মালদা, 8 অগস্ট: শহর লাগোয়া গ্রাম ৷ পাশ দিয়েই গিয়েছে কালো পিচের ঝাঁ চকচকে রাস্তা ৷ কিন্তু সেই রাস্তা থেকে নামতেই কাদায় মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় ৷ কোথাও কোথাও সেই কাদা হাঁটু পর্যন্ত উঠে আসছে ৷ বর্ষার মরশুমে শুধু নয়, সারাবছরই এই রাস্তা নিয়ে ভোগান্তি গ্রামবাসীদের ৷ অথচ তাঁরা একাধিকবার পঞ্চায়েতে রাস্তা সংস্কারের আর্জি জানিয়েছেন ৷ ভোটের সময় প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন ৷ কিন্তু প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবে কাজ এক নয় ৷ এতদিনে সেটা তাঁরা বিলক্ষণ বুঝে গিয়েছেন ৷
পুরাতন মালদার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ছোটপুর গ্রাম ৷ পুরাতন মালদা শহর থেকে গ্রামের দূরত্ব মেরে কেটে তিন কিলোমিটার ৷ গ্রামে প্রায় 50 ঘর মানুষ ৷ অথচ সেই গ্রামেই বেশ কয়েকবছর ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে মূল রাস্তা ৷ গ্রামের গণেশপাড়ার বাসিন্দা জয়মতী মণ্ডল বলছেন, "শুধু বর্ষা নয়, বছরের ছ'মাস আমাদের এভাবেই থাকতে হয় ৷ বিয়ের পর এই গ্রামে আসার পর থেকে একই ছবি দেখছি ৷ রাস্তা সারাইয়ের জন্য পঞ্চায়েত সদস্য, প্রধানকে কতবার বলেছি ৷ কিন্তু শুধু ভোটের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট নিয়ে চলে যায় ৷ আর আসে না ৷ তাই ছেলেপুলে নিয়ে কাদামাখা রাস্তাতেই বেরোতে হয় ৷ স্কুল যাওয়ার পথে প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও বাচ্চা কাদায় আছাড় খায় ৷ ফের বাড়ি ফিরে সাফসুতরো হয়ে স্কুলে যেতে হয় ৷ অনেক বাচ্চা সেদিন আর স্কুলেই যায় না ৷ আমাদের কথা কেউ শোনে না ৷"
আরেক গ্রামবাসী উকিল মণ্ডলেরও এক কথা ৷ তিনি বলেন, "আশপাশের সব গ্রামের রাস্তা ভালো ৷ শুধু আমাদের গ্রামেরই এই অবস্থা ৷ আমরা শহরের ধারেই বাস করছি ৷ কিন্তু রাস্তার চেহারা দেখলে মনে হবে, আমরা প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা ৷ গাড়িঘোড়া দূরের কথা, ছেলেমেয়েরা সাইকেল নিয়ে স্কুলে যেতে পারে না ৷ গরু-বাছুর মাঠে নিয়ে যাওয়াও কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায় ৷ একজন পঞ্চায়েত প্রধান 10 বছর ক্ষমতায় থাকলেও কিছু করে দেননি ৷ এবার নতুন পঞ্চায়েত সদস্য এসেছেন ৷ তিনি বলছেন, গ্রামের মূল রাস্তা করে দেবেন ৷ কিন্তু আদৌ কী করবেন, বলতে পারছি না ৷ আসলে এই রাস্তা হয়ে গিয়েছে ভোটের খুড়োর কল ৷ ভোট এলেই রাস্তা করে দেব বলে রাজনৈতিক দলগুলি আমাদের ভোট নিয়ে নিচ্ছে ৷ আমরাও প্রলোভনের ফাঁদে পা দিচ্ছি ৷ কিন্তু তাতে গ্রামের কোনও উপকার হচ্ছে না ৷"
এই বিষয়ে সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পলি দাস সাহা বলেন, "ওই গ্রামের রাস্তাটির সত্যিই খুব খারাপ অবস্থা ৷ আমি নিজেও সেখানে গিয়েছি ৷ রাস্তার হাল দেখে এসেছি ৷ কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে ৷ এখন আর আগের মতো অর্থ বরাদ্দ করা যাচ্ছে না ৷ তাই আমরা রাস্তাটির কাজে যে হাত দেব, সেটা আমাদের হাতে নেই ৷ সামনের বার চেষ্টা করব যাতে ওই রাস্তাটির কাজ দ্রুত করা যায় ৷"