কলকাতা, 5 অগস্ট: বাংলাদেশের উত্তাল পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে ভারত সরকার ৷ কারণ, প্রতিবেশী এই দেশের সঙ্গে ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যের স্থলসীমান্ত রয়েছে ৷ বিএসএফ, এসএসবি-র শীর্ষকর্তারা কলকাতায় উপস্থিত হয়েছেন ৷ চলছে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ৷ এই পরিস্থিতিতে বসে নেই কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশও ৷
কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের অফিসের বাইরে অন্যদিনের তুলনায় সোমবার নিরাপত্তা খানিকটা বাড়িয়েছে লালবাজার । লালবাজার সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই এই বিষয় কড়েয়া থানাকে বিশেষ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে । বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে রাখা হয়েছে চারটি হেভিরেডিও ফ্লাইংস্কোয়াড (কোনও ধরনের অশান্তি তৈরি হলে পরিস্থিতিকে শান্ত করতে পারদর্শী)-এর বাহিনীকে । পাশাপাশি ওসি পদমর্যাদার চারজন আধিকারিক বিষয়টি দেখছেন ।
এছাড়াও বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে যদি কোনও রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক কেউ বিক্ষোভ বা অন্য কোনও কাজ করেন, সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি বা ওই দলকে যাতে সেখান থেকে দ্রুততার সঙ্গে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তার জন্য মোতায়েন রয়েছে মোট দু’টি প্রিজন ভ্যান । লালবাজার সূত্রের খবর, ওই দুটি প্রিজন ভ্যান 24 ঘণ্টার জন্যই সেখানে থাকবে ।
লালবাজার সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, সেখানে প্রায় 15 থেকে 20 জনের স্পেশাল অ্যাকশন ফোর্সের পুলিশ আধিকারিক রয়েছেন । পাশাপাশি মহিলা পুলিশ কর্মীদের সেখানে নামানো হয়েছে । লালবাজার সূত্রের খবর, বাংলাদেশ হাইকমিশনে বিক্ষোভ হতে পারে, এই আশঙ্কা থেকেই এই নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে ৷ এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘অন্যদিন বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে চার থেকে পাঁচজন পুলিশকর্মী নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকতেন ।’’
এছাড়া পুলিশের সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, বাড়তি সতর্কতা নেওয়ার জন্য ইতিমধ্য়েই রাজ্যের সীমান্ত এলাকার থানাগুলিকে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের শীর্ষস্তর থেকে ৷ ওই সতর্কবার্তায় এলাকায় বাড়তি নজরদারিও চালাতে বলা হয়েছে ৷
রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি কলকাতা পুলিশের তরফ থেকেও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে । বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় বহু মানুষ চিকিৎসার জন্য আসেন । নিউ মার্কেট, আনন্দপুর থানা, পাটুলি, মুচিপাড়া, শেক্সপিয়র সরণি থানা-সহ একাধিক থানা এলাকায় বাংলাদেশি নাগরিকরা বিভিন্ন গেস্ট হাউজ বা হোটেলে থাকেন ৷ সেই সব এলাকাতেই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে ৷
সোশাল মিডিয়াতেও বাড়তি নজরদারি শুরু করেছে পুলিশ ৷ অশান্তি ছড়াতে পারে এমন কোনও পোস্ট সোশাল মিডিয়ায় যাতে কেউ না করেন, কেউ এই ধরনের পোস্ট করলে যাতে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেদিকেই নজর রাখছে পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ ৷
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ও এই পরিস্থিতিতে শান্তির বার্তা দিয়েছেন ৷ তিনি বলেছেন, ‘‘ভারত সরকার যেভাবে বলবে, আমরা সেভাবেই করব ৷ আমি সমস্ত রাজনৈতিক নেতাদের ও সকলকে অনুরোধ করছি, দয়া করে এমন কোনও পোস্ট করবেন না, যাতে এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট নয় ৷ সব দলের নেতাদেরই বলব, এটা দেশের উপর ছেড়ে দিন ৷ দেশে আমাদের সরকার আছে, তাদের উপর ছেড়ে দিন ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আপনারা নিজেরা এমন কোনও মন্তব্য করবেন না, যাতে কোনও হিংসা বা প্ররোচনা সৃষ্টি হতে পারে ৷ সকলেই আমাদের ভাইবোন এটা মনে রাখবেন ৷ বাংলাদেশের ঘটনা নিয়ে আমরা সবাই উদ্বিগ্ন ৷ কিন্তু সেটা নিয়ে পোস্ট করতে গিয়ে এমন কিছু লিখবেন না বা বলবেন না, যাতে বাংলার বা ভারতের শান্তি নষ্ট হতে পারে ৷’’
সকলের কাছে তিনি এই আবেদন করছেন বলে জানান ৷ তবে বিশেষ করে বিজেপির নেতাদের কথা উল্লেখ করেন তিনি ৷ এর কারণ হিসেবে তাঁর বক্তব্য, বিজেপি নেতারা ইতিমধ্যেই এমন কিছু পোস্ট করছেন, যা করা উচিত নয় ৷ তৃণমূলের নেতারাও যাতে এই ধরনের কোনও মন্তব্য না করেন, সেই কথাও বলেছেন মমতা ৷
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘ভারত একটা দেশ ৷ বাংলাদেশও একটা দেশ৷ পাশের রাজ্যে কিছু হয়, আমার প্রতিবেশীর যদি কিছু হয়, তার একটা প্রভাব পাশের রাজ্যে পড়ে ৷ সেক্ষেত্রে শান্ত থেকে আমাদের পরিস্থিতিটা দেখে রাখতে হবে ৷ সব সন্তানরা যেন ভালো থাকে ৷’’
উল্লেখ্য, কোটা আন্দোলন নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তপ্ত বাংলাদেশ ৷ মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা থিতিয়ে গেলেও গত দু’তিনদিনে ফের আন্দোলন হিংসাত্মক চেহারা নেয় ৷ সোমবার বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে সেদেশ ছেড়ে ভারতে চলে এসেছেন শেখ হাসিনা ৷ ইতিমধ্যে হাসিনার বাসভবন গণভবন চলে গিয়েছে আন্দোলনকারীদের দখলে ৷ এই পরিস্থিতিতে ওপারের আঁচ কোনোভাবে যাতে এপারে না আসে, তার জন্য সতর্ক পুলিশ ও প্রশাসন ৷