দুর্গাপুর ও আসানসোল, 15 ফেব্রুয়ারি: বেড়াতে নিয়ে গিয়ে যুবতীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ৷ বাঁকুড়ার বিহারীনাথ পাহাড় সংলগ্ন একটি হোটেলে ঘটনাটি ঘটে বলে অভিযোগ ওঠে ৷ নির্যাতিতার বাড়ি পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে ৷ অভিযুক্তরা আসানসোলের বাসিন্দা ৷ নির্যাতিতার মা আসানসোল মহিলা থানায় মেয়েকে গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছেন ৷ যে চার যুবকের নামে তিনি অভিযোগ করেছেন, সেই চারজন এবং তিন মামাতো বোনের সঙ্গে বাঁকুড়ায় নির্যাতিতা মেয়েটিকে গিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে ৷
আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের পুলিশ এই নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে ৷ শুক্রবার মেয়েটিকে দুর্গাপুরের ইএসআই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৷ তিনি আপাতত এখানে সেখানে চিকিৎসাধীন ৷ পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তরা পলাতক ৷ তাদের সন্ধান চলছে ৷

এদিকে এই ঘটনায় আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ৷ শনিবার দুর্গাপুরের সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান বিজেপি ৷ কিন্তু তাঁদের বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ৷ আসানসোলেও অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে পথ অবরোধ করে বিজেপি ৷
ঘটনাটি ঠিক কী ?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর থানা এলাকায় বাড়ি ওই যুবতীর ৷ তাঁর মামার বাড়ি বার্নপুরে ৷ গত তিনবছর ধরে তিনি সেখানেই থাকেন ৷ সেখান থেকেই তিনি আসানসোল গার্লস কলেজে পড়ছেন ৷ এখন তিনি ওই কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী । তবে গত 3-4 মাস ধরে তিনি দুর্গাপুরে নিজের বাড়িতেই থাকছিলেন ৷
মেয়েটির পরিবারের অভিযোগ, চলতি মাসের 13 তারিখ মামাতো বোনের ডাকে তিনি আবার বার্নপুরে যান । মামার তিন মেয়ে এবং চার বন্ধুর সঙ্গে বাঁকুড়ার শালতোড়ার বিহারীনাথ পাহাড়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন । সেখানেই সেই বন্ধুদের মধ্যে দু’জন যুবতীকে বিহারীনাথ পাহাড় এলাকার একটি হোটেলে নিয়ে মাদক জাতীয় কিছু খাওয়ায়৷ তার পর ধর্ষণ করে ৷

পরিবারের আরও দাবি, ওই যুবতী ও তাঁর তিন মামাতো বোনকে ওই যুবকরা বার্নপুরে 13 তারিখ সন্ধ্যায় গাড়ি করে ছেড়ে দিয়ে যায় । নির্যাতিতা যুবতীর অভিযোগ, তাঁর বড়মামার বড় মেয়ে ও ওই চারজন যুবক তাঁকে মুখ বন্ধ রাখার জন্য হুমকিও দেয় । ওই যুবতী মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় তাঁর মামার বাড়িতে আসেন । বৃহস্পতিবার ওই যুবতী অসহ্য পেটে যন্ত্রণা অনুভব করলে তাঁর ছোটমামা অসুস্থতার কথা জানতে পারেন ৷ প্রথমে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় আসানসোল জেলা হাসপাতালে ।
অভিযোগ, মামার বড় মেয়ে বারবার তাঁকে চুপ থাকার জন্য অনুরোধ করে । কিন্তু এই যুবতী আসানসোল জেলা হাসপাতালে তাঁর ছোটমামাকে এবং চিকিৎসকদের সমস্ত সত্যি ঘটনা জানান । এরপরেই আসানসোল মহিলা থানার পুলিশ এসে ওই যুবতীর সঙ্গে কথা বলেন । শুক্রবার আসানসোল জেলা হাসপাতাল থেকে মেয়েটিকে দুর্গাপুর ইএসআই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৷
পলাতক চার যুবক
যে চার যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা আসানসোলের ইসমাইলের প্রেমনগর এলাকার বাসিন্দা । চার যুবকই ঘটনার পর থেকে পলাতক । এক যুবকের বাবা-মাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে । অন্য অভিযুক্ত আরেক যুবকের মা বলেন, "বৃহস্পতিবার সকালে আমার ছেলে বিহারীনাথ মন্দির যাবে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল । সন্ধ্যা ছ’টার সময় ফিরে আসে । সেখানে কী ঘটেছে, আমি কিছু জানি না । আজ সকালে আমার ছেলে বাড়ি থেকে চলে যায় । তার ফোন বন্ধ । ছেলে কোথায় আছে জানি না ।"
অন্য অভিযুক্ত তিন যুবকের পরিবারের কারও সঙ্গেই কথা বলার সুযোগ হয়নি । তাদের বাড়িতে গিয়ে দরজায় নক করলেও পরিবারের কেউ বেরিয়ে আসেনি । আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারের ডিসি সেন্ট্রাল ধ্রুব দাস বলেন, "চারজনের নামে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে । পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে । অভিযুক্ত চার যুবকের সন্ধানে তল্লাশি চলছে ।"
দুর্গাপুরে বাধার মুখে বিজেপি
এদিকে এদিন নির্যাতিতা যুবতীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হয় বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই-সহ বিজেপির অন্যান্য নেতাকর্মীদের । ইএসআই হাসপাতালের কর্মীদের সঙ্গে বচসা হয় তাঁদের ৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে যায় দুর্গাপুরের নিউ টাউনশিপ থানার পুলিশ ।
বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের অভিযোগ, "আমার বিধানসভার এক যুবতীকে নিয়ে গিয়ে চারজন যুবক মিলে ধর্ষণ করেছে । আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুর্গাপুরের ইএসআই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে । আমি খবর পেয়ে দেখা করতে এসেছি । সুপার বলছেন, আসানসোলে আছি । এখানে কর্মীরা বলছে দেখা করা যাবে না । কেন ?’’

তিনি এই নিয়ে রাজ্য সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন ৷ তিনি বলেন, ‘‘সারা বাংলায় যা চলছে এখানেও তা চলছে । মহিলা মুখ্যমন্ত্রী বলছেন যারা এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে, তাদের ফাঁসি দেওয়া হবে । আমি মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করছি, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত যাঁরা তাদের ফাঁসি দেওয়া হবে তো ?’’
অন্যদিকে পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, "অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা । দোষীদের কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত । কিন্তু বিজেপি বিধায়ক যে কাজ করল তাও অত্যন্ত ব্যথাদায়ক । হাসপাতালে রোগীরা অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়েছে বিজেপি বিধায়কের এই আচরণে । এই ধরনের রাজনীতি না করাটাই ভালো ।’’
আসানসোলে বিজেপির বিক্ষোভ
এই ইস্যুতে এদিন উত্তপ্ত হয় আসানসোলও ৷ আসানসোলের বার্নপুর রোডে পুলিশ লাইনে এসিপি সেন্ট্রালের দফতরের সামনে দীর্ঘক্ষণ ধরে পথ অবরোধ করছেন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল । বিকেল সাড়ে 4টে থেকে প্রায় ঘণ্টাতিনেক অবরোধ করেন তিনি ৷ পরে পুলিশি আশ্বাসে অবরোধ ওঠে ৷ অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশ সময় চেয়েছে ৷ সেই সময়ের মধ্যে কেউ গ্রেফতার না হলে বিজেপি ফের আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে ৷

পালটা তোপ তৃণমূলের
এই নিয়ে তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি অভিনব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয় । পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে । নিশ্চয়ই অভিযুক্তরা ধরা পড়বে । কিন্তু আমরা যেটা জানতে পেরেছি অভিযুক্তদের মধ্যে একজন বিজেপির এক নেতার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় । তিনি বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাইছিলেন । একদিকে বিজেপি নেতা ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে চাইছিল । অন্যদিকে বিজেপি বিধায়করা এই ঘটনা নিয়ে নোংরা রাজনীতি করছে । সেই বিষয়টিকে আমরা নিন্দা জানাই ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এমন কি ভিজিটিং আওয়ার্স যখন নয়, সেই সময় হাসপাতালে ঢুকে হাঙ্গামা পাকানোর চেষ্টা করেছিলেন বিজেপির দুর্গাপুরের এক বিধায়ক । পাশাপাশি পথ অবরোধ করে সাধারণ মানুষকে হেনস্তা করলেন আসানসোলের দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক অগ্নিমিত্র পাল ।’’