পাণ্ডুয়া, 19 জানুয়ারি: দীর্ঘ 40 বছর আইনি লড়াইয়ের পর নিয়োগপত্র হাতে পেয়েও শিক্ষক পদে যোগ দিতে পারলেন না ষাটোর্ধ্বরা । তৎকালীন সরকারকে দায়ী করছেন তাঁরা । আদালতের নির্দেশে শিক্ষক নিয়োগ হলেও প্রাথমিক শিক্ষা দফতরের এই ধরনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে হুগলির প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে আইনজীবীরা । কীভাবে এই নিয়োগ হল সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে । যদিও এই বিষয়ে হুগলির প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারপার্সন শিল্পা নন্দী কিছু বলতে চাননি ৷ তবে তিনি কিছু বলতে না চাইলেও শুক্রবার কলকাতা বইমেলায় তাঁর কাজের প্রশংসা করেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ এদিন তিনি বলেন, "শিল্পা নন্দী অনেকবার আমার এজলাসে এসেছেন মামলার বিষয়ে ৷ ওনার কাজ আমি দেখেছি ৷ খুব পরিচ্ছন্ন কাজ করেন ৷ তবে হুগলিতে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে ওনার কোনও সম্পর্ক নেই ৷ আর মৃত ব্যক্তিদের নিয়োগপত্র দেওয়ার বিষয়টিও আলাদা ৷"
এদিকে বৃহস্পতিবার হুগলি জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারপার্সন 66 জনকে চাকরির নিয়োগপত্র দিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছেন । প্রথম 1983 সালে চাকরির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন কালীধন বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ 66 জন চাকরিপ্রার্থী । 2000 সালে তাঁরা মামলা করেন । বাম আমলে 10 বার ও তৃণমূল সরকারের আমলে 7 বার মামলা ওঠে । কিন্তু কোনও সরকারই গুরুত্ব দেয়নি । শেষে 20 ডিসেম্বর 2023 সালে কলকাতা হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতি সৌমেন সেনের এজলাস তাদের পক্ষে রায় দেয় । তড়িঘড়ি সেই রায়কে কার্যকর করার জন্য নিয়োগপত্র দেওয়া হয় ।
এই প্রসঙ্গে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তি কালীধন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "2014 সালের আইন অনুযায়ী এরিয়া গ্র্যাচুইটি দেওয়া হবে আমাদের । সরকারি তরফে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে আমরা চাকুরিতে যোগ দিয়েছি । আমাদের স্কুলে যেতে বারণ করা হয়েছে । তবে স্কুলের প্ৰধান শিক্ষক যদি ডাকে তাহলে সহযোগিতা করতে যেতে বলেছেন সার্কেল অফিসার । এই ঘটনা নৈতিক জয় আমাদের । 2000 সালে আমরা মামলা করেছিলাম । বাম সরকারের আমলে আমাদের সঙ্গে অসহযোগিতা করেছে । আমার বাড়িতে চড়াও হয়েছিল । বাম আমলের ভুলে আমাদের এই ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে ।"
বাম সরকারের আমলে হুগলি জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদে চেয়ারম্যান ছিলেন দুলাল ভৌমিক । 1992 সাল থেকে 2005 সাল পর্যন্ত 13 বছর চেয়ারম্যান থাকাকালীন এই ঘটনা তাঁর কানে আসেনি ৷ তাঁর কথায়, "যাদের 60 বছর পূর্ণ হয়ে গিয়েছে তারা কি করে চাকরি পায় জানি না । সরকার কীভাবে অনুমোদন দিল সেটাও একটা বড় প্রশ্ন ৷ যদি আদালত রায় দেয় সেখানে সরকারি আইনজীবী আছেন । তাহলে তাঁরা আদালতকে কেন জানাননি যে চাকরি প্রার্থীদের বয়স 60 -70 বছর হয়ে গিয়েছে । সেটা আদালতের নজরে আনা উচিত ছিল । এটা আইনত হওয়া কখনই বাঞ্চনীয় নয় ।"
এই বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, "আদালত কীভাবে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের চাকরি দিলেন । ক্ষতিপূরণ দিতে পারতেন । তাহলে সরকারের উচিত ছিল এই ধরনের রায়কে চ্যালেঞ্জ করা । এটা সরকার নয়, তৃণমূলের কংগ্রেসের কোম্পানি হিসাবে চলে । এই সরকারের কিছুই ঠিক নেই । আদালতের কিছু ঠিক নেই । যে যেমন পারছেন করছেন । সরকারের আইনজীবীরা কেন আদালতকে জানালেন না সেটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে ।"
আরও পড়ুন :