ETV Bharat / state

খুনের নেপথ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন নয়, দত্তপুকুর-কাণ্ডের 13 দিন পর খুলল রহস্যের জট - DATTAPUKUR MURDER CASE

সম্পর্কের টানাপোড়েন নয়, দত্তপুকুর-কাণ্ডে সামনে এল খুনের প্রকৃত কারণ । ঘটনার 13 দিন পর রহস্যের জট খুলল পুলিশ ।

ETV BHARAT
দত্তপুকুর-কাণ্ডের 13 দিন পর খুলল রহস্যের জট (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 17, 2025, 8:11 PM IST

দত্তপুকুর, 17 ফেব্রুয়ারি: যুবকের মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধারের পর থেকে কিছুতেই খুলছিল না খুনের রহস্য জট ! অবশেষে দত্তপুকুর-কাণ্ডের জট খুলল ধৃত জলিলের মাধ‍্যমেই । 13 দিন পর পুলিশ জানতে পারল খুনের আসল কারণ !

এতদিন বারাসত জেলা পুলিশের পদস্থ কর্তারা মনে করছিলেন, নৃশংস এই হত‍্যাকাণ্ডের নেপথ্যে প্রেমঘটিত সম্পর্কের টানাপোড়েন অথবা ব‍্যক্তিগত কোনও আক্রোশ রয়েছে । কিন্তু, ধৃত মূল অভিযুক্ত জলিলকে জেরার পর বেরিয়ে এল খুনের আসল রহস্য ! জানা গিয়েছে, চুরি করা সোনার ভাগ নিয়ে বচসার জেরেই পরিকল্পনা করে হজরত লস্করকে খুন করেছেন জলিল ও তাঁর সহযোগীরা ।

ETV BHARAT
নিহত হজরত লস্কর (নিজস্ব চিত্র)

দত্তপুকুর-কাণ্ডে ধৃত জলিলকে ইতিমধ্যে 12 দিনের পুলিশি হেফাজতে পেয়েছেন তদন্তকারীরা । রবিবার তাঁকে হেফাজতে নিয়ে রাতভর দফায় দফায় জেরা করেন জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা । আর তাতেই ভেঙে পড়ে খুনের প্রকৃত কারণ জানিয়ে দেন জলিল । পুলিশ জানতে পেরেছে, নিহত হজরত লস্কর, ধৃত ওবায়দুল গাজি এবং জলিল - এঁরা সকলেই পেশাদার চোর । এঁদের নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে ।

সম্প্রতি তিনজনে মিলে প্রায় 400 গ্রাম সোনা চুরি করেন । কিন্তু, চুরির জিনিস ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে বচসা শুরু হয় তাঁদের মধ্যে । সূত্রের খবর, চুরি করা সোনার ভাগ নিয়ে হজরত অন্যদের ঠকিয়েছিলেন বলে অভিযোগ । তবে জলিলের দাবি, ঘটনার সূত্রপাত তারও আগে । জেরায় পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, অনেক দিন আগে থেকেই চুরির সঙ্গে যুক্ত তাঁরা । চুরির পর পুলিশের ঝঞ্ঝাট এড়াতে বাংলাদেশে গিয়ে গা ঢাকা দিতেন জলিলরা । সেখানে কিছুদিন থাকার পর পরিস্থিতি থিতিয়ে গেলে ফের তাঁরা ফিরে আসতেন এ রাজ‍্যে ।

হজরত, ওবায়দুল ও জলিলকে বাংলাদেশে পালাতে সাহায্য করতেন আরও এক যুবক । যাঁর ছদ্মনাম 'বিএসএফ'! সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাত থেকে তিনি জলিলদের বাঁচাতেন বলেই তাঁর নাম হয়ে গিয়েছিল 'বিএসএফ' ! দীর্ঘদিন ধরে জলিলদের এই চুরির কারবার চলছিল নির্বিঘ্নেই ৷ কিন্তু, তাতে নাকি বাধ সাধেন হজরত ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি উত্তরপাড়ায় একটি চুরির ঘটনার পর সহযোগী 'বিএসএফ'কে এ রাজ্যে ডেকে নিয়ে এসে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেন হজরত । যে কারণে হজরতের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে তাঁর অন্য সহযোগীদের । শেষমেশ হজরতকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা শুরু করেন দলের বাকিরা ।

পুলিশকে জলিল জানিয়েছেন, খুনের আগের রাতে পরিকল্পনামাফিক তিনি হজরতকে নিজের বাড়িতে ফোন করে ডেকে আনেন। এর পর মালিয়াকুরে ওই চাষের জমিতে নিয়ে গিয়ে পিছন থেকে হজরতের মাথায় আঘাত করেন । আঘাতে অজ্ঞান হয়ে যান হজরত । তার পর ঠান্ডা মাথায় মাংস কাটার চপারের এক কোপে তাঁর ধড় থেকে মাথা আলাদা করে দেন জলিল । যাতে ধরা না পড়েন, সে জন্য তিনি নাকি কাটা মুণ্ডটি সরিয়ে ফেলেন ।

এই বিষয়ে বারাসত জেলার পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খাড়িয়া বলেন, "চুরি করা সোনার ভাগ নিয়ে মনোমালিন্যের জেরে হজরতকে খুন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জলিল । তার এই দাবি মিলিয়ে দেখা হবে বাকি ধৃতদের বক্তব্যের সঙ্গে । সেই সঙ্গে কাটা মুণ্ডরও দ্রুত হদিশ মিলবে বলে আশা করছি ।"

প্রসঙ্গত, গত 3 ফেব্রুয়ারি দত্তপুকুরের ছোট জাগুলিয়া পঞ্চায়েতের মালিয়াকুর এলাকার একটি চাষের জমি থেকে বছর চল্লিশের এক যুবকের মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধার করে পুলিশ । প্রমাণ লোপাটে দেহটির হাত-পা বেঁধে পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল । যৌনাঙ্গও ছিল ক্ষতবিক্ষত ।হাড়হিম করা সেই ঘটনার দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছিল মালিয়াকুর গ্রাম । ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা মদের গ্লাস, চিপ্সের বেশকিছু প্যাকেটও খুঁজে পেয়েছিল পুলিশ ।ঘটনার দু'দিনের মাথায় যুবকের বাঁ হাতের ট‍্যাটু ও পোশাকের ছেঁড়া অংশের সূত্র ধরে পরিচয় মেলে যুবকের । উদ্ধার হয়েছে খুনে ব‍্যবহৃত অস্ত্রটিও ।

জানা যায়, নিহত যুবকের নাম হজরত লস্কর । আদতে দক্ষিণ 24 পরগনার লক্ষ্মীকান্তপুরের বাসিন্দা তিনি । তবে, বছর খানেক হল স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি গাইঘাটার আঙুলকাটা গ্রামে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেছিলেন । ওই গ্রামেই বাড়ি হজরতের মামাতো ভাই ওবায়দুল গাজিরও । যাঁকে হজরত হত‍্যাকাণ্ডে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । গ্রেফতার হয়েছেন হজরতের প্রাক্তন প্রেমিকা এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ এক বান্ধবীও । যাঁর স্বামী জলিলকে জম্মুর সাম্বা থেকে গ্রেফতার করে এ রাজ‍্যে নিয়ে এসেছে বারাসত জেলা পুলিশ । এই জলিলই হজরত লস্কর খুনের মাস্টারমাইন্ড । তাঁকে জেরা করেই কাটা মুণ্ডর হদিশ পেতে মরিয়া তদন্তকারীরা ।

দত্তপুকুর, 17 ফেব্রুয়ারি: যুবকের মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধারের পর থেকে কিছুতেই খুলছিল না খুনের রহস্য জট ! অবশেষে দত্তপুকুর-কাণ্ডের জট খুলল ধৃত জলিলের মাধ‍্যমেই । 13 দিন পর পুলিশ জানতে পারল খুনের আসল কারণ !

এতদিন বারাসত জেলা পুলিশের পদস্থ কর্তারা মনে করছিলেন, নৃশংস এই হত‍্যাকাণ্ডের নেপথ্যে প্রেমঘটিত সম্পর্কের টানাপোড়েন অথবা ব‍্যক্তিগত কোনও আক্রোশ রয়েছে । কিন্তু, ধৃত মূল অভিযুক্ত জলিলকে জেরার পর বেরিয়ে এল খুনের আসল রহস্য ! জানা গিয়েছে, চুরি করা সোনার ভাগ নিয়ে বচসার জেরেই পরিকল্পনা করে হজরত লস্করকে খুন করেছেন জলিল ও তাঁর সহযোগীরা ।

ETV BHARAT
নিহত হজরত লস্কর (নিজস্ব চিত্র)

দত্তপুকুর-কাণ্ডে ধৃত জলিলকে ইতিমধ্যে 12 দিনের পুলিশি হেফাজতে পেয়েছেন তদন্তকারীরা । রবিবার তাঁকে হেফাজতে নিয়ে রাতভর দফায় দফায় জেরা করেন জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা । আর তাতেই ভেঙে পড়ে খুনের প্রকৃত কারণ জানিয়ে দেন জলিল । পুলিশ জানতে পেরেছে, নিহত হজরত লস্কর, ধৃত ওবায়দুল গাজি এবং জলিল - এঁরা সকলেই পেশাদার চোর । এঁদের নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে ।

সম্প্রতি তিনজনে মিলে প্রায় 400 গ্রাম সোনা চুরি করেন । কিন্তু, চুরির জিনিস ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে বচসা শুরু হয় তাঁদের মধ্যে । সূত্রের খবর, চুরি করা সোনার ভাগ নিয়ে হজরত অন্যদের ঠকিয়েছিলেন বলে অভিযোগ । তবে জলিলের দাবি, ঘটনার সূত্রপাত তারও আগে । জেরায় পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, অনেক দিন আগে থেকেই চুরির সঙ্গে যুক্ত তাঁরা । চুরির পর পুলিশের ঝঞ্ঝাট এড়াতে বাংলাদেশে গিয়ে গা ঢাকা দিতেন জলিলরা । সেখানে কিছুদিন থাকার পর পরিস্থিতি থিতিয়ে গেলে ফের তাঁরা ফিরে আসতেন এ রাজ‍্যে ।

হজরত, ওবায়দুল ও জলিলকে বাংলাদেশে পালাতে সাহায্য করতেন আরও এক যুবক । যাঁর ছদ্মনাম 'বিএসএফ'! সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাত থেকে তিনি জলিলদের বাঁচাতেন বলেই তাঁর নাম হয়ে গিয়েছিল 'বিএসএফ' ! দীর্ঘদিন ধরে জলিলদের এই চুরির কারবার চলছিল নির্বিঘ্নেই ৷ কিন্তু, তাতে নাকি বাধ সাধেন হজরত ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি উত্তরপাড়ায় একটি চুরির ঘটনার পর সহযোগী 'বিএসএফ'কে এ রাজ্যে ডেকে নিয়ে এসে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেন হজরত । যে কারণে হজরতের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে তাঁর অন্য সহযোগীদের । শেষমেশ হজরতকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা শুরু করেন দলের বাকিরা ।

পুলিশকে জলিল জানিয়েছেন, খুনের আগের রাতে পরিকল্পনামাফিক তিনি হজরতকে নিজের বাড়িতে ফোন করে ডেকে আনেন। এর পর মালিয়াকুরে ওই চাষের জমিতে নিয়ে গিয়ে পিছন থেকে হজরতের মাথায় আঘাত করেন । আঘাতে অজ্ঞান হয়ে যান হজরত । তার পর ঠান্ডা মাথায় মাংস কাটার চপারের এক কোপে তাঁর ধড় থেকে মাথা আলাদা করে দেন জলিল । যাতে ধরা না পড়েন, সে জন্য তিনি নাকি কাটা মুণ্ডটি সরিয়ে ফেলেন ।

এই বিষয়ে বারাসত জেলার পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খাড়িয়া বলেন, "চুরি করা সোনার ভাগ নিয়ে মনোমালিন্যের জেরে হজরতকে খুন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জলিল । তার এই দাবি মিলিয়ে দেখা হবে বাকি ধৃতদের বক্তব্যের সঙ্গে । সেই সঙ্গে কাটা মুণ্ডরও দ্রুত হদিশ মিলবে বলে আশা করছি ।"

প্রসঙ্গত, গত 3 ফেব্রুয়ারি দত্তপুকুরের ছোট জাগুলিয়া পঞ্চায়েতের মালিয়াকুর এলাকার একটি চাষের জমি থেকে বছর চল্লিশের এক যুবকের মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধার করে পুলিশ । প্রমাণ লোপাটে দেহটির হাত-পা বেঁধে পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল । যৌনাঙ্গও ছিল ক্ষতবিক্ষত ।হাড়হিম করা সেই ঘটনার দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছিল মালিয়াকুর গ্রাম । ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা মদের গ্লাস, চিপ্সের বেশকিছু প্যাকেটও খুঁজে পেয়েছিল পুলিশ ।ঘটনার দু'দিনের মাথায় যুবকের বাঁ হাতের ট‍্যাটু ও পোশাকের ছেঁড়া অংশের সূত্র ধরে পরিচয় মেলে যুবকের । উদ্ধার হয়েছে খুনে ব‍্যবহৃত অস্ত্রটিও ।

জানা যায়, নিহত যুবকের নাম হজরত লস্কর । আদতে দক্ষিণ 24 পরগনার লক্ষ্মীকান্তপুরের বাসিন্দা তিনি । তবে, বছর খানেক হল স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি গাইঘাটার আঙুলকাটা গ্রামে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেছিলেন । ওই গ্রামেই বাড়ি হজরতের মামাতো ভাই ওবায়দুল গাজিরও । যাঁকে হজরত হত‍্যাকাণ্ডে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । গ্রেফতার হয়েছেন হজরতের প্রাক্তন প্রেমিকা এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ এক বান্ধবীও । যাঁর স্বামী জলিলকে জম্মুর সাম্বা থেকে গ্রেফতার করে এ রাজ‍্যে নিয়ে এসেছে বারাসত জেলা পুলিশ । এই জলিলই হজরত লস্কর খুনের মাস্টারমাইন্ড । তাঁকে জেরা করেই কাটা মুণ্ডর হদিশ পেতে মরিয়া তদন্তকারীরা ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.