কলকাতা, 28 ডিসেম্বর: দেশের জন্য নানা গুরুদায়িত্ব সামলেও, মনমোহন সিং ছিলেন একজন আপাদমস্তক 'ফ্যামিলিম্যান' ৷ কলকাতায় একথা জানালেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ভাগ্নে গুরদীপ সিং ৷ মনমোহনের প্রয়াণে ইটিভি ভারতের সঙ্গে তাঁর স্মৃতিচারণায় সামিল হলেন ভাগ্নে গুরদীপ ৷
অর্থনীতিবিদ থেকে ব্যুরোক্র্যাট, তারপর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার গভর্নর ৷ আর অবসরের পর রাজনীতিতে যোগদান ৷ সেখানেও 1991 সাল থেকে 1996 পর্যন্ত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নরসিমহা রাওয়ের মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন মনমোহন সিং ৷ দেশের অর্থনীতির চাকা এগিয়ে নিয়ে যেতে তাঁর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য ৷ পরবর্তী সময়ে রাজ্যসভায় বিরোধী দলের নেতার ভূমিকাও পালন করেছেন ৷ আর সবশেষে 2004 সালে ইউপিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন ডক্টর মনমোহন সিং ৷
এহেন ব্যস্ত মানুষটি ছিলেন একজন 'ফ্যামিলিম্যান' ৷ নয় ভাইবোনের মধ্যে মনমোহন সিংয়ের পরেই ছিলেন বোন গোবিন্দ কৌর ৷ তাই ভাই ও বোনের মধ্যে টানও ছিল অনেকটা ৷ দেশের অর্থনীতি ও পরবর্তী সময়ে গোটা দেশ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব ৷ এ-সবের মধ্যেও পরিবারের সবার জন্য সময় বের করতেন তিনি ৷ তা সে নিজের সন্তান হোক বা ভাইবোন এবং পরিবারের অন্যান্যরা ৷
গুরদীপ সিং বলেন, "মামা পরিবারের সঙ্গে থাকাকালীন রাজনীতির বিষয় কখনও টেনে আনতেন না ৷ এমনকি কাউকে তা করতেও দিতেন না ৷ কারণ, সেই সময়টা ছিল শুধু পরিবারের জন্য ৷ এমনকি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন কখনও তাঁকে বলতে শুনিনি ব্যস্ত আছেন, তাই দেখা করতে পারবেন না ৷ সবসময় আমাদের সঙ্গে সময় বের করে দেখা করতেন ৷ আর কলকাতায় এলে আমাদের বাড়িতে তো আসতেনই ৷ তবে, প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় প্রোটোকলের কারণে, বাড়িতে আসতেন না ৷ কিন্তু, আমাদের রাজভবনে ডেকে নিতেন ৷"
দাদার মৃত্যুর খবরে মুষড়ে পড়েছেন গোবিন্দ কৌর ৷ কারও সঙ্গে খুব একটা কথাও বলছেন না ৷ মা ও মামার সম্পর্ক নিয়ে গুরদীপ জানান, "দেশ ভাগ হওয়ার পর পেশোয়ার ছেড়ে অমৃতসরে চলে এসেছিলেন তাঁরা ৷ মামার পরেই আমার মা ৷ পিঠোপিঠি হওয়ায় তাঁদের বন্ডিংটাও ছিল খুব ভালো ৷ স্বাভাবিকভাবেই তাঁর সঙ্গে মায়ের অনেক স্মৃতি রয়েছে ৷ দু’জনে সবসময় একে অপরের খোঁজ নিতেন ৷ 2017 সালে শেষবার কলকাতায় এসেছিলেন ৷ সেই সময় বাড়িতে মায়ের সঙ্গে দেখা হয় ৷ ওটাই সামনে থেকে দু’জনের শেষ দেখা ৷ তারপর আমি কয়েকবছর আগে দিল্লি গিয়েছিলাম ৷ সেখানে ভিডিয়ো কলে কথা বলিয়ে দিয়েছি ৷ মেডিক্যাল কারণে দু’জনের সফর করা বারণ ছিল ৷"
কলকাতায় এলে মনমোহন সিংয়ের সবচেয়ে প্রিয় ও পছন্দের জিনিস ছিল এখানকার দই ৷ ভাগ্নে গুরদীপের কথায়, "মামার সব থেকে প্রিয় ছিল দই । এখানে এলে দই খেতেনই ৷ ভালোবাসতেন পরিবারকে সময় দিতে ৷" 2017 সালে টালিগঞ্জের 1 নম্বর জুবলি পার্কের ফ্ল্যাটে শেষবার যখন এসেছিলেন, তখন সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় কাটিয়েছিলেন বোনের সঙ্গে ৷ খেয়েছিলেন ডাল, রুটি ও দই ৷
তবে, দাদা মনমোহন সিংকে শেষ দেখা হবে না বোন গোবিন্দ কৌরের ৷ ছেলের কাছে জেদ ধরেছিলেন দিল্লি নিয়ে যেতে ৷ কিন্তু, ডাক্তারের নিষেধ রয়েছে, সফর করা যাবে না ৷ তাই টিভিতে চোখ রেখেই দাদার শেষকৃত্যে সামিল হবেন ৷ এমনকি পরিবারের সব সদস্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের শেষকৃত্যে সামিল হতে পারবেন না ৷ স্ত্রী এবং সন্তান বাদে, প্রত্যেক আত্মীয়ের পরিবার থেকে একজন সদস্যকে থাকতে দেওয়া হবে ৷ তাই গুরদীপ সিংয়ের দাদা দিল্লি গিয়েছেন ৷
তবে, শেষকৃত্যের দু’দিন পর পারলৌকিক ক্রিয়ায় পরিবারের সবাই উপস্থিত থাকবেন ৷ কিন্তু, সেখানেও হয়তো থাকতে পারবেন না গোবিন্দ কৌর ৷ বাধা সেই শারীরিক অসুস্থতা ৷ তাই কলকাতা থেকেই দাদার শোকে চোখের জল ফেলছেন তিনি ৷