বর্ধমান, 21 অগস্ট: তিনি ডা. আরজি করের বংশধর । ফলে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় তাঁরা রীতিমতো লজ্জিত ও ব্যথিত । ইটিভি ভারতের কাছে একথা জানালেন ডা. আরজি করের বংশধর সত্যজিৎ কর । তিনি বলেন, তাঁদের পরিবার চায় দোষীদের যেন চরম শাস্তি হয় । আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুনাম যেন আর কালিমালিপ্ত না-হয় ।
1886 সালে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন ডা. রাধাগোবিন্দ কর (ডা. আরজি কর)। তখন ইংরেজ আমল । হাওড়ার রাম রাজাতলা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন তাঁরা । ডাক্তারি পড়তে আরজি কর যান এডিনবরা । সেখান থেকে ডাক্তারি পাশ করে দেশে ফিরে আসেন তিনি । বিদেশেই তিনি ডাক্তারি করার সুযোগ পেয়েছিলেন । কিন্তু সাধারণ মানুষের সেবা করার জন্য দেশে ফিরে আসেন । আগামী প্রজন্ম যাতে কলকাতা থেকে ডাক্তারি পাশ করে সফল হতে পারেন, সেই চিন্তাভাবনা করে কলকাতায় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল গড়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর ৷ সেই স্বপ্ন সফল করতেই কলকাতায় গড়ে তোলেন আরজি কর হাসপাতাল । সেই সময় তিনি নিজে সাইকেলে চেপে রোগী দেখতে যেতেন । ইংরেজ আমলেও তাঁর বেশ নামডাক হয়েছিল । পরবর্তীকালে তাঁর পরিবারের অনেকেই ডাক্তারি পাশ করেছেন এই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ থেকে ।
সেই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় যেভাবে কালিমালিপ্ত হল হাসপাতাল, তা মেনে নিতে পারছেন না বংশধরেরা । তাই তাঁরা চাইছেন দোষীরা যেন কঠিন সাজা পায় । যাতে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল তার সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখে এগিয়ে চলতে পারে ।
ডা. আরজি করের বংশধর সত্যজিৎ কর । তিনি চতুর্থ প্রজন্ম । হাওড়ায় একটা বেসরকারি সংস্থায় তিনি কর্মরত । এই ঘটনায় তিনি রীতিমতো লজ্জিত ৷ তিনি বলেন, "আমরা চতুর্থ পুরুষ । আরজি কর মানে তো রাধাগোবিন্দ কর । ওঁর হাতে তৈরি করা প্রতিষ্ঠান । তিনি আজ বেঁচে থাকলে খুবই কষ্ট পেতেন । এটা একটা নিন্দনীয় ব্যাপার । আমাদের পরিবারের তরফে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি । আমরা এর সুবিচার চাইছি ।"
তিনি জানান, "ডা. রাধাগোবিন্দ কর এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক্তারি পাশ করেন । তাঁর কাছে প্রস্তাব ও সুযোগ ছিল বিদেশে চিকিৎসা করার জন্য । কিন্তু তিনি নিজের দেশকে ভালোবেসে সাধারণ মানুষের সেবা করার জন্য দেশে ফিরে আসেন । তাঁর লক্ষ্য ছিল, কলকাতায় হাসপাতাল গড়ে সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া । হাওড়ার রাম রাজাতলায় তাঁর বসতবাড়ি ছিল । সেই বাড়িতেই আমরা থাকি । তাঁর মনের ইচ্ছা ছিল এশিয়ার বুকে একটা মেডিক্যাল কলেজ তৈরি করা, যাতে ছেলেমেয়েরা সেখানে সুযোগ পেয়ে ভালো চিকিৎসক হতে পারেন । শ্যামবাজার থেকে সাইকেলে চেপে চিকিৎসা করতে যেতেন তিনি ।"
আরজি করের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, "আমাদের পরিবারের তরফে এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি । যারা ঘটনায় যুক্ত তাদের শাস্তি হওয়া উচিত । একটা প্রোটেকটিভ এরিয়াতে একজন মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হচ্ছে, এটা তো ভাবা যায় না । এটা তো কাম্য নয় । আমাদের পরিবারের অনেকেই ডাক্তার হয়েছেন । তাঁরাও আরজি কর থেকে পাশ করেছিলেন । আমরা চাইছি আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুনাম যেন অক্ষুণ্ণ থাকে । আরজি কর যেন আরজি করের মতোই থাকে । তার কালিমা যেন মুছে যায় । তার সুনাম ফিরে আসুক । আর দোষীদের যেন কঠিন শাস্তি হয় ।"