ETV Bharat / state

প্রতিমা তৈরিতে ভরসা সিসা যুক্ত রঙ ! দূষণ ঠেকাতে সরকারি সাহায্যের দাবি কুমোরটুলির - Lead Mixed Colours for Durga Idols - LEAD MIXED COLOURS FOR DURGA IDOLS

Lead Mixed Colours for Durga Idols: আর কয়েক মাস বাদেই বাঙালির দুর্গোৎসবের সূচনা ৷ কুমোরটুলিতে ঘুরে দেখা গেল, সিসা মিশ্রিত রঙ দিয়ে প্রতিমা রঙ করছেন শিল্পীরা, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক ৷ এই রঙের বিকল্প থাকলেও তা ব্যয়সাপেক্ষ বলে দাবি শিল্পীদের ৷ সেই নিয়ে ইটিভি ভারতের এই বিশেষ প্রতিবেদন ৷

Lead mixed colour used to paint Pratima in Kumortuli
কুমোরটুলিতে প্রতিমা তৈরিতে ভরসা সিসা যুক্ত রং ব্যবহার (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jul 27, 2024, 9:22 PM IST

কলকাতা, 27 জুলাই: গঙ্গা নদীর দূষণ ঠেকাতে সিসা-মুক্ত রঙের ব্যবহারের কথা বলা হয় ৷ কিন্তু এখনও মূর্তি রং করতে শিল্পীদের ভরসা সেই পুরনো আমলের সিসা মিশ্রিত রং ৷ এই দূষণ সম্পর্কে শিল্পীরা অবগত হলেও, বাস্তবে আর্থিক কারণে কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ করতে পারছেন না তাঁরা ৷ ফলে দূষণ ঠেকাতে গেলে সরকারি অনুদান ছাড়া বিকল্প পথ নেই বলেই জানাচ্ছেন শিল্পীরা ৷

কুমোরটুলিতে সিসা মেশানা রং দিয়েই চলছে প্রতিমা রাঙানোর কাজ, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর (ইটিভি ভারত)

শারদোৎসবের বাকি আর মাস দুয়েকের কিছু বেশি সময় ৷ শহরজুড়ে, পাড়ায় পাড়ায় মণ্ডপ তৈরির প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ বহু জায়গায় খুঁটি পুজোর অনুষ্ঠানে গাছের চারা বিলি করা হচ্ছে ৷ দূষণ রোধে গাছ লাগানোর বার্তা দিচ্ছে পুজো কমিটিগুলি ৷ তবে, শুধুই কি বায়ু দূষণ চিন্তার বিষয় ? গঙ্গা নদীও তো ভয়ানক দূষিত ! আর বাংলার সবথেকে বড় উৎসব দুর্গাপুজোর প্রতিমা তৈরি হয় সিসা যুক্ত রঙে, যে প্রতিমা পুজো শেষে সেই গঙ্গাতেই ভাসান হয় ৷

আবারও দুয়ারে কড়া নাড়ছে দুর্গাপুজো ৷ আর দুর্গাপুজো এলেই কেবল দেখা মেলে দূষণ পর্ষদের, এমনটাই দাবি কলকাতার কুমোরটুলির শিল্পী মহলের ৷ একটা কর্মশালা করেই দায় সারেন তাঁরা ৷ এনিয়ে রাজ্যের দূষণ পর্ষদ প্রতি বছর পালা করে, কুমোরটুলি-সহ বিভিন্ন জায়গায় প্রচার চালায় ৷ ছোট এক কৌটো রঙ দেয় শিল্পীদের, তবে ওইটুকুই ৷ কিন্তু, শিল্পীদের সেই আর্থিক ক্ষমতা নেই যে দামি দূষণমুক্ত রং কিনে, দূষণ আটকাবেন ৷

এই বিষয়ে কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী সমিতির কর্মকর্তা বাবু পাল বলেন, "একটা ঠাকুরে সিসা মুক্ত রং ব্যবহারে খরচ হয় 3-4 হাজার টাকা ৷ আর এখন যে রং দিয়ে কাজ করি, সেটা 500 টাকায় হয়ে যায় ৷ আমাদের বহু বৈঠক হয়েছে ৷ মিষ্টির প্যাকেট আর রং হাতে নিয়ে বাড়ি এসেছি ৷ আর কিছুই হয়নি ৷ সরকার এই ক্ষেত্রে আর্থিক অনুদান না দিলে, কোনওভাবেই সম্ভব নয় ৷ কোনও ক্লাব যদি নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে বলে যে তারা অতিরিক্ত খরচ দেবে, তখনই করতে পারি ৷"

শিল্পী বাসুদেব পালের কথায়, "সিসা ছাড়া রঙের অনেক দাম ৷ সাধারণ রঙের যে উজ্জ্বলতা, সেই ঔজ্জ্বল্য এই রঙে নেই ৷ ঝামেলা লেগে যায় ৷ ঠাকুর তৈরি করতে 50 হাজার টাকা ৷ আর 5 হাজার শুধু ওই রং কিনতেই খরচ ৷ আমাদের সব জেনেই সিসা যুক্ত রঙ ব্যবহার করতে হচ্ছে ৷"

পরিবেশকর্মীদের মতে সিসা যুক্ত রঙ ব্যবহার বন্ধ না করলে বিপদ বাড়বে ৷ যাঁরা এই রঙ করছেন, তাঁদের যেমন শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে ৷ তেমনই প্রতিমা বিসর্জনে গঙ্গা দূষিত হলে সাধারণ মানুষও সমস্যায় পড়বেন ৷ এই সিসার জন্য মানব দেহে নানা ধরনের রোগ বাসা বাঁধে ৷

একটি সিসা-মুক্ত রং উৎপাদনকারী সংস্থার কর্মী সব্যসাচী বসু বলেন, "আমরা শিল্পীদের লাগাতার সচেতন করে চলেছি ৷ তাঁদের রং বিতরণ করেছি ৷ আমরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলে দু’টি সমস্যা জানতে পেরেছি ৷ একটি এই রঙের দাম অনেকটা, দ্বিতীয় হল জৌলুসহীন ঠাকুর ৷ এই দুই সমস্যার সমাধান করে, আমরা কম দামের রং বাজারে আনার চেষ্টা করছি ৷"

পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, "আমরা শিল্পীদের সিসার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করি ৷ প্রতি বছর কর্মশালা করি ৷ এই বছরেও করব ৷ তবে, কোনও শিল্পীই যে সিসা মুক্ত রঙ ব্যবহার করে না, তেমনটা নয় ৷ যেহেতু প্রতিমা গঙ্গার জলে ফেলা হয়, আমরা গঙ্গার জলের নমুনা পরীক্ষা করে দেখেছি, এখনও পর্যন্ত সিসার পরিমাণ ডেঞ্জার লেভেলের নীচে ৷ আর্থিক অনুদান আমরা দিতে পারি না ৷ কারণ আমরা রেগুলেটরি সংস্থা ৷ আমাদের আইনে আর্থিক অনুদান বা সাহায্যের কোনও ক্লজ নেই ৷ তবে, আমরা সচেতনতার কাজ নিয়মিত করব ৷"

এনিয়ে ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রকল্পের, প্রকল্প সহায়িকা অপরাজিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, "সিসা ভারী ধাতু ৷ মাটিতে মিশলে তার নেতিবাচক প্রভাব আছে ৷ কোনও উপাদানে সিসা থাকলে, তা মাটিতে মিশলে সেক্ষেত্রে ভূগর্ভস্থ জলস্তরে গিয়েও সেটা পৌঁছায় ৷ জল দূষণও করে ৷ এর ফলে জলজ যে সম্পদ তারও ক্ষতি হয় ৷ দূষণের মাত্রা বেশি থাকলে, সেটা মানব দেহে প্রভাব ফেলবে ৷ এর সব থেকে খারাপ প্রভাব হল, গাছপালার বৃদ্ধি কমিয়ে দেয় ৷ সার্বিকভাবে পরিবেশের ক্ষতি করে ৷"

চিকিৎসক টি কে মুখোপাধ্যায় জানান, সিসার প্রভাব মানবদেহে দু'রকম ভাবে হতে পারে ৷ এক, বিষক্রিয়া হতে পারে ৷ দ্বিতীয়টি হল, বিষক্রিয়া ক্রমশ চলতে চলতে ক্রনিক পর্যায়ে চলে যায় ৷ আর তাতে যেটা হয়, সেটা হল স্নায়ু ঘটিত সমস্যা ৷ মানুষের মাথা ধরে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, খিচুনি ওঠে ৷ আবার পেটের সমস্যা হয়। বমি হওয়া অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য ৷ শিশুদের ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তা কমে যায় ৷ আচরণগত পরিবর্তন দেখা যায় ৷ কিডনির সমস্যা দেখা দেয় ৷ রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে, রক্তাল্পতা দেখা দিতে পারে ৷ হাড় ক্ষয়ে যেতে পারে ৷

কলকাতা, 27 জুলাই: গঙ্গা নদীর দূষণ ঠেকাতে সিসা-মুক্ত রঙের ব্যবহারের কথা বলা হয় ৷ কিন্তু এখনও মূর্তি রং করতে শিল্পীদের ভরসা সেই পুরনো আমলের সিসা মিশ্রিত রং ৷ এই দূষণ সম্পর্কে শিল্পীরা অবগত হলেও, বাস্তবে আর্থিক কারণে কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ করতে পারছেন না তাঁরা ৷ ফলে দূষণ ঠেকাতে গেলে সরকারি অনুদান ছাড়া বিকল্প পথ নেই বলেই জানাচ্ছেন শিল্পীরা ৷

কুমোরটুলিতে সিসা মেশানা রং দিয়েই চলছে প্রতিমা রাঙানোর কাজ, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর (ইটিভি ভারত)

শারদোৎসবের বাকি আর মাস দুয়েকের কিছু বেশি সময় ৷ শহরজুড়ে, পাড়ায় পাড়ায় মণ্ডপ তৈরির প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ বহু জায়গায় খুঁটি পুজোর অনুষ্ঠানে গাছের চারা বিলি করা হচ্ছে ৷ দূষণ রোধে গাছ লাগানোর বার্তা দিচ্ছে পুজো কমিটিগুলি ৷ তবে, শুধুই কি বায়ু দূষণ চিন্তার বিষয় ? গঙ্গা নদীও তো ভয়ানক দূষিত ! আর বাংলার সবথেকে বড় উৎসব দুর্গাপুজোর প্রতিমা তৈরি হয় সিসা যুক্ত রঙে, যে প্রতিমা পুজো শেষে সেই গঙ্গাতেই ভাসান হয় ৷

আবারও দুয়ারে কড়া নাড়ছে দুর্গাপুজো ৷ আর দুর্গাপুজো এলেই কেবল দেখা মেলে দূষণ পর্ষদের, এমনটাই দাবি কলকাতার কুমোরটুলির শিল্পী মহলের ৷ একটা কর্মশালা করেই দায় সারেন তাঁরা ৷ এনিয়ে রাজ্যের দূষণ পর্ষদ প্রতি বছর পালা করে, কুমোরটুলি-সহ বিভিন্ন জায়গায় প্রচার চালায় ৷ ছোট এক কৌটো রঙ দেয় শিল্পীদের, তবে ওইটুকুই ৷ কিন্তু, শিল্পীদের সেই আর্থিক ক্ষমতা নেই যে দামি দূষণমুক্ত রং কিনে, দূষণ আটকাবেন ৷

এই বিষয়ে কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী সমিতির কর্মকর্তা বাবু পাল বলেন, "একটা ঠাকুরে সিসা মুক্ত রং ব্যবহারে খরচ হয় 3-4 হাজার টাকা ৷ আর এখন যে রং দিয়ে কাজ করি, সেটা 500 টাকায় হয়ে যায় ৷ আমাদের বহু বৈঠক হয়েছে ৷ মিষ্টির প্যাকেট আর রং হাতে নিয়ে বাড়ি এসেছি ৷ আর কিছুই হয়নি ৷ সরকার এই ক্ষেত্রে আর্থিক অনুদান না দিলে, কোনওভাবেই সম্ভব নয় ৷ কোনও ক্লাব যদি নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে বলে যে তারা অতিরিক্ত খরচ দেবে, তখনই করতে পারি ৷"

শিল্পী বাসুদেব পালের কথায়, "সিসা ছাড়া রঙের অনেক দাম ৷ সাধারণ রঙের যে উজ্জ্বলতা, সেই ঔজ্জ্বল্য এই রঙে নেই ৷ ঝামেলা লেগে যায় ৷ ঠাকুর তৈরি করতে 50 হাজার টাকা ৷ আর 5 হাজার শুধু ওই রং কিনতেই খরচ ৷ আমাদের সব জেনেই সিসা যুক্ত রঙ ব্যবহার করতে হচ্ছে ৷"

পরিবেশকর্মীদের মতে সিসা যুক্ত রঙ ব্যবহার বন্ধ না করলে বিপদ বাড়বে ৷ যাঁরা এই রঙ করছেন, তাঁদের যেমন শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে ৷ তেমনই প্রতিমা বিসর্জনে গঙ্গা দূষিত হলে সাধারণ মানুষও সমস্যায় পড়বেন ৷ এই সিসার জন্য মানব দেহে নানা ধরনের রোগ বাসা বাঁধে ৷

একটি সিসা-মুক্ত রং উৎপাদনকারী সংস্থার কর্মী সব্যসাচী বসু বলেন, "আমরা শিল্পীদের লাগাতার সচেতন করে চলেছি ৷ তাঁদের রং বিতরণ করেছি ৷ আমরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলে দু’টি সমস্যা জানতে পেরেছি ৷ একটি এই রঙের দাম অনেকটা, দ্বিতীয় হল জৌলুসহীন ঠাকুর ৷ এই দুই সমস্যার সমাধান করে, আমরা কম দামের রং বাজারে আনার চেষ্টা করছি ৷"

পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, "আমরা শিল্পীদের সিসার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করি ৷ প্রতি বছর কর্মশালা করি ৷ এই বছরেও করব ৷ তবে, কোনও শিল্পীই যে সিসা মুক্ত রঙ ব্যবহার করে না, তেমনটা নয় ৷ যেহেতু প্রতিমা গঙ্গার জলে ফেলা হয়, আমরা গঙ্গার জলের নমুনা পরীক্ষা করে দেখেছি, এখনও পর্যন্ত সিসার পরিমাণ ডেঞ্জার লেভেলের নীচে ৷ আর্থিক অনুদান আমরা দিতে পারি না ৷ কারণ আমরা রেগুলেটরি সংস্থা ৷ আমাদের আইনে আর্থিক অনুদান বা সাহায্যের কোনও ক্লজ নেই ৷ তবে, আমরা সচেতনতার কাজ নিয়মিত করব ৷"

এনিয়ে ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রকল্পের, প্রকল্প সহায়িকা অপরাজিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, "সিসা ভারী ধাতু ৷ মাটিতে মিশলে তার নেতিবাচক প্রভাব আছে ৷ কোনও উপাদানে সিসা থাকলে, তা মাটিতে মিশলে সেক্ষেত্রে ভূগর্ভস্থ জলস্তরে গিয়েও সেটা পৌঁছায় ৷ জল দূষণও করে ৷ এর ফলে জলজ যে সম্পদ তারও ক্ষতি হয় ৷ দূষণের মাত্রা বেশি থাকলে, সেটা মানব দেহে প্রভাব ফেলবে ৷ এর সব থেকে খারাপ প্রভাব হল, গাছপালার বৃদ্ধি কমিয়ে দেয় ৷ সার্বিকভাবে পরিবেশের ক্ষতি করে ৷"

চিকিৎসক টি কে মুখোপাধ্যায় জানান, সিসার প্রভাব মানবদেহে দু'রকম ভাবে হতে পারে ৷ এক, বিষক্রিয়া হতে পারে ৷ দ্বিতীয়টি হল, বিষক্রিয়া ক্রমশ চলতে চলতে ক্রনিক পর্যায়ে চলে যায় ৷ আর তাতে যেটা হয়, সেটা হল স্নায়ু ঘটিত সমস্যা ৷ মানুষের মাথা ধরে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, খিচুনি ওঠে ৷ আবার পেটের সমস্যা হয়। বমি হওয়া অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য ৷ শিশুদের ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তা কমে যায় ৷ আচরণগত পরিবর্তন দেখা যায় ৷ কিডনির সমস্যা দেখা দেয় ৷ রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে, রক্তাল্পতা দেখা দিতে পারে ৷ হাড় ক্ষয়ে যেতে পারে ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.