শ্রীরামপুর, 15 জুলাই: উলটো রথে দক্ষিণ দিকে টান ৷ তাই জগন্নাথদেব দক্ষিণাকালী রূপে দর্শন দেবেন সোমবার। অর্থাৎ জগন্নাথদেবকে অর্ধনারীশ্বর রূপে দেখতে পাবেন ভক্তরা। পুরাণ মতে, বলভদ্রদেব নারী রূপে অর্থাৎ উগ্রতারা ও সুভদ্রা ভুবনেশ্বরী রূপে রথে বিরাজ করবেন এ দিন ।
আটদিনের দিন পর মাসির বাড়ি থেকে মূল মন্দিরে ফিরছেন মাহেশের জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা । এবার 628তম বর্ষে পদার্পণ করল শ্রীরামপুরে মাহেশের রথযাত্রা উৎসব । পুরীর পর ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম রথযাত্রা মাহেশের । এ দিন উলটো রথেও বহু ভক্তের সমাগম হয়েছে শ্রীরামপুরে। সারা দিন চলে পুজো-অর্চনা।
বিকেল 4টের পর রথের দড়িতে টান শুরু হবে। সেই কারণে পুলিশি নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে মাহেশকে । দুপুরের পর থেকেই শ্রীরামপুর মাহেশের জিটি রোডে নো এন্ট্রি করে দেওয়া হয়েছে । চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের আধিকারিকরা ও একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রথযাত্রায় উপস্থিত থাকবে । কোনওরকম অপ্রতীকর ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য মহিলা পুলিশ, ড্রোন এবং ওয়াচ টাওয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে । আজ মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরে আসেন রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু । জগন্নাথদেবকে দর্শন ও তাঁকে মালা পরাতে পেরে আপ্লুত তিনি ।
মাহেশের মন্দিরের সেবাইত তমাল অধিকারী বলেন, "মাহেশে পুনঃযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে । আটদিন মাসির বাড়িতে থাকার পর প্রভু জগন্নাথ ন'দিনের দিন নিজগৃহে ফিরবেন । আজকের দিনটিকে বলা হয় দক্ষিণে টান বৈকুন্ঠের স্থান, অর্থাৎ আজ দক্ষিণ দিকে টান হয় । সেই কারণেই আজ জগন্নাথ দেব দক্ষিণাকালী রূপে রথের উপর বিরাজ করেন। পুরাণে কথিত আছে, উগ্রতারা শূলপানি মা সুভদ্রা ভুবনেশ্বরী নীলাদ্রৌতু জগন্নাথ সাক্ষাৎ দক্ষিণাকালীকা ।"
তিনি জানান, "দুপুর আড়াইটের পর দামোদর হবে। প্রথমে সুভদ্রা, তারপর নারায়ণ বলভদ্র ও জগন্নাথদেব রথে উঠবেন। উপরে সোনার বেশ অর্থাৎ রাজবেশ ধারণ করে মাসির বাড়ি থেকে নিজগৃহে গমন করবেন তাঁরা । আজকের দিনটির খুবই মাহাত্ম্য রয়েছে ৷ রথে যদি বামুনরূপে দর্শন করা যায় তাহলে পুনর্জন্ম হয় না ।"
কিন্তু রথে জগন্নাথদেব যায়। রথে বামুন রূপ কেন বলা হয় ? সেবাইতের কথায়, কারণ শ্রীকৃষ্ণের বারো মাসে বারোটা নাম ৷ বৈশাখে নাম মধুসূদন, জৈষ্ঠ মাসের ত্রিবিক্রম, আষাঢ় মাসে নাম বামন। 53 বছর পর এবছর মোক্ষযোগ পড়েছে। আজকের দিনে যদি জগন্নাথদেবকে স্পর্শ করা যায় তাহলে মোক্ষলাভ হয়। সেই কারণেই আজ হাজার হাজার ভক্তের সমাগম হয় প্রভুর মাসির বাড়িতে। সকাল থেকেই চলছে পূজার্চনা। সকাল আটটায় হয় প্রভুর ভোগরাগ। এরপরেই তিনি বাইরে বেরিয়ে সকলকে দর্শন দেন। সকলে জগন্নাথদেবকে নিজের হাতে স্পর্শ করতে পারেন ।
অন্যদিকে মাহেশ জগন্নাথ ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক ও সেবাইত পিয়াল অধিকারী বলেন, "জগন্নাথ দেবের মধ্যেই নবগ্রহের অধিষ্ঠান রয়েছে । চোখ হল সূর্য চন্দ্র, মাথায় বৃহস্পতি, নাসিকা মঙ্গল, সমগ্র মুখমন্ডল বুধ, জগন্নাথ দেবের মুখমন্ডলের চারটে কোন রয়েছে, তাতে শুক্র গ্রহ বিরাজ করে । মহাপ্রভুর কাল রূপ হল শনি গ্রহের প্রতীক । তাঁর মুখে যে রেখা আছে তা রাহু বলা হয় । আর জগন্নাথের পেটে রয়েছে কেতু । তিনি অর্ধনারীশ্বর হিসাবে দর্শন দেবেন । জগন্নাথের একদিকে নাকে নথ, কপালে আলোকা ও মাথায় কাপড় দেওয়া থাকে নারী রূপে থাকে । অন্যদিক পুরুষ রূপ রয়েছে ।"