মালদা, 30 নভেম্বর: শিক্ষকরা তাঁদের জরুরি কোনও ফাইল জেলা শিক্ষা দফতরে জমা দিলে, তা নানা কারণে বিভিন্ন টেবিলে আটকে থাকার অভিযোগ উঠত ৷ একমাস বা দু’মাস নয়, বছরের পর বছর ৷ এমনকি কাগজপত্র হারিয়ে গিয়েছে, এমন বলা হতো শিক্ষকদের ৷ সেই সব সমস্যার সমাধানে এবার নয়া ব্যবস্থা চালু করল শিক্ষা দফতর ৷ মালদা জেলায় চালু করা হল 'ফাইল ট্র্যাকিং সফটওয়্যার' ৷ যার মাধ্যমে কোনও ফাইল কোনও টেবিলে ও কেন আটকে রয়েছে, তা সহজেই জানা যাবে ৷
শুক্রবার এই সফ্টওয়্যারের উদ্বোধন করলেন রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সত্যজিৎ বর্মন ৷ রাত 10টার পর তিনি মালদা জেলা শিক্ষা দফতরে উপস্থিত হন ৷ সেখানেই জেলা শিক্ষা আধিকারিকদের উপস্থিতিতে 'ফাইল ট্র্যাকিং সফটওয়্যারে'র উদ্বোধন করেন ৷ উপস্থিত ছিলেন জেলা স্কুল পরিদর্শক বাণীব্রত দাস ৷ মালদা জেলাতেই প্রথম এই সফটওয়্যার চালু হল ৷ ভবিষ্যতে রাজ্যের বাকি জেলাগুলিতেও এই ব্যবস্থাপনা চালু হবে বলে জানান মন্ত্রী ৷
তিনি বলেন, "মালদার ডিআই-এর উদ্যোগে 'ফাইল ট্র্যাকিং সিস্টেম' চালু হল ৷ আজ সেই ব্যবস্থার উদ্বোধন হল ৷ এই ব্যবস্থার ফলে কোনও শিক্ষক যদি তাঁর ফাইল শিক্ষা দফতরে জমা করে থাকেন, খুব সহজেই তার সন্ধান পাওয়া যাবে ৷ এতে প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষিকার উপকার হবে ৷ অফিসের কর্মীদেরও সুবিধে হবে ৷"
এর ব্যাখ্যা দিয়ে সত্যজিৎ বর্মন বলেন, "শিক্ষক-শিক্ষিকার কোনও ফাইল ডিআই বা এসআই অফিসে জমা দিলে, বর্তমান ব্যবস্থায় অনেক সময় কাগজের সেই ফাইল খুঁজে পাওয়া যায় না ৷ কিন্তু, সেই ফাইল যদি নাম দিয়ে কম্পিউটারের নথিতে তোলা থাকে, তা দ্রুত খুঁজে পাওয়া যাবে ৷ মালদা থেকে এই ব্যবস্থা শুরু হল ৷ আগামিদিনে হয়তো গোটা রাজ্যেই এই ব্যবস্থা চালু করা হবে ৷"
জেলা শিক্ষা দফতরের কর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষা দফতর কার্যত ঘুঘুর বাসা তৈরি হয়ে গিয়েছিল ৷ তথাকথিত শিক্ষক নেতাদের একটা অংশ গোটা দফতর নিয়ন্ত্রণ করছিলেন বলে অভিযোগ ৷ গুরুত্বপূর্ণ বহু ফাইল তাঁরাই নিয়ন্ত্রণ করতেন ৷ নিজেদের ইচ্ছেমতো বেশ কিছু ফাইল বছরের পর বছর আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে ৷
একাংশের অভিযোগ, তাঁরা সবাই শাসকদলের ছত্রছায়ায় থাকায় কর্মীদেরও কিছু করার ছিল না ৷ তাঁদের কথা না-শোনায় কয়েকজন কর্মীকে হুমকির মুখেও পড়তে হয়েছে ৷ এই সমস্ত নেতাদের শিক্ষা দিতে এমনই ব্যবস্থা চালু করা ভীষণ প্রয়োজন ছিল বলে জানাচ্ছেন তাঁরা ৷
কীভাবে কাজ করবে এই সফটওয়্যার ?
শনিবার জেলা স্কুল পরিদর্শক বাণীব্রত দাস বলেন, "এই সফটওয়্যারে নির্দিষ্ট ডকেট নম্বর দিয়ে সার্চ করলে সেই ফাইল কোন টেবিলে, কার কাছে, কেন আটকে রয়েছে, তার বিস্তারিত তথ্য উঠে আসবে ৷ এর ফলে কোনও শিক্ষকের ফাইল দীর্ঘদিন দফতরে আটকে থাকবে না ৷ অনেক শিক্ষকের অভিযোগ ছিল, তাঁরা বহুদিন আগে প্রয়োজনীয় ফাইল জমা দিলেও কাজ হয়নি ৷ অনেকসময় তাঁদের বলা হয় ফাইল হারিয়ে গিয়েছে ৷ এই সমস্যার সমাধানেই এই সফটওয়্যার চালু করা হয়েছে ৷ জেলা শিক্ষা দফতরের তিনজন আধিকারিক এই সফ্টওয়্যার তৈরি করেছেন ৷ গতকাল রাতে মন্ত্রী সফটওয়্যার উদ্বোধন করেছেন ৷ আজ থেকেই সেটি চালু করে দেওয়া হয়েছে ৷"
শুক্রবার রাতে ট্যাবের টাকার প্রতারণা নিয়েও মন্তব্য করেন তিনি৷ সত্যজিৎ বর্মন বলেন, "পড়ুয়াদের সরকারি ট্যাবের টাকা নিয়ে যারা দুর্নীতি করেছে, তারা শাস্তি পাবে ৷ এই ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে ৷ কিছু অপরাধী ধরাও পড়েছে ৷ আরও যদি কেউ এই দুর্নীতিতে জড়িত থাকে, তারাও খুব দ্রুত ধরা পড়বে ৷ স্কুলের শিক্ষক কিংবা দফতরের কর্মীদের কেউ যদি এই দুর্নীতিতে জড়িত থাকেন, তাঁদেরও ছেড়ে কথা বলা হবে না ৷ ইতিমধ্যে, রাজ্য সরকারের তরফে সবাইকে টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ কেউ যদি তা না পেয়ে থাকে, সরকারের কাছে আবেদন জানালেই টাকা পেয়ে যাবে ৷"