দুর্গাপুর, 19 ফেব্রুয়ারি: আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর ও তাঁর ছেলে গ্রেফতার । তাঁদের আদালতে পেশ করা হয় ৷ সেসময় বিজেপির চোর চোর স্লোগানে মুখরিত হয় আদালত চত্বর । ঘটনায় সরগরম দুর্গাপুর ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর নগর নিগমের 32 নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন কাউন্সিলর মানস রায় এবং তাঁর ছেলে অভ্রনীল রায় ৷ বহু মানুষের সঙ্গে তাঁরা আর্থিক প্রতারণা করেছেন বলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ উঠে আসছিল । অভিযোগ, বিভিন্ন দোকান থেকে দামি দামি মোবাইল, কারও কাছ থেকে চারচাকা গাড়ি, আবার এক বিজেপি নেতার কাছ থেকে নগদ টাকা নিয়ে প্রতারণা করেন তাঁরা ৷
একাধিক ঘটনায় অভিযুক্ত মানস রায় ও তাঁর ছেলেকে মঙ্গলবার দুর্গাপুর থানার পুলিশ প্রায় চার ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করে । বুধবার তাঁদেরকে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে পাঠানো হয় । সেই সময় ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে দুর্গাপুর মহকুমা আদালত চত্বরে চোর চোর স্লোগান দেওয়া হয় । পাশাপাশি তৃণমূলের তরফেও মানস রায়কে বহিষ্কারের দাবি উঠেছে ।
দুর্গাপুরের গোপালমাঠের বাসিন্দা মানস রায় । গত পুরসভা নির্বাচনে এক বিধায়কের সহায়তায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতীকে দুর্গাপুরের 32 নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পান তিনি । কিন্তু কাউন্সিলর হিসাবে শপথ নেওয়ার পর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে প্রায়শই বিভিন্ন অভিযোগ উঠে আসতে থাকে । দলের পক্ষ থেকে তাঁকে বারবার সাবধানবাণী শোনানো হলেও তিনি তাঁর অবস্থান বদল করেননি ।
অভিযোগ, বিভিন্ন দোকান থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে তাদের আর টাকা দিতেন না তিনি । শুধু মোবাইল ফোন নয়, পশ্চিম বর্ধমান জেলার বিজেপি নেতা অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নগদ টাকা ধার নিয়ে তাঁকেও একের পর এক চেক দিয়ে গিয়েছেন । সমস্ত চেক বাউন্স হয় বলে অভিযোগ এই বিজেপি নেতার ।

দুর্গাপুরের মেনগেটের বাসিন্দা মহম্মদ আসিফের অভিযোগ, "আমি পুরনো চার চাকা গাড়ি বেচার জন্য একটি সংস্থাতে দিয়েছিলাম । আট লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা আমার গাড়ির দাম হয়েছিল । সেই গাড়ি মানস রায় ও তাঁর ছেলে অভ্রনীল রায় নিয়েছিল । আমাকে যে চেক দেওয়া হয়েছিল, সেই সমস্ত চেক বাউন্স হয় । আমার গাড়ি ভেঙে চুরে রাস্তায় ফেলে রেখেছিল । আমি বহুবার তাঁর কাছে টাকা চাইলেও, সেই টাকা আমাকে আজও দেওয়া হয়নি । বাবা ও ছেলে দু'জনেই চিটিংবাজ । এরা তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলর, এটা বলতে লজ্জা হয় ।"
এই ঘটনার পর রাজনৈতিকমহলে বাবা-ছেলেকে নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে । কংগ্রেস নেতা দেবেশ চক্রবর্তী ও বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই একযোগে আক্রমণ করেছেন রাজ্যের শাসকদলকে । মানস রায়ের গ্রেফতার হওয়া এবং তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মানুষের সঙ্গে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে একপ্রকার কোণঠাসা শাসকদল ।
পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, "এই সমস্ত মানুষের জন্য দল কালিমালিপ্ত হল । এরা আসে দলের ক্ষতি করতে । রাজ্য নেতৃত্বকে আমরা মানস রায়কে বহিষ্কারের জন্য আবেদন জানাব ।"
উল্লেখ্য, পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ ৷ নির্ধারিত সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার বহুদিন পরেও দুর্গাপুর নগর নিগমের নির্বাচন এখনও হয়নি । দুর্গাপুরের নির্বাচন যখনই হোক, মানস রায়ের বিভিন্ন মানুষের কাছে এই আর্থিক প্রতারণা বিরোধীদের কাছে যে প্রচারের মূল অস্ত্র হয়ে উঠবে, তার বলার অপেক্ষা রাখে না ।