রী পরিষদীয় রাজনীতিতে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি সাতবারের সাংসদ ছিলাম, এখানে তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী । এই নিয়ে দশবারের জনপ্রতিনিধি । সেক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে কনস্টিটিউশন (সংবিধান) যেমন আছে, তেমন কনভেনশনও আছে । অনেক কাজ আমরা কনভেনশন মেনে করি । যখন কনস্টিটিউশন ও কনভেনশন এক হয়ে যায়, তখন গণতন্ত্রের ধ্বজা ধরে নতুন নতুন প্রিসিডেন্ট (নজির) তৈরি হয় । এর নজির সারা ভারতের সংবিধানে আছে । সংসদ থেকে বিধানসভাতেও অনেক আছে ।’’

এর পরই রাজ্যপালের প্রসঙ্গে আসেন মুখ্যমন্ত্রী৷ মমতা বলেন, ‘‘মাননীয় রাজ্যপাল যা বলছেন, আমি সংবাদমাধ্যমে দেখেছি । তবে আমি অধ্যক্ষের সঙ্গে একমত । সায়ন্তিকা ও রেয়াত নির্বাচিত হয়েছিলেন 4 জুন । 13 জুন রাজ্যপালের কাছে লেটার পাঠানো হয়েছিল । 19 জুন রাজ্যপাল কিছু তথ্য চেয়েছিলেন । যেগুলি শপথের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় । এরপর 20 তারিখ আবার অধ্যক্ষ চিঠি পাঠান । 21 জুন রাজভবনে শপথের জন্য সায়ন্তিকা ও রেয়াতকে চিঠি দেওয়া হয় । এক্ষেত্রে রাজ্যপাল স্বীকার করে নিয়েছিলেন তিনি রাজভবনে শপথ পাঠ করাতে পারেন ।’’

মুখ্যমন্ত্রী এরপর প্রশ্ন তোলেন, ‘‘রাজভবনে যদি শপথ পাঠ করানোর অধিকার থাকে, তাহলে কেন বিধানসভায় অধিকার থাকবে না ? রাজভবন নমিনেটেড (মনোনীত) । বিধানসভা সেখানে নির্বাচিত । এখানে নতুন করে কনভেনশন তৈরি হয় । আর 25 তারিখে রাজ্যপাল সায়ন্তিকা ও রেয়াতের বিরুদ্ধে পেনাল্টি জারি করেন ।’’ মমতার কথায়, ‘‘যারা আসল ডাকাত, আসল ক্রিমিনাল, তাদের পেনাল্টি হয় না । নিট নিয়ে যারা নিজেদের ফিট মনে করে, তাদের পেনাল্টি হয় না । পেনাল্টি কাদের হয় ! যাদের সাধারণ মানুষ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন ।’’

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘আমি প্রভিশন দেখেছি । একটা প্রভিশন আছে, সেটা ইংরেজদের তৈরি করে দেওয়া রুল । অনেক আগেকার । তারপর ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার পর অনেক রুল হয়েছে ৷ সেগুলোর সংস্কারও হয়েছে কিছু সময় পরপর । এমনকি সংবিধানও অনেকবার সংশোধন হয়েছে । এই রুলটার দিকে কেউ তাকাইনি ৷ কারণ প্রয়োজন পড়েনি । আমি যতবার সংসদে নির্বাচিত হয়েছি, দেখেছি শপথ সবসময় অধ্যক্ষ দেন । আমি কখনোই দেখিনি সাধারণ সদস্য়দের রাষ্ট্রপতি শপথ দিচ্ছেন । এমনকি রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকেও তার নিজের ঘরে শপথবাক্য পাঠ করাতে দেখাতে গিয়েছে । কিন্তু আজ এমন কি ঘটল বাংলায়, যা এত বছরে হয়নি ? তিনি নতুনভাবে আইনের সব ব্যাখ্যা দিচ্ছেন । আইনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বেআইনি ব্যাখ্যা দিলে চলবে না ।’’

এর পর মুখ্যমন্ত্রীর মুখে রাজ্যপালের সম্বন্ধে হুঁশিয়ারি শোনা যায় ৷ তিনি বলেন, লাইনে চলুন ৷ বেলাইনে চলার চেষ্টা করবেন না । গণতন্ত্র লাইনে থেকে লাইনটাকে মজবুত করে । আপনার যেমন সাংবিধানিকভাবে কিছু ক্ষমতা রয়েছে, আপনাকেও সংবিধানকে মানতে হবে । আপনি কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাত দুষ্ট হতে পারেন না । আপনাকে সম্পূর্ণভাবে পশ্চিমবঙ্গ প্রতি ডেডিকেটেড থাকতে হবে । কিন্তু তেমনটি হচ্ছে না । আপনি এটা মেনে চলেন না । তাহলে আপনার বিরুদ্ধে কে পেনাল্টি দেবে ?’’

বিধানসভায় দাঁড়িয়ে রাজ্যপালকে উদ্দেশ্য করে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘আপনি পেনাল্টি চাইছেন সংবিধানে রুলস আছে । পেনাল্টি নিতে পারেন । কাকে দেবেন ! প্রয়োজনটা কার ? কোথাও ধার বাকি আছে কিছু ? নাকি কিছু কিছু জল-টল খাওয়ার ব্যাপার আছে । তাহলে আমি জল-পানের ব্যবস্থা করে দিতে পারি কোনও অসুবিধা নেই । অথবা কাউকে কাউকে সন্তুষ্ট করে দেওয়ার ব্যবস্থা ।’’ এর পর ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কিন্তু আমি কখনও শুনিনি বেচারা সবে জিতে এসেছেন, আজ পর্যন্ত হাউসে পা রেখে উঠতে পারলেন না, তাঁকে পেনাল্টি দিতে হবে । তাঁকে উৎসাহিত করার পরিবর্তে পেনাল্টি দিতে বলা হচ্ছে । এটা কি নিষ্ঠুরতা নয় ?’’

মুখ্যমন্ত্রী আরও প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এসব থেকে কী শিখবে মানুষ ! কী জানবে নবাগত বিধায়কেরা ! একবার তাঁরা নির্বাচনে জিতে এসেছেন ৷ মানুষের দরজায় দরজায় ঘুরে পরিশ্রম করে জিতে যেদিন স্বপ্ন দেখার দিন, সেদিনই তাঁকে পেনাল্টি করা হবে । স্বপ্নের বদলে তাঁকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে ! এটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় হতে পারে না ।’’

এর পর শপথ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অধ্যক্ষ যে সিদ্ধান্ত নেবেন, বিধানসভা তা মেনে নেবে । কারণ, হাউসে অধ্যক্ষই সুপ্রিম । দুই নবনির্বাচিত বিধায়ককে বলেছিল রাজ্যপাল বিধানসভায় এসে শপথবাক্য পাঠ করান । কেন এলেন না ! বিধানসভার স্পিকার তো খুলে রেখে দিয়েছিলেন দরজা । কেন আপনি আসেননি ? এখন যখন চার বিধায়কের শপথের জন্য লেখা হল, এখন বিধানসভার সেশন চলছে । আপনি তো হাউস চলাকালীন আসতেই পারেন । হাউস না চলাকালীনও আপনি আসতে পারেন ৷ কেউ আপনাকে বাধা তো দেয়নি । আপনি এলেন না কেন ! আপনি দিল্লিতে বসে না থেকে এক পা দূরেই রাজভবন হাঁটি-হাঁটি পা-পা করলেই হয়ে যেত... ।’’

মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, ‘‘কতদিন পর্যন্ত বিধায়করা অপেক্ষা করবেন । সায়ন্তিকারা নির্বাচিত হয়েছিলেন পয়লা জুন । ওঁদের দুর্ভাগ্য ওঁদের দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে । অধ্যক্ষ চিঠি লিখেছেন, ওঁরা নিজেরা চিঠি লিখেছেন । উনি হ্যালেনও না, নড়েনও না । শুধু চিঠিতে কিছু সাংবিধানিক ভাষা লেখেন । আপনার যেমন সাংবাধিনক ভাষা আছে, আমাদেরও আছে । মনে রাখবেন মানুষ সব ভাষার উর্ধ্বে ।’’

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘এই বিষয়টা নিয়ে অধ্যক্ষ রাষ্ট্রপতিকে পর্যন্ত চিঠি দিয়েছেন । 27 দিনের মাথায় শেষ চিঠি তিনি রাজ্যপালকে লেখেন । রুল ফিফটিন মেনে পরবর্তীতে বিধানসভার অধিবেশন ডাকা হল । তারপরে 31 দিনের মাথায় রুল ফাইভ ধরে বিধায়কের শপথ হল ।’’ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘এমনিতেই এরা পুরো সময় পাবে না মানুষের সেবা করার । তাঁদের একটা মাস নষ্ট করে দেওয়ার আগে একবার মনে হল না এটা করা উচিত নয় । মনে হল না এক একটা মিনিটে এক একটা সেকেন্ডে কত কাণ্ড হয়ে যায় ।’’

এ দিন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে মমতা বলেন, ‘‘রাজ্যপাল ডেপুটি স্পিকারকে অথরাইজ করেছিলেন শপথের জন্য । কিন্তু বিধানসভায় স্পিকার থাকাকালীন ডেপুটি স্পিকার শপথবাক্য পাঠ করাতে পারেন না । এক্ষেত্রে তিনি বলতেই পারেন স্পিকার আমার ঊর্ধ্বে, এই অবস্থায় আমি শপথবাক্য পাঠ করাবো না । যেহেতু তিনি আমার ঊর্ধ্বতন, তিনি যখন আছেন তিনিই শপথবাক্য পাঠ করান । এর মধ্যে অন্যায় কী আছে ? তিনি তো ঠিকই করেছেন । তুমি কাউকে অটো লাইক করেছ । তার পালটা হিসাবে তিনি চেয়ারকে অথরাইজ করেছেন । এতে অন্যায়ের কি আছে ? ডেপুটি স্পিকার যা বলেছেন সব রেকর্ডেড রয়েছে । এবং হাউসের প্রসিডিংস রেকর্ডেড রয়েছে ।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘ঐতিহ্য মেনে সাধারণত বিধায়কদের শপথ হয় বিধানসভায় । সংবিধানের 188 নম্বর ধারা অনুসারে এই বিষয়টাতে অনুমতি দেন রাজ্যপাল । কই এতদিন তো এর অন্যথা হয়নি । ভুলে যাবেন না অতীতে এক রাজ্যপালের সময় বামেরা রাজভবনেই যায়নি । তারা রাজ্যপাল কে বয়কট করেছিলেন । এই বিষয়টা একদমই নতুন নয় । কিন্তু সেই সময়ও এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি ।’’

কেন অধ্যক্ষ শপথবাক্য পাঠ করাতে পারেন, তাও রুলবুক পড়ে জানিয়েছেন মমতা । তিনি বলেন, ‘‘যদি বিধানসভা চলাকালীন কোনও বিধায়কের শপথ না হয় । পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার রুলবুক অনুসারে অধ্যক্ষ পারেন তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করাতে । তবে এক্ষেত্রে প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে প্রিভিয়াস নোটিশ দিতে হবে । রুল ফাইভ স্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছে স্পিকারের এই ক্ষমতা রয়েছে । অতএব রুল অনুযায়ী অধ্যক্ষ যে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন, তা সঠিক ।’’

Last Updated : Jul 23, 2024, 7:59 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.