ETV Bharat / state

রাজনীতিতে অচেনা দুই প্রার্থী নিয়ে আলোচনা তৃণমূলের অন্দরে, থাকছে অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনাও

Malda Lok Sabha Constituency: প্রকাশ হয়ে গিয়েছে প্রার্থী তালিকা ৷ আর তা নিয়ে জলঘোলা ও আলোচনা চলছে মালদা তৃণমূলে ৷ অসন্তোষ দেখা দিয়েছে নেতা-কর্মীদের একাংশের মধ্যে ৷ কী বলছেন তাঁরা ? কে প্রার্থী হলে খুশি হতেন কর্মীরা ?

Etv Bharat
Etv Bharat
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Mar 11, 2024, 6:16 PM IST

মালদা, 11 মার্চ: প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর মালদায় কার্যত শোকের আবহ তৃণমূল নেতাদের মধ্যে ৷ কেউ ভেবেই পাচ্ছেন না, কীসের ভিত্তিতে মালদার দুই কেন্দ্রে এমন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হল ৷ শাসকদলের অনেক কর্মী আবার এর মধ্যে 'সেটিং' তত্ত্বও দেখতে পাচ্ছেন ৷ যদিও এই নিয়ে ক্যামেরার সামনে মুখ খুলতে নারাজ সবাই ৷ তবে দলের অন্দরে ফিসফিসানি চলছেই ৷

উত্তর মালদায় তৃণমূল এবার প্রার্থী করেছে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৷ একসময় দু'দফায় জেলার পুলিশ সুপার ছিলেন তিনি ৷ তখন থেকেই তাঁর তৃণমূলপ্রীতির কথা জেনেছিল সবাই ৷ এই নিয়ে আলোচনা চলত পুলিশ মহলেও ৷ পরবর্তী কালে তিনি মালদা রেঞ্জের ডিআইজি হন ৷ দীর্ঘদিন এই জেলায় কাজ করার সৌজন্যে এলাকার রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল প্রসূন ৷ বহিরাগত তকমা ঘোচাতে অবসরগ্রহণের পরেই পরিবার-সহ মালদা শহরে বসবাস শুরু করেছেন ৷ তাঁকে যে এবার এই জেলায় প্রার্থী করা হচ্ছে, সম্ভবত তা আগেই জেনে ফেলেছিলেন তিনি ৷

এতকিছুর পরেও উত্তর মালদার ভোটার, এমনকি দলীয় নেতা-কর্মীরাও প্রার্থী হিসাবে তাঁকে কতটা মেনে নেবেন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে ৷ তাঁর ভালোভাবেই জানা রয়েছে, পিছন থেকে ছুরি মারার জন্য মালদা জেলার তৃণমূল গোটা রাজ্যেই কুখ্যাত ৷ নিশ্চিতভাবেই এখন থেকে এসবের মোকাবিলা করার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন নাটক ও ছোটপর্দার অভিনেতা প্রসূন ৷ তাঁর কথায়, "এই জেলার মানুষের সঙ্গে আমার যোগাযোগ দীর্ঘদিনের ৷ তাই জয় পেতে কোনও সমস্যা হবে না ৷"

বহিরাগত তকমা থাকলেও খাকি উর্দির প্রসূনকে চেনেন মালদাবাসী ৷ তুলনায় খানিকটা অচেনা দক্ষিণ মালদার তৃণমূল প্রার্থী শাহনাওয়াজ আলি রাইহান ৷ পৈতৃক বাড়ি কালিয়াচক 2 নম্বর ব্লকের হামিদপুর পঞ্চায়েতের তোফি গ্রামে ৷ এখন তাঁর পরিবার অবশ্য পুরাতন বাবুরহাট গ্রামে থাকে ৷ বাবা মহম্মদ সেকেন্দার আলি বিদ্যুৎ দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ৷ কর্মসূত্রে থাকতেন চাঁচলে ৷ ফরাক্কায় পড়াশোনা শুরু রাইহানের ৷

কলকাতা ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশোনা করেছেন তিনি ৷ পরে আসেন সাংবাদিকতায় ৷ কাজ করেছেন কলকাতা থেকে প্রকাশিত একাধিক সংবাদপত্রে ৷ সেখান থেকেই উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়ে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান ৷ আধুনিক ইতিহাস নিয়ে সেখানে গবেষণা করেন ৷ বিয়ে করেন সেখানেই ৷ চিকিৎসক স্ত্রী ও মেয়ে ইংল্যান্ডে থাকেন ৷ বর্তমানে তিনি মরক্কোর আল আকহান বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার ৷ জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর, দক্ষিণ মালদার জন্য এবার নতুন মুখ খুঁজছিল শীর্ষ নেতৃত্ব ৷ প্রার্থী হওয়ার জন্য তিনজনকে অফার দেওয়া হয় ৷ অন্য দু'জন তা প্রত্যাখ্যান করলেও রাইহান ভোটে দাঁড়াতে রাজি হন ৷

এদিকে প্রার্থী নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন শুরু হয়েছে জেলা তৃণমূলের অন্দরে ৷ দুই কেন্দ্রের জন্য জেলায় কি একজনও যোগ্য প্রার্থী ছিলেন না ? দলের জেলা নেতা-নেত্রীরা কি শুধুই দেওয়াল লিখে, পোস্টার সেঁটে যাবেন ? উঠছে এরকমই নানা প্রশ্ন। বাইরের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার পর কী হয় তা টের পাচ্ছে সুজাপুর ৷ নথিতে স্থানীয় বাসিন্দা হলেও বছরভর কলকাতাতেই থাকেন সেখানকার তৃণমূল বিধায়ক আবদুল গনি ৷

অভিযোগ, একুশের ভোটের পর তাঁকে 21 দিনও এলাকায় দেখা যায়নি ৷ উত্তর মালদা কেন্দ্র গঠনের পর তিনটি ভোটে সেখানে প্রার্থী ছিলেন মৌসম নুর ৷ দু'বার জিতেছেন ৷ উনিশের ভোটে প্রথমবার হেরেছেন ৷ তাঁকে কি আরেকবার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল না ? দলের জেলা সভাপতি আবদুল রহিম বকসিও ওই কেন্দ্রে যোগ্য প্রার্থী ছিলেন বলে মনে করছেন কর্মীদের একাংশ ৷ তাঁকেও সুযোগ দেওয়া যেত ৷ যদিও কলকাতা থেকে রহিম বকসি জানাচ্ছেন, "প্রার্থী ঠিক করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ আমাদের কাজ দুই কেন্দ্রেই দলীয় প্রার্থীদের জেতানো ৷ আমরা সেটাই করব ৷" রহিম সাহেবের কথা আর কাজে কোনও মিল থাকবে কি না, তা সময় বলবে ৷

আরও পড়ুন :

  1. প্রতিপক্ষ কে জানেন না, তবুও মালদা দক্ষিণে জয় নিয়ে নিশ্চিত বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী
  2. সাংসদের সামনেই বিধায়ককে শারীরিক হেনস্তা, প্রকাশ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠী-কোন্দল

মালদা, 11 মার্চ: প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর মালদায় কার্যত শোকের আবহ তৃণমূল নেতাদের মধ্যে ৷ কেউ ভেবেই পাচ্ছেন না, কীসের ভিত্তিতে মালদার দুই কেন্দ্রে এমন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হল ৷ শাসকদলের অনেক কর্মী আবার এর মধ্যে 'সেটিং' তত্ত্বও দেখতে পাচ্ছেন ৷ যদিও এই নিয়ে ক্যামেরার সামনে মুখ খুলতে নারাজ সবাই ৷ তবে দলের অন্দরে ফিসফিসানি চলছেই ৷

উত্তর মালদায় তৃণমূল এবার প্রার্থী করেছে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৷ একসময় দু'দফায় জেলার পুলিশ সুপার ছিলেন তিনি ৷ তখন থেকেই তাঁর তৃণমূলপ্রীতির কথা জেনেছিল সবাই ৷ এই নিয়ে আলোচনা চলত পুলিশ মহলেও ৷ পরবর্তী কালে তিনি মালদা রেঞ্জের ডিআইজি হন ৷ দীর্ঘদিন এই জেলায় কাজ করার সৌজন্যে এলাকার রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল প্রসূন ৷ বহিরাগত তকমা ঘোচাতে অবসরগ্রহণের পরেই পরিবার-সহ মালদা শহরে বসবাস শুরু করেছেন ৷ তাঁকে যে এবার এই জেলায় প্রার্থী করা হচ্ছে, সম্ভবত তা আগেই জেনে ফেলেছিলেন তিনি ৷

এতকিছুর পরেও উত্তর মালদার ভোটার, এমনকি দলীয় নেতা-কর্মীরাও প্রার্থী হিসাবে তাঁকে কতটা মেনে নেবেন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে ৷ তাঁর ভালোভাবেই জানা রয়েছে, পিছন থেকে ছুরি মারার জন্য মালদা জেলার তৃণমূল গোটা রাজ্যেই কুখ্যাত ৷ নিশ্চিতভাবেই এখন থেকে এসবের মোকাবিলা করার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন নাটক ও ছোটপর্দার অভিনেতা প্রসূন ৷ তাঁর কথায়, "এই জেলার মানুষের সঙ্গে আমার যোগাযোগ দীর্ঘদিনের ৷ তাই জয় পেতে কোনও সমস্যা হবে না ৷"

বহিরাগত তকমা থাকলেও খাকি উর্দির প্রসূনকে চেনেন মালদাবাসী ৷ তুলনায় খানিকটা অচেনা দক্ষিণ মালদার তৃণমূল প্রার্থী শাহনাওয়াজ আলি রাইহান ৷ পৈতৃক বাড়ি কালিয়াচক 2 নম্বর ব্লকের হামিদপুর পঞ্চায়েতের তোফি গ্রামে ৷ এখন তাঁর পরিবার অবশ্য পুরাতন বাবুরহাট গ্রামে থাকে ৷ বাবা মহম্মদ সেকেন্দার আলি বিদ্যুৎ দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ৷ কর্মসূত্রে থাকতেন চাঁচলে ৷ ফরাক্কায় পড়াশোনা শুরু রাইহানের ৷

কলকাতা ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশোনা করেছেন তিনি ৷ পরে আসেন সাংবাদিকতায় ৷ কাজ করেছেন কলকাতা থেকে প্রকাশিত একাধিক সংবাদপত্রে ৷ সেখান থেকেই উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়ে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান ৷ আধুনিক ইতিহাস নিয়ে সেখানে গবেষণা করেন ৷ বিয়ে করেন সেখানেই ৷ চিকিৎসক স্ত্রী ও মেয়ে ইংল্যান্ডে থাকেন ৷ বর্তমানে তিনি মরক্কোর আল আকহান বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার ৷ জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর, দক্ষিণ মালদার জন্য এবার নতুন মুখ খুঁজছিল শীর্ষ নেতৃত্ব ৷ প্রার্থী হওয়ার জন্য তিনজনকে অফার দেওয়া হয় ৷ অন্য দু'জন তা প্রত্যাখ্যান করলেও রাইহান ভোটে দাঁড়াতে রাজি হন ৷

এদিকে প্রার্থী নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন শুরু হয়েছে জেলা তৃণমূলের অন্দরে ৷ দুই কেন্দ্রের জন্য জেলায় কি একজনও যোগ্য প্রার্থী ছিলেন না ? দলের জেলা নেতা-নেত্রীরা কি শুধুই দেওয়াল লিখে, পোস্টার সেঁটে যাবেন ? উঠছে এরকমই নানা প্রশ্ন। বাইরের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার পর কী হয় তা টের পাচ্ছে সুজাপুর ৷ নথিতে স্থানীয় বাসিন্দা হলেও বছরভর কলকাতাতেই থাকেন সেখানকার তৃণমূল বিধায়ক আবদুল গনি ৷

অভিযোগ, একুশের ভোটের পর তাঁকে 21 দিনও এলাকায় দেখা যায়নি ৷ উত্তর মালদা কেন্দ্র গঠনের পর তিনটি ভোটে সেখানে প্রার্থী ছিলেন মৌসম নুর ৷ দু'বার জিতেছেন ৷ উনিশের ভোটে প্রথমবার হেরেছেন ৷ তাঁকে কি আরেকবার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল না ? দলের জেলা সভাপতি আবদুল রহিম বকসিও ওই কেন্দ্রে যোগ্য প্রার্থী ছিলেন বলে মনে করছেন কর্মীদের একাংশ ৷ তাঁকেও সুযোগ দেওয়া যেত ৷ যদিও কলকাতা থেকে রহিম বকসি জানাচ্ছেন, "প্রার্থী ঠিক করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ আমাদের কাজ দুই কেন্দ্রেই দলীয় প্রার্থীদের জেতানো ৷ আমরা সেটাই করব ৷" রহিম সাহেবের কথা আর কাজে কোনও মিল থাকবে কি না, তা সময় বলবে ৷

আরও পড়ুন :

  1. প্রতিপক্ষ কে জানেন না, তবুও মালদা দক্ষিণে জয় নিয়ে নিশ্চিত বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী
  2. সাংসদের সামনেই বিধায়ককে শারীরিক হেনস্তা, প্রকাশ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠী-কোন্দল
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.