কলকাতা, 22 সেপ্টেম্বর: 42 দিন পর নিজেদের চেনা স্থানে চেনা কাজে ফিরেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা । অ্যাম্বুলান্সের শব্দই তাঁদের রাতের 'অ্যালার্ম'। কিন্তু এই চেনা পরিসরেও আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে তরুণ চিকিৎসকদের । এই আতঙ্কের কারণ, 42 দিনে আগের সেই নারকীয় হত্যাকাণ্ড । নিজের কর্মস্থলেই নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও খুন হতে হয়েছিল আরজি কর হাসপাতালের সেই তরুণী চিকিৎসককে । যার
বিচার আজও মেলেনি । ভয়কে সঙ্গে নিয়েই কাজে ফিরেছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা ।
কাজে যোগ দিয়েই সকাল থেকে রাত ডিউটি করছেন আরজি কর হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক লহরী সরকার । নিজের হাতে দু'টি অস্ত্রোপচার করেছেন । শনিবার সকালের পর রাতেও তাঁর ডিউটি ছিল । এর আগেও একাধিকবার রাতে ডিউটি করেছেন তিনি। তবে এই রাতের অভিজ্ঞতা কিছুটা আলাদা ।
তিনি জানান, "ভয় লাগছে অবশ্যই । কোনও রোগী রাতে বেশি অসুস্থ হয়ে গেলে একাই ওয়ার্ডে যাচ্ছি । এটা আমার কাজ - কর্তব্য । তবে এর সঙ্গে মনে পড়ছে, এখনও আমাদের দিদির হত্যাকারীরা ধরা পড়েনি । আজও অপরাধীরা খোলা আকাশের তলায় । তাই মনের মধ্য়ে একটা ভয় কাজ করছে ।"
আরজি কর হাসপাতালের এই মর্মান্তিক ঘটনা তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজে । তার প্রতিবাদে দীর্ঘদিন কর্মবিরতির পর আংশিকভাবে কাজ শুরু করলেও আতঙ্ক পিছু ছাড়েনি জুনিয়র ডাক্তারদের ৷ শুধু আরজি করে নয়, ভয় তাড়া করছে রাতে কর্মরত সব জুনিয়র চিকিৎসকদের ।
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের শল্য বিভাগের চিকিৎসক অলোলিকা ঘড়ুই । তিনি জানান, "এই হাসপাতালে হয়তো কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি । কিন্তু 9 অগস্টের পর জীবনকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গিটাই বদলে গিয়েছে । এখন সব মানুষের মধ্যেই যেন কালো ছায়া । হাসপাতালের প্রতিটা কোনায় যেন কোনও শয়তানের নিঃশ্বাস পড়ছে মনে হচ্ছে । এই অজানা অচেনা ভয় আমার ভেতরের শল্যচিকিৎসকের স্বাধীন সত্ত্বাকেও দমানোর চেষ্টা করছে ।"
তবে এই ভয় দমাতে পারেনি তাঁদের আন্দোলনের স্পর্ধাকে । ভয় ও আতঙ্ককে সঙ্গী করেই করেই সকল মানুষকে পরিষেবা দিয়ে চলেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা । নিজেদের কর্তব্য পালন করছেন তাঁরা । তবে কর্তৃব্যের পাশাপাশি নিজেদের আন্দোলনকেও ভোলেননি জুনিয়র চিকিৎসকরা । 42 দিনের টানা লড়াই তাঁদের এখনও শেষ হয়নি । তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও মৃত্যুর তদন্ত করছে সিবিআই ৷ সুপ্রিম কোর্টে চলছে শুনানি । তাই ভয় নিয়ে কাজ করে চললেও জুনিয়র চিকিৎসকদের বিশ্বাস, 'আমরা করব জয়, নিশ্চয় ।'