শিলিগুড়ি, 2 জুলাই: "রাজ্য সরকারের নেতৃত্বে, মদতে ও পৃষ্ঠপোষকতাতেই এই ধরণের ঘটনা ঘটে চলেছে। আর এর পিছনে রাজ্যের শাসকদল, আধিকারিক ও দূর্নীতিপরায়ন পুলিশ কর্মীরাও রয়েছেন ৷" কোচিবহারের নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করার পর রাজ্যের সাম্প্রতিক হিংসা নিয়ে এমনই মন্তব্য করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ৷ পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও সুর চড়ালেন রাজ্যপাল ৷ তাঁর হুঁশিয়ারি, তাঁকে অসম্মানিত করার ফল ভালো হবে না ৷
রাজ্যপাল বলেন, "যে আমার সম্মানে আঘাত করবে, তাকে তার ফল ভোগ করতে হবে । তিনি এখন অভিযুক্ত । আমি সেই বিষয়ে কিছু বলতে চাই না । তিনি আমার সাংবিধানিক সহকর্মী । আমি তাঁকে সেই সম্মান দিই । কিন্তু যেখানে আমার আত্মসম্মানের প্রশ্ন উঠেছে, সেখানে আমি তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছি ।"
মঙ্গলবার কোচবিহার ও চোপড়ায় নির্যাতিতাদের সঙ্গে দেখা করতে শিলিগুড়িতে পৌঁছান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস । কিন্তু এ দিন কোচবিহারের নির্যাতিতা মহিলা বিজেপি কর্মীর সঙ্গে শিলিগুড়ি স্টেট গেস্ট হাউসে দেখা করলেও চোপড়ার নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করতে তিনি আর যাননি । সফর বদল করে তিনি ফিরে যান দিল্লিতে ।
নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করার পর রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বলেন, "আমি এখানে রাজ্যপাল হিসেবে আসিনি । একজন অভিভাবক একজন সাধারণ হিসেবে এসেছি । বাংলায় এই ধরনের ঘটনা ঘটেই চলেছে । টাকা, রাজনীতি, সরকারের শক্তি মিলে এসব করানো হচ্ছে । রাজ্যবাসীর অধিকার যাতে অক্ষুন্ন থাকে তার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের, পুলিশ মন্ত্রীর । রাজনীতির কাছে যাতে কোনোভাবেই মানুষের অধিকার ক্ষুন্ন না হয়, সেটা দেখা আমার দায়িত্ব । আর সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে আমার যা করণীয় তাই করব ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকে বাংলায় হিংসা খুনোখুনি হয়ে আসছে । এটা চলতে পারে না । রাজ্য সরকারকে এসবের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা উচিত । কিন্তু আমি দেখছি উলটে সরকারই এসবকে টাকা দিয়ে প্রশ্রয় দিচ্ছে, আরও হিংসা ছড়াতে উদ্যোগ নিচ্ছে । বাংলায় একটি কুৎসিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে । এটা এখনই আর এখানেই শেষ করতে হবে ।"
এরপরই তিনি বলেন, "আমি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাতেই এসব ঘটনা ঘটছে । আর এই সমস্যাকে সঠিকভাবে সমাধান করা হবে ।" রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার পর নির্যাতিতা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, "রাজ্যপালের কাছে পুরো ঘটনা জানিয়েছি । আশাকরি তিনি পদক্ষেপ করবেন আমাকে ন্যায় পেতে । কারণ আমার বাংলার পুলিশের উপর ভরসা নেই ।"
এ দিন রাজ্যপাল চোপড়ায় না যাওয়ার কারণও জানান ৷ তিনি বলেন, "আমাকে চোপড়ার নির্যাতিতা আবেদন করেছেন যাতে আমি রাজভবনে তাঁর সঙ্গে একান্তে সাক্ষাৎ করি । আমি তাঁর এই আবেদনকে মান্যতা দিয়েছি । নির্যাতিতা আমার সঙ্গে যেকোনও জায়গায় দেখা করতে পারেন । সেটা তিনি রাজভবনে এসে করুক অথবা আমি তাঁর কাছে গিয়ে দেখা করি । আমার অভিজ্ঞতা ও নির্যাতিতাদের সঙ্গে দেখা করার পর আমি অনুভব করছি যে মুখ্যমন্ত্রীর বাংলা আর মহিলাদের জন্য সুরক্ষিত নয় ।"
একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, "আমি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে 22 বার রিপোর্ট চেয়েছি। এটা রাজ্যপালের সাংবিধানিক দায়িত্ব। আর মুখ্যমন্ত্রীর এটা দায়িত্বও যে আমি যেকোনও বিষয়েই হোক রিপোর্ট তলব করলে, তা সময়মতো রিপোর্ট দেওয়া। কিন্তু তা করা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী সাংবিধানিক বাধা তৈরি করতে চাইছেন। আমি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। যা পদক্ষেপ করার তা করা হবে।"