মালদা, 29 অক্টোবর: রেশন দুর্নীতিতে আপাতত জেলে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ৷ তাঁর সময়কালে ঘটে যাওয়া আরেক রেশন দুর্নীতির প্রমাণ মিলল মালদায় ৷ দুর্নীতির দায়ে জ্যোতিপ্রিয় ঘনিষ্ঠ এক রেশন ডিলারকে সাসপেন্ড করেছে জেলা খাদ্য দফতর ৷ একই সঙ্গে প্রায় আট কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে ৷ সেই ডিলার আবার তৃণমূলের গ্রামীণ নেতা ৷ এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তিতে পড়েছে রাজ্যের শাসকদল ৷ জেলা তৃণমূল সভাপতি অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছেন, দুর্নীতিতে জড়িত কারও পাশেই দল নেই ৷ আইন নিজের পথে চলবে ৷
ওই ডিলারের নাম আসরাফুল ইসলাম ৷ বাড়ি কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লকের সাহাবানচক গ্রাম পঞ্চায়েতের ইন্দো-বাংলা সীমান্ত লাগোয়া বোরাবাদ্ধা গ্রামে ৷ তিনি সাহাবানচক অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি ৷ তাঁর বিরুদ্ধে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে জেলা খাদ্য দফতর ৷ তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ মিলতেই আসরাফুলের প্রাসাদপম বাড়িতে ঝুলছে তালা ৷ তাঁর ফোনও সুইচ অফ৷ পরিবার নিয়ে তিনি কোথায় গিয়েছেন, জানেন না গ্রামবাসীরাও ৷
মাস দুয়েক আগে সাহাবানচক এলাকার বাসিন্দা দুঃখু শেখ তাঁদের রেশন ডিলার আসরাফুলের বিরুদ্ধে খাদ্য দফতর ও অপরাধ দমন বিভাগে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ৷ সেই অভিযোগে তিনি জানান, আসরাফুল তাঁদের সরকারি নিয়ম মেনে রেশন সামগ্রী দিচ্ছেন না ৷ তাঁর গুদামে প্রচুর পরিমাণে রেশন সামগ্রী আসলেও তা রাতারাতি উধাও হয়ে যেত ৷ রেশন আনতে গিয়ে অধিকাংশ সময় গ্রাহকদের ঘুরে আসতে হয় ৷ পরবর্তীতে তাঁরা জানতে পারেন, আসরাফুল তাঁদের জন্য বরাদ্দ সামগ্রী কালোবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন ৷ তাঁরা এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করছেন ৷
দুঃখু শেখের অভিযোগের ভিত্তিতে আসরাফুলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে খাদ্য দফতর৷ তদন্তে নেমে চোখ কপালে ওঠে দফতরের কর্তাদের ৷ তাঁরা দেখেন, 2015 থেকে 2022 সাল পর্যন্ত আসরাফুলের জালিয়াতির সীমা নেই ৷ শুধু গ্রাহকদের সামগ্রী কালোবাজারে বিক্রি করাই নয়, এই সময়কালে তিনি হাজার দুয়েকের ভুয়ো রেশন কার্ড তৈরি করে তার সামগ্রী সরকারের ঘর থেকে তুলেছেন ৷ এভাবে এই সাত বছরে তিনি কয়েক কোটি টাকা পকেটে পুরেছেন ৷
দুঃখু শেখের অভিযোগের ভিত্তিতে খাদ্য দফতরের তদন্ত কতটা এগোল, তা জানতে চেয়ে মাসখানেক আগে তথ্য জানার অধিকার আইনে খাদ্য দফতরকে চিঠি দেন সাহাবানচক এলাকার আরেক বাসিন্দা হাকিম মিয়াঁ ৷ সেই চিঠির প্রেক্ষিতে দফতরের তরফে তাঁকে জানানো হয়, তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর রেশন ডিলার আসরাফুল ইসলামকে 7 কোটি 85৫ লাখ 61 হাজার 44 টাকা জরিমানা করা হয়েছে ৷ তাঁর ডিলারশিপও সাসপেন্ড করা হয়েছে ৷ এর পরেই আসরাফুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ৷ বর্তমানে বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন ৷
এ প্রসঙ্গে মালদা জেলা খাদ্য নিয়ামক শাশ্বতসুন্দর দাস জানিয়েছেন, “দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লকের সাহাবানচক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় আসরাফুল ইসলাম নামে এক রেশন ডিলারকে মোটা অংকের জরিমানা করা হয়েছে ৷ তিনি 2015 থেকে 2022 সাল পর্যন্ত একাধিক জালিয়াতি করেছেন ৷ তাঁর ডিলারশিপের লাইসেন্সও সাসপেন্ড করা হয়েছে ৷”
এই ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে জেলা তৃণমূল ৷ দলের জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসি জানান, “খোদ মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ ও প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন, কোনও রাজনৈতিক রং না দেখে দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে ৷ কালিয়াচকের ওই রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ মেলায় ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন ৷ তৃণমূল কখনও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় না ৷ আইন আইনের পথে চলবে ৷ ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে দলীয় স্তরেও পদক্ষেপ করা হবে ৷”