পাঁশকুড়া, 19 সেপ্টেম্বর: গতকাল হুগলির পুরশুড়া, গোঘাট-আরামবাগ এলাকা এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের পর আজ, পাঁশকুড়া, রাতুলিয়ার বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনের পর নিজের অভিজ্ঞতা সোশাল মিডিয়ায় ভাগ করে নিলেন তিনি । এদিন ফের একে 'ম্যান মেড বন্যা' বলে তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
গত সপ্তাহের শেষ থেকে কয়েকদিন টানা বৃষ্টি হয়েছে বাংলায় । মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো যোগ হয়েছে ডিভিসির বিভিন্ন জলাধার থেকে লাগাতার জল ছাড়ার ঘটনা । আর তাতেই প্লাবিত বাংলার একের পর পর এক জেলা । এই অবস্থায় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে জেলা সফর করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । গতকাল থেকেই বন্যা বিধ্বস্ত এলাকাগুলি ঘুরে দেখছেন তিনি । একইসঙ্গে এই পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ভুল নীতিকে দুষেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী । এই বন্যাকে মেনমেড আখ্যা দিয়েছেন তিনি ।
দু'দিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, "আর্ত মানুষের পাশে আজীবন থাকার প্রতিজ্ঞা নিয়েই রাজনীতির ময়দানে পা রেখেছিলাম । আজ আমার রাজ্যবাসীর একাংশ বন্যা পরিস্থিতির কারণে বিপদের সম্মুখীন । কাল আমি হুগলির পুরশুড়া, গোঘাট-আরামবাগ এলাকা এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে গিয়েছিলাম । এছাড়াও বীরভূমের বন্যা কবলিত এলাকায় প্রশাসনের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ রেখেছি । আজ, পাঁশকুড়া, রাতুলিয়ার বন্যা কবলিত এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখলাম এবং সেখানকার স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের আশ্বস্ত করলাম । আমাদের প্রশাসন দিবারাত্রি তাঁদের পাশে আছে ।"
আর্ত মানুষের পাশে আজীবন থাকার প্রতিজ্ঞা নিয়েই রাজনীতির ময়দানে পা রেখেছিলাম। আজ আমার রাজ্যবাসীর একাংশ বন্যা পরিস্থিতির কারণে বিপদের সম্মুখীন। কাল আমি হুগলির পুরশুড়া, গোঘাট-আরামবাগ এলাকা এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে গিয়েছিলাম। এছাড়াও বীরভূমের বন্যা কবলিত এলাকায় প্রশাসনের… pic.twitter.com/l5HaFXWsaX
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) September 19, 2024
লাগাতার বৃষ্টি এবং এই জল ছাড়ার কারণে হওয়া বন্যার ফলে বিস্তীর্ণ এলাকায় কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষ সাংঘাতিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন । বিঘের পর বিঘে তাঁদের ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে । কোথাও কোথাও বিস্তীর্ণ চাষের ক্ষেত রয়েছে জলের তলায় । এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, যাঁদের শস্যের ক্ষতি হয়েছে, তাঁরা শস্যবিমার টাকা পাবেন । তাঁর দাবি প্রশাসন, দুর্গত মানুষের পাশেই রয়েছে ।
তিনি আরও লিখেছেন, "এখন আমি উদয়নারায়ণপুরের পথে । এই বছর কোনও আলোচনা ব্যতীত প্রায় পাঁচ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে, যার জন্য দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ বন্যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন । এটি একটি ‘ম্যান ম্যাড বন্যা’ ছাড়া আর কিছুই নয় ।" মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, "আমি প্রথমদিন থেকে এই পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি । দুর্গতদের পাশে থাকতে আমাদের মা-মাটি-মানুষের সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ । ত্রাণ পরিষেবা চালু আছে । প্রত্যেক পরিবার যেন ত্রাণ পরিষেবা পায়, তা সুনিশ্চিত করেছি । কোনও একজন মানুষেরও ক্ষতি যেন না-হয় সেটি নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর ।"
বুধবার ভোরের দিকে কংসাবতী নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়া পুরসভা-সহ সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকা । বহু বাড়ি ডুবে জলের তলায় চলে গিয়েছে । এমনকি বহু পাকা বাড়িও জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে । প্রশাসনের তরফ থেকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় দুর্গতদের উদ্ধারের কাজ চলছে ৷ এনডিআরএফ ও পুলিশ প্রশাসন-সহ জেলা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৎপরতার সঙ্গে কাজ করছেন ।
এ দিন পাঁশকুড়ার মঙ্গলদাড়িতে জলবন্দি এলাকা পরিদর্শনে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি ৷ মুখ্যমন্ত্রীকে পেয়ে ক্ষতিপূরণ-সহ বিভিন্ন দাবিতে তাঁর হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মানুষেরা ।
এদিকে, জল কমলেও দুর্ভোগেই রয়েছেন ঘাটাল ও চন্দ্রকোনার মানুষজন । একদিকে বিদ্যুৎ নেই, তার উপর রয়েছে পানীয় জলের হাহাকার ৷ অন্যদিকে বন্যার জলে নষ্ট শাকসবজি-সহ বিঘার পর বিঘা ধানজমি । অসহায় মানুষজন রয়েছেন প্রশাসনের সাহায্যের অপেক্ষায় ৷ শিলাবতী নদীর জল বেড়ে প্লাবিত হয়েছে ঘাটাল মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা । নৌকা ও ডিঙি নিয়ে চলছে যাতায়াত ৷ ধীরগতিতে বন্যার জল কমতে শুরু করলেও বিদ্যুৎ না-থাকার বেশকিছু এলাকায় দেখা দিয়েছে পানীয় জলের সংকট । ঘাটালের পাশাপাশি দাসপুর, চন্দ্রকোনাতেও বিস্তীর্ণ এলাকাও প্লাবিত । অন্যদিকে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা 1, 2 নম্বর ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা কেঠিয়া ও শিলাবতী নদীর জলে প্লাবিত । ধান ও বিভিন্ন সবজি ক্ষেত থেকে জল নামতেই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা । কারণ বিঘার পর বিঘা জমির ধান ও সবজি পচে নষ্ট হচ্ছে, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ । এর ফলে সরকারি সাহায্যের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন কৃষকেরা ।