কলকাতা, 19 ফেব্রুয়ারি: হাসপাতালের জমিতে জল সরবরাহ প্রকল্প, চরম ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবাজ্ঞানম ৷ রাজ্য সরকারের কর্মকাণ্ডে তাঁর মন্তব্য, "পার্কস্ট্রিটে আলো লাগিয়ে উৎসব পালন করছেন, আর এদিকে লোক মরছে ৷"
হাসপাতালের জমিতে জল সরবরাহ প্রকল্প হচ্ছে, আর চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত সাধারণ মানুষ। স্বাস্থ্য দফতরের সচিবের রিপোর্ট দেখে বেজায় ক্ষুব্ধ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। যেখানে মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন না, মানুষের মৃত্যু ঘটছে ৷ সেদিকে সরকারের কোন দৃষ্টি নেই ৷ হাসপাতাল পরিষেবার জন্য 20 বিঘা জমি রয়েছে ৷ কিন্তু 1976 সাল থেকে এখনও সেই হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা মাত্র 6টি ৷ বর্তমানে সেই শয্যা সংখ্যা চাহিদা অনুয়ায়ী 100টি হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি।
1962 সালে হাজি আয়েত বারি মোল্লা দক্ষিণ 24 পরগনার মধুরাপুর অঞ্চলে স্থানীয় মানুষদের চিকিৎসা পরিষেবার জন্য 10 বিঘা জমি দান করেন ৷ উদ্দেশ্য এই জমিতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি হবে ৷ 6 শয্যা বিশিষ্ট পুরন্দর পুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র তৈরি হয়। পরবর্তী কালে স্থানীয় মানুষের চাহিদা অনুয়ায়ী ঐ হাসপাতালের শয্যা বাড়ানো প্রয়োজন পড়ে ৷ 1975 সালে গফুর মোল্লা ফের 10 বিঘা জমি দান করেন। 1976 সাল থেকে এখনও পর্যন্ত শয্যা সংখ্যা না-বাড়ায় কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন গফুর মোল্লার ছেলে জাকির হোসেন ৷
গত 2 জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি টিএস শিবাজ্ঞানম এই হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে অন্তত 100 করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে স্বাস্থ্য দফতরের সচিবের রিপোর্ট জমা পড়ে ৷ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, 1976 সালেই ওই হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা 10 করা হয়েছে ৷ এলাকার মানুষের চাহিদা অনুয়ায়ী শয্যা সংখ্যা এর থেকে বেশি বাড়ানোর প্রয়োজন নেই ৷ ঐ স্থানে জল সরবরাহের প্রয়োজন রয়েছে ৷ তাই ওই জমিতে জল সরবরাহ প্রকল্প করা হচ্ছে ৷ এই রিপোর্ট দেখে চরম ক্ষুব্ধ হন প্রধান বিচারপতি ৷
প্রধান বিচারপতি রাজ্যের উদ্দেশ্যে বলেন, "পার্কস্টিটে আলো লাগিয়ে উৎসব পালন করছেন, আর এদিকে লোক মরছে ।" রাজনৈতিক সদিচ্ছা না-থাকলে আমলারা কাজ করতে পারে না। রাজ্যের আইনজীবী অনির্বাণ রায়কে প্রধান বিচারপতি বলেন, "সুন্দরবনের মত দ্বীপ জায়গায় লোকের জীবনযাপন এমনিতেই অত্যন্ত কঠিন ৷ আপনাদের কোন সদিচ্ছা নেই ৷ অত্যন্ত দুঃখের ব্যাপার। লোকজন কষ্ট পাচ্ছে ৷ এই সব লোকজন কখনও হয়তো কলকাতাই দেখেননি ৷ একটা হুইলচেয়ারের জন্যও রাজ্যকে নির্দেশ দিতে হয়। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়।"
প্রধান বিচারপতির মন্তব্যে কার্যত হতচকিত রাজ্যের আইনজীবী। আদালতের নির্দেশ, আগামী 24 ফেব্রুয়ারির মধ্যে ওই জমিতে জল সরবরাহ পরিষেবা কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে এবং কত মানুষ তা থেকে উপকৃত হবে, তার একটি রিপোর্ট আদালতে পেশ করতে হবে। পাশাপাশি ওই হাসপাতালে অন্তত 25 শতাংশ শয্যা বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারকে পরিকল্পনা করতে হবে ৷ মামলার পরবর্তী শুনানি 24 ফেব্রুয়ারি।