সন্দেশখালি, 17 জানুয়ারি: ফের খবরের শিরোনামে সন্দেশখালি । তবে রাজনৈতিক কোনও অশান্তির জন্য নয় ! এবার সেখানে মিলল গোছা গোছা ভারতীয় ভোটার কার্ড । তা মিলেছে খোদ বিডিও অফিসের ঠিক সামনে থেকে । পাসপোর্ট জালিয়াতি কাণ্ডে তোলপাড়ের মধ্যেই শুক্রবার এই ঘটনা ঘটায় স্বাভাবিকভাবেই তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে সন্দেশখালি 1 নম্বর ব্লক বিডিও অফিস চত্বরে ।
কোথা থেকে, কীভাবে এত সচিত্র পরিচয়পত্র সেখানে এল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে । স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ অবশ্য ঘটনার জন্য ব্লক প্রশাসনের দিকেই আঙুল তুলেছে । যদিও, ঘটনাটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বিডিও সায়ন্তন সেন ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন সকালে সন্দেশখালি 1 নম্বর ব্লক প্রশাসনের সদর কার্যালয়ের ঠিক পাশে নয়ানজুলিতে নির্বাচন কমিশনের গোছা গোছা সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র পড়ে থাকতে দেখা যায় । স্থানীয় বাসিন্দারাই প্রথমে তা লক্ষ্য করেন । ওই পরিচয়পত্রগুলো আংশিক পোড়া অবস্থায় ছিল । খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ । যান স্থানীয় বিডিও সায়ন্তন সেনও । এরপর, ভোটার কার্ডগুলি সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় । কিন্তু কোথা থেকে ওই সচিত্র পরিচয়পত্রগুলো নয়নজুলিতে এল, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা । এনিয়ে প্রশাসনও অন্ধকারে । তবে, এই ঘটনায় যথেষ্ট ক্ষুদ্ধ স্থানীয়রা ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, "দেখলাম প্রচুর ভারতীয় সচিত্র পরিচয়পত্র পড়ে রয়েছে বিডিও অফিস চত্বরে । কোথা থেকে কীভাবে এসেছে সেটা বলতে পারব না । গত তিন-চারদিন ধরে এই বিডিও অফিসেই ভোটার কার্ড তৈরির কাজ চলেছে । সেখান থেকে সম্ভবত এই সমস্ত ভোটার কার্ড বাইরে এসে থাকতে পারে ! এত পরিচয়পত্র পড়ে থাকা নিঃসন্দেহে চিন্তার ! প্রশাসনের বিষয়টি দেখা উচিত । আর কী বলব !"
এই বিষয়ে সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো বলেন, "ঘটনাটি আমার জানা নেই । যদি এরকম হয়ে থাকে সেটা প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার । সন্দেশখালি নিয়ে সবসময় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির একটা চক্রান্ত কাজ করে থাকে । এক্ষেত্রে সেরকম কিছু হয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখুক নির্বাচন কমিশন ।"
যদিও, পালটা শাসকদলের ঘাড়েই দায় চাপিয়েছে গেরুয়া শিবির । এনিয়ে বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার যুব মোর্চার সভাপতি পলাশ সরকার বলেন, "ঘটনাটি খুবই উদ্বেগের । শেখ শাহজাহানের রাজত্বের সময় থেকে আমরা বারবার অভিযোগ করেছি, ওঁদের সঙ্গে বাংলাদেশ কিংবা রোহিঙ্গা যোগ রয়েছে ! সেটাই কী এবার সত্যি হতে চলছে ? তা না হলে এত ভারতীয় সচিত্র পরিচয়পত্র এল কোথা থেকে ? প্রশাসনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত । সেই সঙ্গে যাঁদের ইন্ধনে ভোটার কার্ডগুলো বাইরে এল, তাঁদেরকেও শাস্তি দিক পুলিশ প্রশাসন ।"
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে সন্দেশখালি 1 নম্বর ব্লকের বিডিও সায়ন্তন সেন বলেন, "ঘটনাটি জানতে পেরেছি । তবে ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন অফিস থেকে ওই পরিচয়পত্রগুলো বাইরে আসেনি । প্রাথমিকভাবে আমার ধারণা, অন্য কোথাও থেকে ভোটার কার্ডগুলো পোড়ানোর জন্য মজুত করা হয়েছিল সেখানে । বাকিটা তদন্ত করে দেখতে হবে ।"
প্রসঙ্গত, পাসপোর্ট জালিয়াতিতে ভুয়ো নথি ঘিরে গোটা রাজ্যে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে । এই ঘটনায় ইতিমধ্যে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন কলকাতা পুলিশের এক অবসরপ্রাপ্ত সাব ইন্সপেক্টর-সহ বেশ কয়েকজন । পাসপোর্ট জালিয়াতির ক্ষেত্রে জাল সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র ব্যবহার করার বেশ কিছু নমুনাও মিলেছে । সম্প্রতি বনগাঁর কলমবাগান এলাকা থেকে তিন অনুপ্রবেশকারীকে পুলিশ গ্রেফতার করে । তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু ভারতীয় জাল নথিপত্র পাওয়া গিয়েছে ।
বারাসত থেকে গ্রেফতার হওয়া সমীর দাসের কাছ থেকেও মিলেছে ভুয়ো নথিপত্র । ধৃতদের সঙ্গে বাংলাদেশিদের বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে যোগাযোগ তৈরি হয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা । তারই মধ্যে সন্দেশখালিতে বিডিও অফিসের পাশ থেকে সচিত্র পরিচয়পত্র উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে প্রশাসনের ।