ETV Bharat / state

সরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রায় বন্ধ, সংসারের চালাতে বাবার সঙ্গে প্রতিমা গড়েন এমএ পাশ কৌশিক - Durga Puja 2024

সরকারি চাকরি না-পেয়ে বাবার সঙ্গে প্রতিমা গড়ছেন পুরাতন মালদার স্নাতকোত্তর পাশ কৌশিক পাল ৷ জানালেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরীক্ষা দেওয়ার পরেও নিয়োগ প্রক্রিয়া এগোয়নি ৷

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : 3 hours ago

DURGA PUJA 2024
সংসারের চালাতে বাবার সঙ্গে প্রতিমা গড়ছেন এমএ পাশ কৌশিক পাল ৷ (নিজস্ব চিত্র)

মালদা, 7 অক্টোবর: হাতে আর মাত্র দু’দিন ৷ তারপরেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসব ৷ ইতিমধ্যে, মৃৎশিল্পীদের ঘর থেকে দুর্গা প্রতিমা মণ্ডপে যেতে শুরু করেছে ৷ এবার আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা ভুগিয়েছে শিল্পীদের ৷ এখনও ভুগিয়ে যাচ্ছে ৷ প্রতিদিনই মেঘলা আকাশ, মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি ৷ আর মালদার মতো জেলায় মেট্রো সিটির পরিকাঠামো নেই ৷ ফলে এখনও কাজ করে যাচ্ছেন শিল্পীরা ৷ ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ৷ তা না-হলে সঠিক সময়ে মণ্ডপে প্রতিমা পৌঁছানো যাবে না ৷

এই পরিস্থিতিতে নাওয়া-খাওয়া শিকেয় উঠেছে বাবা-ছেলের ৷ পুরাতন মালদা ব্লকের সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাজার পাড়ার মৃৎশিল্পী বিমল পাল ৷ শুধু গ্রামীণ এলাকা নয়, তাঁর শিল্পকর্মের নামডাক রয়েছে জেলার দুই শহরেও ৷ অসুস্থ শরীর নিয়েও এবার ডজনখানেক মূর্তি তৈরি করছেন ৷ প্রতিমা না-গড়লে সংসার চলবে কীভাবে ?

সংসারের চালাতে বাবার সঙ্গে প্রতিমা গড়ছেন এমএ পাশ কৌশিক পাল ৷ (ইটিভি ভারত)

সংসারের চাকা যাতে সামনের দিকে এগোয়, তার জন্য বাবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন ছেলে কৌশিক পাল ৷ সংস্কৃতে এমএ পাশ তিনি ৷ ছোটবেলা থেকে ইচ্ছে ছিল, পড়াশোনা করে চাকরি করবেন ৷ তাহলে বাবাকে আর এই হাড়ভাঙা খাটুনি খাটতে হবে না ৷ যখন বড় হলেন, দেখলেন, উচ্চশিক্ষিত হয়েও লাভ নেই ৷ বাজারে চাকরি নেই ৷ তাই বাবাকে বিশ্রাম দেওয়ার বদলে, কৌশিক নিজেই হাড়ভাঙা খাটুনি খাটছেন ৷

কৌশিক বলছিলেন, "12 বছর বয়স থেকেই প্রতিমা গড়ছি ৷ বাবার কাছে এই কাজের হাতেখড়ি ৷ বাবা ঠাকুরদার কাছে প্রতিমা তৈরির কাজ শিখেছিলেন ৷ প্রায় 40 বছর ধরে বাবা এই কাজ করছেন ৷ প্রতি বছর আমরা মাতৃমূর্তি তৈরি করি ৷ এবারও প্রায় এক ডজন প্রতিমা তৈরি করছি ৷ মালদা শহর-সহ বিভিন্ন জায়গার বরাত রয়েছে ৷ এই কাজ করেই আমাদের পেট চলছে ৷ তবে, পড়াশোনা করেছি ৷ সংস্কৃত নিয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করেছি ৷ কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গে চাকরির পরিস্থিতি তো সবার জানা ৷ নেই বললেই চলে ৷

Durga Puja 2024
দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছেন মৃৎশিল্পী বিমল পাল ৷ (নিজস্ব চিত্র)

কয়েক বছর ধরে এসএসসি-র নিয়োগ বন্ধ ৷ একাধিক চাকরির পরীক্ষা দিয়েছি ৷ কয়েকটাতে উত্তীর্ণও হয়েছি ৷ কিন্তু, পরবর্তী নিয়োগ প্রক্রিয়া আর এগোয়নি ৷ যদি প্রতিমা তৈরির কাজ শেখা না-থাকত তবে, হয়তো আমাকে কোনও বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতে হতো ৷ ভাগ্য ভালো, বাবার কাছ থেকে কাজ শিখে রেখেছি ৷ সরকারি চাকরি করাই আমার লক্ষ্য ৷"

বিমল পাল বলেন, "40 বছর ধরে এই কাজ করে সংসার চালাচ্ছি ৷ এবার প্রস্তুতি ভালো থাকলেও আবহাওয়ার জন্য কাজে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে ৷ তবে, শরীরটা ভালো যাচ্ছে না ৷ তাই এবার একটু কম কাজ ধরেছি ৷ শেষ সময় কাজের চাপ বেড়েছে ৷ অবশ্য ছেলেও সাহায্য করছে ৷ ও চাকরি পাচ্ছে না ৷ রাজ্য সরকারের কোনও চাকরির ব্যবস্থাও নেই ৷ কিন্তু, সংসার তো চালাতে হবে ৷ আমার অসুস্থতায় ও কাজ না-করলে সংসার অচল হয়ে যাবে ৷ এসব চিন্তাভাবনা করেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পর থেকেই ছেলেকে কাজে লাগিয়ে দিয়েছিলাম ৷ ছোট থেকেও অবশ্য টুকটাক কাজ করত ৷ ও যদি কাজ শিখে না-রাখত, তবে পরিবারের আরও সমস্যা হত ৷"

মালদা, 7 অক্টোবর: হাতে আর মাত্র দু’দিন ৷ তারপরেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসব ৷ ইতিমধ্যে, মৃৎশিল্পীদের ঘর থেকে দুর্গা প্রতিমা মণ্ডপে যেতে শুরু করেছে ৷ এবার আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা ভুগিয়েছে শিল্পীদের ৷ এখনও ভুগিয়ে যাচ্ছে ৷ প্রতিদিনই মেঘলা আকাশ, মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি ৷ আর মালদার মতো জেলায় মেট্রো সিটির পরিকাঠামো নেই ৷ ফলে এখনও কাজ করে যাচ্ছেন শিল্পীরা ৷ ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ৷ তা না-হলে সঠিক সময়ে মণ্ডপে প্রতিমা পৌঁছানো যাবে না ৷

এই পরিস্থিতিতে নাওয়া-খাওয়া শিকেয় উঠেছে বাবা-ছেলের ৷ পুরাতন মালদা ব্লকের সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাজার পাড়ার মৃৎশিল্পী বিমল পাল ৷ শুধু গ্রামীণ এলাকা নয়, তাঁর শিল্পকর্মের নামডাক রয়েছে জেলার দুই শহরেও ৷ অসুস্থ শরীর নিয়েও এবার ডজনখানেক মূর্তি তৈরি করছেন ৷ প্রতিমা না-গড়লে সংসার চলবে কীভাবে ?

সংসারের চালাতে বাবার সঙ্গে প্রতিমা গড়ছেন এমএ পাশ কৌশিক পাল ৷ (ইটিভি ভারত)

সংসারের চাকা যাতে সামনের দিকে এগোয়, তার জন্য বাবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন ছেলে কৌশিক পাল ৷ সংস্কৃতে এমএ পাশ তিনি ৷ ছোটবেলা থেকে ইচ্ছে ছিল, পড়াশোনা করে চাকরি করবেন ৷ তাহলে বাবাকে আর এই হাড়ভাঙা খাটুনি খাটতে হবে না ৷ যখন বড় হলেন, দেখলেন, উচ্চশিক্ষিত হয়েও লাভ নেই ৷ বাজারে চাকরি নেই ৷ তাই বাবাকে বিশ্রাম দেওয়ার বদলে, কৌশিক নিজেই হাড়ভাঙা খাটুনি খাটছেন ৷

কৌশিক বলছিলেন, "12 বছর বয়স থেকেই প্রতিমা গড়ছি ৷ বাবার কাছে এই কাজের হাতেখড়ি ৷ বাবা ঠাকুরদার কাছে প্রতিমা তৈরির কাজ শিখেছিলেন ৷ প্রায় 40 বছর ধরে বাবা এই কাজ করছেন ৷ প্রতি বছর আমরা মাতৃমূর্তি তৈরি করি ৷ এবারও প্রায় এক ডজন প্রতিমা তৈরি করছি ৷ মালদা শহর-সহ বিভিন্ন জায়গার বরাত রয়েছে ৷ এই কাজ করেই আমাদের পেট চলছে ৷ তবে, পড়াশোনা করেছি ৷ সংস্কৃত নিয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করেছি ৷ কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গে চাকরির পরিস্থিতি তো সবার জানা ৷ নেই বললেই চলে ৷

Durga Puja 2024
দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছেন মৃৎশিল্পী বিমল পাল ৷ (নিজস্ব চিত্র)

কয়েক বছর ধরে এসএসসি-র নিয়োগ বন্ধ ৷ একাধিক চাকরির পরীক্ষা দিয়েছি ৷ কয়েকটাতে উত্তীর্ণও হয়েছি ৷ কিন্তু, পরবর্তী নিয়োগ প্রক্রিয়া আর এগোয়নি ৷ যদি প্রতিমা তৈরির কাজ শেখা না-থাকত তবে, হয়তো আমাকে কোনও বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতে হতো ৷ ভাগ্য ভালো, বাবার কাছ থেকে কাজ শিখে রেখেছি ৷ সরকারি চাকরি করাই আমার লক্ষ্য ৷"

বিমল পাল বলেন, "40 বছর ধরে এই কাজ করে সংসার চালাচ্ছি ৷ এবার প্রস্তুতি ভালো থাকলেও আবহাওয়ার জন্য কাজে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে ৷ তবে, শরীরটা ভালো যাচ্ছে না ৷ তাই এবার একটু কম কাজ ধরেছি ৷ শেষ সময় কাজের চাপ বেড়েছে ৷ অবশ্য ছেলেও সাহায্য করছে ৷ ও চাকরি পাচ্ছে না ৷ রাজ্য সরকারের কোনও চাকরির ব্যবস্থাও নেই ৷ কিন্তু, সংসার তো চালাতে হবে ৷ আমার অসুস্থতায় ও কাজ না-করলে সংসার অচল হয়ে যাবে ৷ এসব চিন্তাভাবনা করেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পর থেকেই ছেলেকে কাজে লাগিয়ে দিয়েছিলাম ৷ ছোট থেকেও অবশ্য টুকটাক কাজ করত ৷ ও যদি কাজ শিখে না-রাখত, তবে পরিবারের আরও সমস্যা হত ৷"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.