কোচবিহার, 15 এপ্রিল: রামনবমীতে হিংসা ছড়াতে পারে বিজেপি ৷ সোমবার কোচবিহারে নির্বাচনী জনসভা থেকে এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাই তাঁর বার্তা, ‘‘কেউ কোনও প্ররোচনায় পা দেবেন না ।’’
কোচবিহার লোকসভা আসনে ভোট আগামী 19 এপ্রিল ৷ সেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী জগদীশ চন্দ্র বর্মা বসুনিয়া ৷ তাঁর সমর্থনে সোমবার সভা হয় কোচবিহারের রাসমেলা ময়দানে ৷ সেই সভার মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলেন, ‘‘17 তারিখ ওদের হিংসা ছড়ানোর দিন । কেউ কোনও প্ররোচনায় পা দেবেন না ।’’
এখানে অবশ্য তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের নাম বলেননি ৷ তবে তা তাঁর নিশানা যে বিজেপিই, তা বলার অপেক্ষা রাখে না ৷ কারণ, তিনি এই কথা বলার পরই এনআইএ-র অপব্য়বহারের অভিযোগ তুলে সরব হন ৷ মমতা বলেন, ‘‘ওরা চায় হিংসা করে এনআইএ ঢুকিয়ে দিয়ে ভোট করাতে । ভোটের আগে ওরা হিংসা ছড়াতে পারে । হিংসায় যাবেন না ।’’
উল্লেখ্য, গত বছর রামনবমীর দিন রাজ্য়ের বেশ কয়েকটি হিংসার ঘটনা ঘটে ৷ এই নিয়ে বিজেপিকেই কাঠগড়ায় তুলেছিল তৃণমূল ৷ সেই ঘটনাগুলিতে আদালতের নির্দেশে এনআইএ তদন্ত করছে ৷ তবে তদন্তের নামে এনআইএ-কে বিজেপি অপব্যবহার করছে বলে বারবার অভিযোগ করেছে তৃণমূল ৷ এ দিনও কার্যত সেই অভিযোগই শোনা গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায় ৷
এ দিন মমতা সরব হন কোচবিহারের সাংসদ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা এবার ওই আসনে বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিকের বিরুদ্ধেও৷ মমতা বলেন, ‘‘আপনাকে গালিও যদি দেয়, কোনও সাড়া দেবেন না । আপনার এখানকার যিনি প্রার্থী, তিনি গুন্ডা সর্দার । গুন্ডার মাফিয়া তিনি । শীতলকুচির মতো গুলি চালিয়ে দেবে । আবার আপনাদের বিপদে ফেলবে । সংখ্যালঘু ভাইবোনদের বলছি, আপনাকে গালি দেবে ৷ আপনারা প্রার্থনা করবেন যাতে ওরা চলে যায় ।’’
এছাড়া একাধিক ইস্যুতে তিনি বিজেপির সমালোচনা করেন ৷ মমতার প্রশ্ন, ‘‘ভিভিপ্যাটে চিপ কেন লাগাচ্ছে জানতে চাই ?’’ তিনি বিজেপির ইস্তাহার নিয়েও সমালোচনা করেন ৷ মমতা বলেন, ‘‘ম্যানিফেস্টোতে কী বলেছে দেখেছেন ! আমি যেটা আগেই বলেছিলাম ৷ মাছের মাথাটা ক্যা । দেশটা বেচে দিচ্ছে । তফশিলিদের অধিকার থাকবে না । সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব থাকবে না । আপনি কী খাবেন লিখে দেবে । লিখে দেবে সকালে চায়ের সাথে গোমূত্র খাবেন । গোবরের সঙ্গে মিশিয়ে খাও ।রাত্রে কী খাবেন, কতক্ষণ ঘুমোবেন, তাও ঠিক করে দেবে ।’’
বিজেপির সমালোচনায় তৃণমূল নেত্রী আরও বলেন, ‘‘আজ এই সরকার যদি থাকে, ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন করবে । রাজ্যগুলো থাকবে না । এক নায়কতন্ত্র, স্বৈরনায়ক তৈরি হবে । ওয়ান নেশন ওয়ান খানা । যা বলবে তাই হবে । পরিষ্কার বলছি, মনে রাখবেন এই নির্বাচন অন্য নির্বাচন ৷ দেশকে যদি স্বাধীন রাখতে হয়, দেশের স্বাধীনতা রাখতে হলে বিজেপি হটাও দেশ বাঁচাও । আজ ইতিহাস-ভূগোল গুলিয়ে দিয়েছে । পুলিশকে গেরুয়া পোশাক পরাচ্ছে । সাধুরা যাবেন কোথায় ? কেন করবে ? এসব চলছে ৷ খুব সাংঘাতিক সময় দেশের । ভোট এলেই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলবে ।’’
মমতা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘রাজবংশীদের নিয়ে কী করেছেন ? আমি তো স্কুল করছি । ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছি । কালচারাল বোর্ড করেছি । জয়ী সেতু করেছি । কোচবিহার হেরিটেজ টাউন আমরা করেছি । বাংলা সরকার ভোটের পর 11 লক্ষ মানুষকে বাড়ি করে দেবে ।’’
তাঁর অভিযোগ, ‘‘সারাক্ষণ গুন্ডা নিয়ে ঘুরছে । 17 তারিখ বিকেল পাঁচটার পর কোনও মিটিং প্রচার হবে না । এটা মাথায় রাখবেন । তাই বলছি, যা ইচ্ছে করো জেনে রাখো সব টাকা কেটে নিয়ে যাচ্ছো তোমরা । আয়ুষ্মান যদি করেন, একটা স্কুটার যাদের আছে, তাঁরা পাবেন না । আমরা স্বাস্থ্যসাথী করেছি৷ সবাই পাচ্ছে ।’’
উত্তরবঙ্গের জন্য উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরার পাশাপাশি সিএএ নিয়ে বিজেপির সমালোচনা করেন মমতা ৷ পাশাপাশি অভিষেকের কপ্টারে আয়কর দফতরের হানা নিয়েও তিনি সরব হন ৷ মমতা বলেন, ‘‘অভিষেকের একটা মিটিংয়ে যাওয়ার কথা ছিল । সেখানে গিয়েছিল চেকিং করতে । আমরা এসব নিয়ে ঘুরি না । আমাদের ঘোরার প্রয়োজন পড়ে না । যখন কিছু থাকবে না । আঁচল পাতব । আমি জিনিসের দাম বাড়াই না । সবচেয়ে বেশি জিনিসের দাম বাড়িয়েছে কেন্দ্র সরকার ।’’
একই সঙ্গে তিনি কোচবিহারের বাসিন্দাদের বিজেপিকে ভোট দেওয়ার আবেদন জানান ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার সব শুভ কাজে কোচবিহার ঘুরে যাই । কোচবিহার আমাদের প্রস্টিজিয়াস সিট । এটা নম্বর ওয়ান সিট । বিজেপিকে হারাবোই এই শপথ মনে নিন ।’’
আরও পড়ুন: