শিলিগুড়ি, 17 জুন: ব্যাপক প্রতিকূল আবহাওয়া সঙ্গে টানা ধস ৷ সবমিলিয়ে বিঘ্নিত সিকিমে আটকে পড়া পর্যটকদের উদ্ধারকাজ। সোমবার থেকে উদ্ধার কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে গেল আবারও ৷ মঙ্গলবার থেকে উদ্ধারকাজ শুরু হবে বলে রবিবার রাতে জানানো হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। যে সকল পর্যটকরা এখনও সিকিমে আটকে রয়েছেন, আগামী 24 ঘণ্টা তাঁদের সেখানেই নিরাপদে থাকার পরামর্শ দিয়েছে সিকিম প্রশাসন। সেইসঙ্গে পর্যটকদের যাতে কোনও অসুবিধা না-হয় সেজন্য হোম স্টে, হোটেল মালিক ও ট্যুর অপারেটরদেরও কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সিকিম সরকার।
সিকিম প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছ, মঙ্গলবার আবহাওয়ার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে উদ্ধারকাজ শুরু হবে। প্রশাসনের ঘোষণায় আরও বেশি আতঙ্ক ছড়িয়েছে পর্যটকদের মধ্যে। ব্যাপক উৎকণ্ঠায় প্রতিটি মুহূর্ত কাটাচ্ছেন পর্যটকরা ৷ কারও ওষুধ তো কারও কাছে অর্থ নিঃশেষিত। মোবাইলের নেটওয়ার্কও না-থাকায় যোগের ক্ষেত্রেও সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে । উত্তর সিকিমে আটকে থাকা পর্যটকদের মধ্যে রয়েছে প্রায় শতাধিক শিশু ও বয়স্ক মানুষ। রবিবার ইয়াংগাং এলাকার বন্যা ও ধস কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং। তারপর উদ্ধারকাজ নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক সারেন তিনি।
প্রসঙ্গত, টানা বৃষ্টিতে পর্যটকদের এয়ারলিফটে করে উদ্ধারের কথা ছিল বায়ুসেনার। কিন্তু পাহাড়ে টানা বৃষ্টি ও প্রতিকূল পরিবেশের কারণে এয়ারলিফট করা কোনওভাবে সম্ভব নয়। এরপর সিকিম প্রশাসন রবিবার সকালে ট্রাভেল এজেন্ট, হোটেল মালিক ও ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক করে ৷ মন্ত্রী সামদুপ লেপচা, সড়ক ও সেতুর মন্ত্রী এনবি দাহাল, চুংথাংয়ের মহকুমাশাসক কিরণ থাটাল, ট্রাভেল এজেন্টস এসোসিয়েশন অফ সিকিম সহ অন্যান্য পর্যটন সংস্থার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকের পরই আটকে থাকা পর্যটকদের টুং হয়ে মঙ্গন পর্যন্ত পায়ে হেঁটে নিয়ে আসার কথা জানানো হয়েছে । মঙ্গন থেকে ছোট ছোট গাড়িতে করে পর্যটকদের গ্যাংটকে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু আবহাওয়ার কারণে তা-ও সম্ভব হয়নি । তার উপর পাহাড়ের একাধিক জায়গায় নতুন করে ধসে নামে। সমস্ত পরিস্থিতি বিরূপ হওয়ায় সোমবার শুরু করা যায়নি উদ্ধারকাজ ৷
এই বিষয়ে চুংথাংয়ের মহকুমাশাসক কিরণ থাটাল বলেন, "পর্যটকদের স্বার্থে খুব কম দামে লাভ না রেখে হোটেল মালিকদের খাবার ও পানীয় জল দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি কোনও পর্যটকের অসুবিধা হয় তবে তারা যেন লাচুং থানায় অভিযোগ দায়ের করে । কোথাও রেশনের ঘাটতি হলে স্থানীয় প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ সেইসঙ্গে কোনও হোটেল মালিক যেন পর্যটকদের খালি করতে না বলে। এই সমস্ত নির্দেশ না-মানা হলে বিপর্যয় মোকাবিলা ধারায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হবে।"
মন্ত্রী সামদুপ লেপচা বলেন, "পর্যটকদের সবরকম সহযোগিতার জন্য যুবদের, স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য, কাউন্সিলার, বা অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে বলা হয়েছে।" ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অফ সিকিম সভাপতি রমেশ বাসনেট বলেন, "টুং হয়ে মঙ্গন হেঁটে যেতে হবে পর্যটকদের। পর্যটকদের মধ্যে অনেক শিশু ও বয়স্করা রয়েছে । সেজন্য কোনওরকম ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। সে কারণে উদ্ধারকাজ একদিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে ।"