চুঁচুড়া, 13 অগস্ট: দুর্গাপুজোর বৈঠককে ঘিরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে উত্তাল হল চুঁচুড়া ৷ অভিযোগ, পুজো কমিটির কর্মকর্তারা মারমুখী হওয়ায় তাঁদের পালটা জবাব দিতে হাওয়াই চটি নিয়ে তেড়ে গেলেন মহিলা কাউন্সিলর ৷ উভয় পক্ষই শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য ৷ তারা একে-অপরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে ৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নামতে হয়েছে এলাকার তৃণমূল বিধায়ককে ৷
গণ্ডগোলের সূত্রপাত স্থানীয় দুর্গাপুজোর হিসাব নিয়ে ৷ সেই ঘটনায় চুঁচুড়া পুরসভার 7 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রীতা দত্তের স্বামী ও ছেলে প্রতিবাদ করায় তাঁদের উপর দুর্গাপুজো কমিটির কর্তারা চড়াও হন । কমিটির কর্মকর্তাও তৃণমূলেরই কর্মী । অভিযোগ, একাধিক পুজো কমিটি ও ক্লাবের দায়িত্ব নিয়ে হিসেবের গরমিল করছেন কমিটির সম্পাদক-সহ অন্যান্যরা । রাজ্য সরকারের অনুদান ছাড়াও স্থানীয় ওলাইচণ্ডি মন্দিরের ট্রাস্ট থেকে টাকা নেওয়া হয় দুর্গাপুজোর জন্য । তারই প্রতিবাদ করেন কাউন্সিলরের স্বামী স্বপন দাস । তাতেই ক্ষেপে যান ক্লাবের কর্মকর্তারা । ক্লাবের তরফে জানানো হয়, দীর্ঘদিন ধরেই ওলাইচণ্ডি মন্দিরের 50 হাজার টাকা দুর্গাপুজোতে দেওয়া হয় । তার হিসাবও আছে । তা সত্ত্বেও ক্ষমতা দখলের জন্য এই অশান্তি সৃষ্টি করছেন কাউন্সিলর ও তাঁর স্বামী স্বপন ।
কাউন্সিলর রীতা দত্তের দাবি, "মন্দিরের উন্নতিকল্পে সাধারণ মানুষের দানের টাকা দুর্গাপুজো কমিটিকে কেন দেওয়া হবে ? আমার স্বামী ও ছেলে এই প্রশ্ন তুলতেই তাঁদের মারতে উদ্যত হন কমিটির লোকজন । তাই আমি সেখানে গিয়ে জুতো দেখিয়েছি । একই লোকজন ক্লাবে, দুর্গাপুজো ও ওলাইচণ্ডি পুজোর দায়িত্বে আছেন । তাঁরা কোনও হিসাব দেন না । পাড়ার লোককেও মন্দিরে মানসিক করে পুজো দিতে গেলে দশ হাজার টাকা দিতে হয় । অথচ ভোগ দেওয়া হয় না । এসবের প্রতিবাদ করায় ক্লাবের সদস্যরা আমার স্বামীর উপর চড়াও হন । আবার থানায় যান । তাই আমরাও থানায় গিয়েছি ।"
পুজো কমিটির সম্পাদক সৌদীপ হোড়ের দাবি, "দুর্গাপুজো কমিটির ছেলেরাই ওলাইচণ্ডি মন্দিরের পুজোর কাজে ছুটে আসেন । মেলায় অনেকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন । একই ব্যক্তি মন্দির ও পুজো কমিটির সদস্য হলেও কমিটি আলাদা রয়েছে । কাউন্সিলরের স্বামী স্বপন দত্ত পুজো কমিটিতে ঢুকতে চান ও দখল করতে চান । কাউন্সিলর মিথ্যা অভিযোগ করছেন । তাই আমরা থানায় জানিয়েছি ।"
দুই গোষ্ঠীর এই গণ্ডগোলে আসরে নামতে হয় চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদারকে ৷ তিনি বলেন, "দুর্গাপুজো কোনও রাজনৈতিক দলের নয় ।সর্বদলের মানুষ থাকেন পুজা কমিটিগুলিতে । কারও ব্যক্তিগত ভাবে সভাপতি বা সম্পাদক হওয়ার ইচ্ছা থাকতেই পারে । সেটা সবসময় সম্ভব নয় ।সর্বসম্মতি বা ভোটাভুটির মাধ্যমে কমিটি গড়া হয় । এটা কোনও ক্ষমতা দখলের লড়াই নয় । এখানে আমার মনে হয়, দু'পক্ষের উচিত নিজেদের মধ্যে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়া । দুর্গাপুজোর বাইরে দু'পক্ষই তৃণমূল করে । ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম না । তবুও বলব, কাউন্সিলারে উচিত নয় জোর করে কোনও কিছু দখল করা । মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কখনওই যাওয়া উচিত নয় ।"
উল্লেখ্য, হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার 5 ও 7 নম্বর ওয়ার্ডের সংযোগস্থল ওলাইচণ্ডিতলা এলাকায় দুর্গা পুজোর মিটিংয়ে ধুন্ধুমার হয় রবিবার ।
চুঁচুড়ার ওলাইচণ্ডি মন্দিরের পাশে রয়েছে অজয় সংঘ ক্লাব । ক্লাবের পাশেই ওলাইচণ্ডির মন্দির এবং মাঠ । সেই মাঠে হয় দুর্গাপুজো । ওলাইচণ্ডির মন্দিরে নিত্যদিন পুজোর পাশাপাশি দোলের পরের শনিবার বার্ষিক পুজো এবং মেলা বসে । ট্রাস্টি বোর্ড মন্দিরটি পরিচালনা করে । দুর্গাপুজোর আয়োজন করে অন্য কমিটি । ক্লাব দুর্গাপুজো করে । আবার ক্লাবের সদস্যরাই ট্রাস্টি ও পুজোর কমিটিতে রয়েছেন । ওলাইচণ্ডি মন্দির ট্রাস্টি থেকে 50 হাজার টাকা দুর্গাপুজো কমিটিকে দেয় প্রতিমা কেনার জন্য । সেই টাকা কেন দেওয়া হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কাউন্সিলর রীতার স্বামী স্বপন দাস । এই নিয়েই বাঁধে গণ্ডগোল ৷