শিলিগুড়ি, 14 জুন: বর্ষার শুরুতে তিস্তার এমন ভয়ঙ্কর রূপ যেন অন্য বার্তা দিচ্ছে ! গত বছরের স্মৃতি এখনও তাজা ৷ বাঁধ ভাঙা হড়পা বানে ভেসে গিয়েছিল সিকিম এবং বাংলার উত্তরের জেলাগুলি ৷ রীতিমতো তাসের ঘরের মতো ভেঙে গিয়েছিল তিস্তা পারের ঘরগুলি ৷ তিস্তার বর্তমান রূপ সেই দৃশ্যেরই কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে ৷ এর আগে কখনও বর্ষার শুরুতে এমনভাবে ফুলে ফেঁপে উঠতে দেখা যায়নি তিস্তা নদীকে । উত্তরবঙ্গে এমনও বৃষ্টি হয়নি যে তিস্তা এমন রূপ ধারণ করবে । তাহলে কেন তিস্তার এই ভয়াল রূপ ?
শুধুমাত্র সিকিমে বর্ষার জেরে তিস্তার এমন রূপের নেপথ্যে অন্য কারণ দেখছেন পরিবেশবিদরা । গত অক্টোবরের বাঁধ ভাঙা হড়পা বানই এর জন্য দায়ী হতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা । আবার সেবক-রংপো রেলপথ নির্মাণের জন্য তৈরি সুরঙ্গকেও দায়ী করছেন পরিবেশবিদদের একাংশ । উত্তর সিকিমে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে প্রায় 223 মিলিমিটার এবং দক্ষিণ সিকিমে হয়েছে 120 মিলিমিটার । আগামী দু'দিন আরও বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে গ্যাংটক আবহাওয়া দফতর । ফলে এই অবস্থায় আরও বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি বেগতিক হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে ।
এদিকে, তিস্তার জলস্ফীতির কারণে বন্যা পরিস্থিতি তিস্তা, মাল্লি, গেইলখোলা, 29 মাইল-সহ একাধিক জায়গায় । জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ডুয়ার্সেও । বিশেষ করে মালবাজার, রাজগঞ্জ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা ইতিমধ্যে জলমগ্ন হতে শুরু করেছে । শিলিগুড়ি কলেজের ভূগোলের অধ্যাপক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, "গত অক্টোবরের হড়পা বানে উত্তর সিকিমে চুংথাং বাঁধ ভেঙে তিস্তা যে ধ্বংসাত্মক রূপ নিয়েছিল তা অন্যতম কারণ হতে পারে । সেই সময় তিস্তা প্রচুর পরিমাণে পলি, পাথর স্রোতের সঙ্গে নিয়ে আসে ৷ যা নদীগর্ভে ও নদীখাতে জমা হয়ে যায় । আবার অন্যদিকে, সেবক-রংপো রেলপ্রকল্পে সুরঙ্গ নির্মাণের সময় যে পাথর ও মাটি জমা হয়, তা নদীপারে তুলে রাখা হয়েছিল ৷ আর তিস্তার স্রোতে সেগুলো নদীগর্ভে জমেছে । ফলে অল্প বৃষ্টিতেই তিস্তার জল উপরে উঠে এসে বন্যার রূপ নিচ্ছে ।"
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক রঞ্জন রায় বলেন, "গত বন্যায় তিস্তা গর্ভে অনেক পলি জমে যায় । ফলে স্বাভাবিকভাবে নদীর গভীরতা অনেকটাই কমে গিয়েছে । যে কারণে সিকিমে বর্ষার ফলে এবার তিস্তা অল্পতেই ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে ৷ এখন সেরকম ভরা বর্ষাকাল নয় । আর সিকিমে এমন কিছু বৃষ্টি হয়নি যে তিস্তার জলস্তর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাবে । কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হল, এখনই বর্ষার আগে তিস্তার যা পরিস্থিতি তাতে ভরা বর্ষায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতেই পারে ।"