কলকাতা, 21 ফেব্রুয়ারি: উচ্চশিক্ষার নীতিতে পরিবর্তন আনার নামে উপাচার্য নিয়োগের সমস্ত ক্ষমতা রাজ্যের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর ৷ বৃহস্পতিবার রাজ্য বিধানসভায় উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রেজোলিউশনে বলতে গিয়ে এমনটাই জানান শিক্ষামন্ত্রী ৷ এদিন বিধানসভায় কেন্দ্রীয় নীতির পাল্টা রেজোলিউশন নিয়ে আসা হয় ৷
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি খুঁজে বের করে নির্মাণ করা, অধ্যাপক ও কর্মচারীদের বেতন, ছাত্রদের পড়াশোনার খরচ সব রাজ্য সরকার দেবে। আর উপাচার্য ঠিক করবে কেন্দ্র ! এটা গৈরিকীকরণ ছাড়া আর কিছু নয়। তাই আমরা কেন্দ্রের সার্চ কমিটির বিরুদ্ধে নতুন শিক্ষানীতি পেশ করেছি।"
উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, এতদিন উপাচার্য নিয়োগের জন্য পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটি ছিল ৷ যেখানে রাজ্যপালের প্রতিনিধি, মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি, রাজ্যের শিক্ষা সংসদ, ইউজিসি এবং বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিলের একজন করে প্রতিনিধি থাকতেন। কিন্তু কেন্দ্রের নতুন নির্দেশ অনুসারে, এই কমিটিকে তিন সদস্যের করা হবে। সেখানে রাজ্যপালের প্রতিনিধি, ইউজিসির প্রতিনিধি এবং বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিলের একজন সদস্য থাকবেন। অর্থাৎ তিন সদস্যের মধ্যে দু’জনই কেন্দ্রের প্রতিনিধি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন। আমরা কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করছি। কারণ এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করতে চাইছে কেন্দ্র।"
এদিনের আলোচনার শেষে জবাবই ভাষণ দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী সরাসরি রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে নিশানা করেন ৷ তিনি বলেন, "রাজভবনে বসে বেহালা বাজানো বন্ধ করুন ৷ আপনি নিরোর মতো আচরণ করছেন ৷ আর এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উপাচার্যহীন অবস্থায় ভুগছে ৷ ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলা করা হচ্ছে ৷ এসব চলতে পারে না।"
তিনি আরও বলেন, "রাজ্যপাল কেন্দ্রের আজ্ঞাবহ। তিনি তাদের কথায় চলেন ৷ কিন্তু আমরা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি ৷ তাই আমরা মানুষের দায়িত্ব পালন করছি।" শিক্ষামন্ত্রীর অভিযোগ, কেন্দ্র সরকার পরিকল্পনা করছে তাদের অনুগত উপাচার্য বসানোর। তাই ইউজিসি-র মাধ্যমে সার্চ কমিটিতে কেন্দ্রের দু’জন প্রতিনিধি রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, "এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর সরাসরি কুঠারাঘাত। কেন্দ্রের এই একতরফা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা রাজ্য বিধানসভায় নতুন শিক্ষানীতি পেশ করেছি এবং তা পাসও হয়েছে ।" এদিন তিনি হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, "শিক্ষা কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ তালিকাভুক্ত বিষয়। আজ যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, তা ভবিষ্যতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধেই যাবে।"
প্রসঙ্গত, এদিন বিধানসভায় শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, তামিলনাড়ু, কেরল, কর্ণাটক, পঞ্জাব-সহ একাধিক রাজ্য কেন্দ্রের এই নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে বলে জানান রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী।