কলকাতা, 26 জুলাই: দেড়শো বছর ধরে শহর কলকাতার সঙ্গে জড়িত ট্রামের অস্তিত এবার সংকটে ৷ রাস্তায় ট্রাম যানজটের সৃষ্টি করেছে ৷ এছাড়াও ট্রাম লাইনের ফলে পথ দুর্ঘটনা ঘটছে ৷ এমন একাধিক কারণ দেখিয়ে, অনেক আগেই কলকাতা থেকে ট্রাম তুলে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছে কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ৷
এই নিয়ে 2022 সালে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলাও করা হয় ৷ গত দেড় বছর ঠেকিয়ে রাখা গেলেও, আর কি ঠেকানো যাবে ? এখন শহরের ট্রাম প্রেমীরা পরবর্তী শুনানির দিকে তাকিয়ে রয়েছেন ৷ এই মামলায় ট্রাম নিয়ে রাজ্য সরকারের কী ভাবনা রয়েছে ? জানতে চেয়ে সরকারকে একটি হলফনামা জমা দিতে বলা হয়েছিল ৷ জানা গেছে, রাজ্যে সরকার শহরের বুক থেকে ট্রাম তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েই হলফনামা জমা দেবে ৷
ক্যালকাটা ইউজারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তথা ট্রাম গবেষক ডক্টর দেবাশিস ভট্টাচার্যের অভিযোগ, "আসলে শহরের বুকে ট্রামের এখনও যা জমি রয়েছে, তা বিক্রি করার চেষ্টা চলছে ৷ আর সেই জমি যদি বিক্রিও হয়ে যায়, তাহলে সেই টাকা তো ট্রাম ওয়েজের কাজে লাগানো হচ্ছে না ৷ কারণ, আগে যে জমি বিক্রি করে টাকা পাওয়া গেছে, সেই অর্থ কোথায় গেল ? সেটা নিয়ে কেউ নিশ্চিত নয় !
তিনি বলেন, "অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে মাত্র এক মাস আগেই পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর সঙ্গে একটি বৈঠক হয় ৷ সেখানে তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন, যে এখন যে তিনটি রুট চলছে সেগুলি অব্যাহত থাকবে ৷ বাকি রুটগুলি কী হবে, পুনরায় চালু করা যায় কিনা, সেই বিষয়টিও দেখা হবে ৷ কিন্তু, তার ঠিক কদিন পরেই 180 ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে তিনি জানালেন, ট্রাম পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে ৷ তাই ভিতরে কে কোথায় কলকাঠি নেড়েছে, সেটা বলা সম্ভব নয় ৷"
এই প্রসঙ্গে দেবাশিস ভট্টাচার্য জানান, "অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে যখন পরিবহণ মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা হয়, তখন তিনি জানিয়েছিলেন এই বিষয় তাঁর হাত-পা বাঁধা ৷ চাইলেন আপনারা একবার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে দেখা করতে পারেন ৷ কিন্তু, পরিবহণ মন্ত্রী হলেন স্নেহাশিস চক্রবর্তী ৷ তাই ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে আমরা কেন দেখা করব ?"
সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, "লাইনে অ্যাক্সিডেন্ট হয় বলে যদি ট্রাম লাইন তুলে দেওয়া হয় তাহলে তো পরপর যেভাবে রেল দুর্ঘটনা হচ্ছে, তা হলে তো রেলকেও তুলে দিতে হয় ৷ এখন সব থেকে বেশি যানজট হয় বাইপাসের রাস্তায় ৷ গণপরিবহণ একসঙ্গে অনেক মানুষকে পরিষেবা দেয় ৷ তাই গণপরিবহণ ব্যবস্থাকে উঠিয়ে দিল চলবে না ৷ একদিকে যখন পৃথিবীর প্রায় 430-এর বেশি দেশে ট্রাম চলছে তখন এই শহর থেকে ট্রামকে তুলে দেওয়ার তোড়জোড় করা হচ্ছে ৷"
সেলিমের অভিযোগ, "আসলে সদিচ্ছার অভাব শুধু নয় ৷ যেভাবে চুরি-জোচ্চুরি এবং তোলাবাজি চলছে তাতে শহরের কিছু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ট্রামের জমি রয়েছে ৷ সেই সব জমির উপর এখন সরকারের নজর পড়েছে ৷ সেই সব জমি তারা হাতিয়ে সিন্ডিকেট রাজের হাতে তুলে দিতে চাইছে ৷
একসময় শহরের প্রায় 30টি রুটে ট্রাম চলত ৷ বর্তমানে তা তিনটিতে এসে ঠেকেছে ৷ যত ট্রামের সংখ্যা কমছে, ততই প্রাসঙ্গিকতা কমেছে ট্রাম ডিপোগুলিরও ৷ একের পর এক ট্রাম কোম্পানির জমি নয় বিক্রি হচ্ছে ৷ নয় তো বিভিন্ন হাব তৈরি করতে অধিগ্রহণ করা হচ্ছে ৷ তাই যদি ট্রাম না থাকে, তবে প্রয়োজন নেই ডিপোর ৷ তাই ধীরে ধীরে ট্রাম ডিপোর জমি বিক্রির অভিযোগ উঠছে সরকারের বিরুদ্ধে ৷