বাঁকুড়া, 10 নভেম্বর: দুর্গাপুজোর পর যখন বাংলা মেতে জগদ্ধাত্রীর আরাধনায়, তখন বাঁকুড়ার এক প্রত্যন্ত গ্রামে আড়ম্বরের সঙ্গে পূজিত হচ্ছেন দেবর্ষি নারদ ৷ এমনই ছবি ধরা পড়ল রতনপুর গ্রামে ৷
কথিত আছে, দেবর্ষি নারদ স্বর্গের বিভিন্ন দেব-দেবীর বার্তাবাহক । তিনি সবার কথা নাকি দেবতাদের কানে পৌঁছে দেন । সেই ভাবনা থেকেই গ্রামের শিক্ষিত কিছু বেকার যুবক সিদ্ধান্ত নেন, তাঁরা নারদ মুনির মাধ্যমে তাঁদের বেকারত্বের যন্ত্রণার কথা জানাবেন দেবতাদের । যেমন ভাবা, তেমন কাজ । এরপর বাঁকুড়া দু'নম্বর ব্লকের অন্তর্গত রতনপুর গ্রামের ওই যুবকরা মিলে দশ বছর আগে শুরু করেন নারদ মুনির আরাধনা ।
সেই থেকে আজ পর্যন্ত রতনপুর গ্রামে নিয়ম-নিষ্ঠার সঙ্গে চলে আসছে দেবর্ষি নারদের পুজো ৷ গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, এই নারদ পুজো করার ফলও নাকি মিলেছে হাতেনাতে ৷ গ্রামের অনেক যুবকেরই নাকি সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান হয়েছে । এরপর থেকেই গ্রামের মানুষের বিশ্বাস ও আর ভরসা ক্রমশ বেড়ে চলেছে ৷ তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বছর বছর বাড়ছে নারদ পুজোর জৌলুস ৷
নারদ পুজোর উদ্যোক্তা অভয় রানা বলেন, "2014 সালে প্রথম শুরু হয়েছিল এই পুজো । প্রথমে, বার্তা পৌঁছে দেবেন নারদ এই বিশ্বাস নিয়ে পুজো শুরু হয়েছিল, এখন এই পুজো গ্রামবাসীদের কাছে একটা উৎসবের চেহারা নিয়েছে । এখন এই পুজো উপলক্ষে নরনারায়ণ সেবা করানো হয় ৷ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় ৷ পাশাপাশি বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ মেতে ওঠেন পুজোয় । পুজোকে ঘিরে মেলা বসে ৷"
পুজো উদ্যোক্তাদের তরফ থেকে এও জানা গিয়েছে, আগে নারদ পুজো তিনদিন করা হত । দিন দিন চাহিদা বাড়তে থাকায় এখন সেই পুজোকে পাঁচ দিন করা হয়েছে । নারদ পুজোকে কেন্দ্র করে পাঁচ দিন ধরে এই গ্রামে বসে মেলা । চলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান । সঙ্গে পুরো গ্রাম সেজে ওঠে রঙিন ঝলমলে আলোকমালায় । দুর্গাপুজো, গণেশ পুজো এবং কালীপুজোর মতোই এই নারদ পুজোকে কেন্দ্র করে মেতে ওঠে রতনপুর এবং পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েকটি গ্রাম ।
দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন পুজো ও মেলা দেখতে আসেন ৷ তেমনই দু'জন আগত দর্শনার্থী দীপা গড়াই ও রুম্পা শীটের কথায়, "কোনওদিন নারদ পুজো দেখিনি ৷ এই প্রথম রতনপুর গ্রামে পুজো দেখতে এলাম ৷ মেলাও বসেছে ৷ খুব ভালো লাগছে এখানে এসে ৷ প্রত্যেক বছর এবার থেকে পরিবারকে নিয়ে এখানে আসব ৷"