বসিরহাট, 23 অগস্ট: আরজি কর-কাণ্ডের পর স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে নিরাপত্তার প্রশ্নে তোলপাড় গোটা দেশ ৷ সেই আবহেই চিকিৎসার গাফিলতিতে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ ঘিরে শুক্রবার ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হল বসিরহাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ৷ হুমকি, ভাঙচুর, চিকিৎসক-নার্স নিগ্রহ, স্বাস্থ্যকর্মীদের মারধর কিছুই বাদ গেল না ! অভিযোগ, মৃতের পরিবারের লোকজনের হাতে আক্রান্ত হলেন হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীরাও ৷
শুক্রবার বেলা সাড়ে 12টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে ৷ পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, হাসপাতাল চত্বরে র্যাফ মোতায়েন করা হয় ৷ নামানো হয় রাজ্য পুলিশের কমব্যাট ফোর্স ৷ তারপরে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে ৷ ঘটনায় চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা আহত হয়েছেন ৷ হাসপাতালের ভিতরে থাকা কম্পিউটার-সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ভাঙচুর করা হয়েছে ৷ দিনের আলোয় প্রকাশ্যে এভাবে হাসপাতালে ঢুকে রোগীর পরিবারের তাণ্ডবের জেরে, ফের রাজ্যের হাসপাতালগুলির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সকলে ৷ ঘটনার পর নিরাপত্তার অভাববোধ করতে শুরু করেছেন তাঁরা ৷ পুলিশ পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু করলেও কারওকেই গ্রেফতার করতে পারেনি ৷
আরজি কর-কাণ্ডে সুবিচার চেয়ে রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলিতে চলছে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি ৷ সুপ্রিম কোর্টের আবেদন সত্ত্বেও কর্মবিরতি থেকে সরে আসতে নারাজ আন্দোলনকারীরা ৷ তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি সুনিশ্চিত করাই মূল দাবি ৷ যার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক চিকিৎসা পরিষেবা মিলছে না বলে অভিযোগ ৷ এর জেরে হয়রানির মুখেও পড়তে হচ্ছে রোগী এবং তাঁর আত্মীয় পরিজনকে ৷
ইতিমধ্যে কলকাতার ও জেলার হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসা পরিষেবা না পেয়ে রোগী মৃত্যুর অভিযোগও উঠেছে ৷ সেই পরিস্থিতিতে বসিরহাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসার গাফিলতিতে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে ৷ যদিও, সেই অভিযোগ মানতে নারাজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৷
হাসপাতালের তরফে বলা হয়েছে, "সামাদ মণ্ডল নামে ওই রোগীর অবস্থা আগে থেকেই খারাপ ছিল ৷ আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল বসিরহাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ৷ চিকিৎসা চলার সময় রোগীর শারীরিক অবস্থার কথা জানানোও হয়েছিল পরিবারের লোকজনকে ৷ তা সত্ত্বেও পরিকল্পিতভাবে তাঁরা হাসপাতালে ঢুকে ভাঙচুর ও স্টাফদের মারধর করেছেন ৷"
জানা গিয়েছে, সামাদ মণ্ডল নামে বছর 35-র ওই যুবকের বাড়ি বাদুড়িয়ার রামচন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের নারকেলবেড়িয়া গ্রামে ৷ দীর্ঘদিন ধরেই তিনি হৃৎপিণ্ড ও বুকে ব্যাথার সমস্যায় ভুগছিলেন ৷ সেই সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার তাঁকে ভর্তি করা হয় বসিরহাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ৷ সেখানেই পুরুষদের মেডিক্যাল ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছিল তাঁর ৷ শুক্রবার সকালে হঠাৎই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় ৷ সকাল 10টা 15 মিনিটে মৃত্যু হয় ওই যুবকের ৷
সেই খবর পেয়ে রোগীর পরিবার হাসপাতালে ঢুকে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের হুমকি দেয় বলে অভিযোগ ৷ হাসপাতালের সিস্টার ইনচার্জ অভিযোগ করেছেন, "রোগী মারা যাওয়ার খবর পেতেই, পরিবারের সদস্যরা আধঘণ্টার মধ্যে দেহ ছেড়ে দেওয়ার জন্য হুমকি দেয় ৷ বলা হয়, তা না হলে লোকজন এনে হামলা করা হবে ৷ আমরা বিষয়টা সুপার স্যরকে জানাই ৷ উনি রোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে, তাঁদের বুঝিয়ে শান্ত করেন ৷ নিয়ম মেনে আমরা 3 ঘণ্টা পর দেহ ছেড়ে দিই ৷"
কিন্তু, তারপরেও পরিস্থিতি কেন অশান্ত হল ? সিস্টার ইনচার্জের অভিযোগ, "দেহ ছেড়ে দেওয়ার 10-15 মিনিট পর 25-30 জন হাসপাতালে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করেন ৷ ওয়ার্ড বয়, ডাক্তার অন্যান্য নার্স সবার উপরে হামলা চালায় ৷ আমার সিকিউরিটিরা কোনও মতে আমাকে বাঁচিয়ে নেন ৷ তার পরেও আমাকে মারধর করেছে, জামা ছিঁড়ে গিয়েছে আমার ৷" এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন ওয়ার্ড বয় আহত হয়েছেন ৷ এমনকি কয়েকজন রোগীও আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ ৷