ব্যারাকপুর, 20 নভেম্বর: উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করল পুলিশ । চারদিন লুকিয়ে থাকার পর সিটের আধিকারিকরা তাঁদের পাকড়াও করেছে দুটি পৃথক জায়গা থেকে । পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম জয়শ্রী দাস, শুভজিৎ বিশ্বাস ওরফে সন্তু ও শুক্লা বিশ্বাস । বুধবার ধৃতদের পেশ করা হয় ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতে ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শুক্রবার ভোর পাঁচটা নাগাদ সত্যজিৎ বাড়ি থেকে বের হন । তারপর থেকে আর কোনও খোঁজ মেলেনি তাঁর । দলীয় কার্যালয় এবং আত্মীয় স্বজনের বাড়িতেও তিনি যাননি । সেদিন রাত ন'টার পর তাঁর মোবাইল ফোন সুইচড অফ হয়ে যায় । ফলে ফোনেও আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি । কোথাও সত্যজিতের সন্ধান না মেলায় শেষে পুলিশের দ্বারস্থ হন পরিবারের লোকেরা । মিসিং ডায়রি করা হয় নোয়াপাড়া থানায় । তারই মধ্যে শনিবার সকাল দশটা নাগাদ বাড়ির চিলেকোঠা থেকে উদ্ধার হয় তাঁর ঝুলন্ত দেহ ।
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, এই রহস্যমৃত্যুর নেপথ্যে রয়েছে ব্ল্যাকমেল করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা । সেই সংক্রান্ত একটি 'চিঠি'ও পুলিশ উদ্ধার করেছে সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির ছাদ থেকে । এরপরই নিহত সত্যজিতের ছেলে সার্থক বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনায় সরাসরি অভিযোগের আঙুল তোলেন জয়শ্রী দাস ও তাঁর স্বামী সঞ্জয় দাস-সহ চারজনের বিরুদ্ধে ।
পরিবারের দাবি ছিল, উদ্ধার হওয়া চিঠিতে এই চারজনের নাম উল্লেখ করে গিয়েছেন সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় । ভিডিয়ো দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করে এঁরা সকলেই তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছিলেন পরিবারের সদস্যরা । চিঠির সূত্র ধরে নোয়াপাড়া থানা সত্যজিৎকে চরম সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচনা দেওয়ার মামলা রুজু করে তদন্তে নামে । ঘটনার গুরুত্ব বুঝে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের তরফেও বিশেষ এক তদন্তকারী দল অর্থাৎ সিট গঠন করা হয় । যার নেতৃত্বে রয়েছেন স্বয়ং ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এসিপি অভিষেক বলিয়ার ।
এ দিকে, মঙ্গলবার ব্যারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিক নিহত সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানান । এরপর বাইরে বেরিয়ে তিনি সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে জানান, ঘটনায় জড়িতরা খুব তাড়াতাড়িই গ্রেফতার হবেন । তারপর রাতেই পুলিশ বিশেষ অভিযান চালায় । ঘটনায় মূল অভিযুক্ত জয়শ্রী দাসকে পুলিশ দক্ষিণ 24 পরগনা রায়দিঘির একটি গোপন ডেরা থেকে গ্রেফতার করে । বাকি দু'জনকে গ্রেফতার করা হয় টিটাগড়ের শহিদ সরণি এলাকা থেকে ।
অন্যদিকে, ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে নিতে বুধবার তাঁদের ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতে পেশ করেছে পুলিশ । তাঁদের হেফাজতে নিয়ে এই গোটা ঘটনার জাল গোটাতে চাইছে বিশেষ তদন্তকারী দলের সদস্যরা ।