কলকাতা, 9 সেপ্টেম্বর: আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের আগামিকাল, মঙ্গলবার বিকেল 5টার মধ্যে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ৷ সোমবার শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশের কথা শুনে রীতিমতো হতাশ আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা ৷ তাঁদের আশঙ্কা, এই পরিস্থিতিতে কাজে যোগ দিলে আগামিদিনে আরজি করে ধর্ষণ-খুনের মতো ঘটনা আবারও ঘটতে পারে ৷
তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর তাঁরা কাজে ফিরবেন কি না, সেই বিষয়টি অবশ্য এখনই আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা জানাননি ৷ তাঁদের কথায়, আজই তাঁরা নিজেদের মধ্য়ে এই নিয়ে আলোচনা করবেন ৷ তার পর সিদ্ধান্ত নেবেন ৷ ফলে আন্দোলন কতদূর এগোবে, তা জানতে আরও কয়েকঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে ৷
উল্লেখ্য, আরজি করের ঘটনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে এ দিন শুনানি ছিল ৷ সেই শুনানিতে রাজ্য সরকারের আইনজীবী কপিল সিব্বল দাবি করেন যে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের জেরে সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরিষেবা স্বাভাবিক নয় ৷ বিনা চিকিৎসায় অনেকের মৃত্যুও হয়েছে ৷ এর পরই সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয় যে মঙ্গলবার বিকেল 5টার মধ্য়ে কাজে ফিরতে হবে আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের ৷
এ দিন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরে সুপ্রিম কোর্টের শুনানির লাইভ টেলিকাস্ট দেখছিলেন আন্দোলনাকারীরা ৷ সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের কাজে ফেরার নির্দেশ দিতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা ৷ আন্দোলনকারী এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘আমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রচণ্ড শঙ্কিত ৷ আমরা জানি না এর পরে আমরা কেউ খুন হয়ে যাব কি না ! সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর অনিশ্চয়তা, ভয়, শঙ্কা, হতাশা, সবকিছু একসঙ্গে কাজ করছে ৷’’
আরেক মহিলা চিকিৎসক বলেন, ‘‘আমরা অত্যন্ত হতাশ ৷ আমাদের প্রথম দাবি ছিল সুবিচার পাওয়া ৷ যে ঘটনায় এত প্রমাণ লোপাট করা হয়েছে, সেটা সুপ্রিম কোর্টও বুঝতে পারছে ৷ কেউ বিষয়টি অস্বীকার করতে পারছে না ৷ ফলে বুঝতে পারছি বিচার পাওয়া খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে ৷ অভয়াকে বিচার দিতে পারছে না, অথচ আমাদের সুরক্ষা দেবে বলছে ৷’’
এর পরই তিনি আদালতে রাজ্য সরকারের আইনজীবী কপিল সিব্বলের দাবি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ৷ তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের যিনি আইনজীবী ছিলেন, তিনি বলছেন সব সুরক্ষা ব্যবস্থা নাকি নেওয়া হয়ে গিয়েছে ! কিন্তু আমার ডিপার্টমেন্টে এখনও এই ধরনের কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি ৷ প্রথমত আমরা বিচার পাব কি না, সেটা নিশ্চিত নয় ৷ আমাদের সুরক্ষার বিষয়টিও ঠিক হয়নি ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘শুধু কয়েকজন সিআইএসএফ আরজি করে মোতায়েন করে দিলেই হবে না, পুরো পশ্চিমবঙ্গে হামলা হচ্ছে, সেগুলোকে তো আগে ঠিক করতে হবে ৷ তার পরে তো আমাদের কাজে ফিরতে বলবেন ৷ উনি না বিচার দিতে পারছেন, না সুরক্ষা দিতে পারছেন ৷ কী করে বলছেন ? আমার সঙ্গেও তো একই ঘটনা ঘটতে পারে ! তাহলে আমরা কীভাবে কাজে ফিরব ৷’’
আরেক আন্দোলনকারী চিকিৎসক সৌম্যদীপ রায় বলেন, ‘‘এই রায়ে আমরা খুবই হতাশ ৷ বিচারে যখন দেরি হয়, তখনই বিচার না পাওয়ার বিষয়টি চলে আসে ৷ বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হল, তত এই প্রশ্ন বারবার ওঠে যে বিচার পাওয়া যাবে তো ? বৈঠকের পর আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব ৷’’ আরেক চিকিৎসক রণিত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই বিষয়ে আমরা আলোচনা করব ৷ তার পর পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করব ৷ বিচার কতদিনে পাব, সেই বিষয়ে ধোঁয়াশা কাটল না ৷’’