দার্জিলিং, 17 জানুয়ারি: তিন মাসে পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে 6 পর্যটকের মৃত্যু ৷ তারপরই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে জেলা প্রশাসন ও গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়্যাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ভূমিকা নিয়ে। সান্দাকফু, সিটং, দার্জিলিংয়ের মতো জায়গায় বেড়াতে গিয়ে পর্যটকদের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্যবিধি লাগু করেছে জিটিএ । কিন্তু তারপরও আটকানো যায়নি মৃত্যু ৷ তবে এবার পর্যটকদের মৃত্যু প্রতিরোধ করতে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের গাইডদের প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিল পর্যটন মন্ত্রক ও জিটিএ।
মূলত, সমতল থেকে স্বাস্থ্যবিধি না-মেনে আচমকা পাহাড়ের অধিক উচ্চতায় চলে যাওয়াতেই ঘটছে ওই বিপত্তি। এসবের পরই মানেভঞ্জনে তড়িঘড়ি স্বাস্থ্য ক্যাম্প বসানোর উদ্যোগ নেয় জিটিএ। যেখানে সান্দাকফু বেড়াতে যাওয়ার আগে পর্যটকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন চিকিৎসকরা ৷ যদি ওই পর্যটকদের শারীরিক পরিস্থিতি ঠিক থাকে তবেই তাকে আরও উচ্চতায় বেড়াতে যাওয়ার সবুজ সংকেত দেবে প্রশাসন ৷ সঙ্গে আনতে হবে চিকিৎসকের মেডিক্যাল ফিট সার্টিফিকেট।
এত সবের পরেও কলকাতা, ভবানীপুর, ভদ্রেশ্বর, হুগলি, মুর্শিদাবাদের পর্যটকদের মৃত্যু হয়েছে। যে কারণে মেডিক্যাল ক্যাম্পের পর এবার অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের সঙ্গে জড়িত গাইডদের প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিল জিটিএ। ট্রেকিং, হোম-স্টে, ব়্যাফটিং, প্যারাগ্লাইডিংয়ের মতো অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমে গিয়ে যাতে কোনও পর্যটকদের মৃত্যু না-হয় সেজন্য এই উদ্যোগ পর্যটন মন্ত্রক ও জিটিএ-র।
দার্জিলিংয়ের ভানু ভবনে তিনদিনের এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় । কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রকের অনুমোদনে ইন্ডিয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ফাউন্ডেশনের অধীন হ্যানিফেল সেন্টার অফ আউট ডোর এডুকেশন ইন হিমালয়া নামে এক আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যরা প্রশিক্ষণ দেয়। সংস্থার চার বিশেষজ্ঞ জিটিএ এলাকার প্রথম দফায় 50 জন অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের গাইডদের প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ দেবেন। প্রশিক্ষণের পর গাইডদের একটি পর্যটন মন্ত্রক ও জিটিএ'র তরফে সার্টিফিকেটও তুলে দেওয়া হবে।
এই সার্টিফিকেট ও প্রশিক্ষণ না থাকলে কোনও গাইড পর্যটকদের নিয়ে নেচার ক্যাম্প ও অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমে যাওয়ার অনুমতি পাবেন না। এমনকী নেচার ক্যাম্পগুলোতেও একজন করে এই প্রশিক্ষিত গাইড রাখা বাধ্যতামূলক করেছে জিটিএ।
জিটিএ'র অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের ফিল্ড ডিরেক্টর দাওয়া শেরপা বলেন, "জিটিএ'র অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের গাইডদের পর্যটন মন্ত্রক ও জিটিএর তরফে এই প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যটকরা কোনও শারীরিক অসুস্থতার মুখে পড়লে একজন গাইডের কী কী করণীয় তা শেখানো হবে। পাশাপাশি গাইডদের প্রাথমিক চিকিৎসার সামগ্রী দেওয়া হবে। মূলত আহত হলে, জখম হলে, সাপে কামড়ালে, উচ্চতায় শ্বাসকষ্ট-সহ অন্যান্য সমস্যা হলে একজন গাইডের কী করণীয় সেটা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ক্ষতে ব্যান্ডেজ করা, স্ট্রেচার বানানো, প্রাথমিক ওষুধ থাকা, অক্সিজেন লাগানো এসব শেখানো হয় ।"
হিমালয়ান হসপিটালিটি ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, "পর্যটকদের কেন এভাবে মৃত্যু হচ্ছে সেটা আগে জিটিএ'র দেখা উচিত। প্রত্যেক হোম-স্টে, হোটেলে ন্যূনতম প্রাথমিক চিকিৎসার সামগ্রী রাখা উচিত। আর গাইডদের প্রশিক্ষণ সত্যি খুব জরুরি।"
ইস্টার্ন হিমালয় ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী কমিটির সদস্য দেবাশিস মৈত্র বলেন, "পর পর পর্যটকদের মৃত্যু সত্যি খুবই উদ্বেগের । এতে পাহাড়ের পর্যটনে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে। গাইডদের এই প্রশিক্ষণকে স্বাগত জানাই। এতে পর্যটকদের প্রাণহানি কম হবে বলে মনে করি।"