দুর্গাপুর, 16 জুন: 'বামের ভোট রামে যাচ্ছে' ৷ 2019-এর লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে এমন অভিযোগ উঠে এসেছে এই রাজ্যের শাসক দলের নেতাদের মুখে। এবার সেই সত্য স্বীকার করে তৃণমূল কংগ্রেসের যোগদান করলেন পশ্চিম বর্ধমান জেলা সিপিএমের নেতা পঙ্কজ রায় সরকার ৷ তিনি বলেন, "বামেদের ভোট কেন বিজেপিতে যাচ্ছে ? এই নিয়ে সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাতদের সামনে প্রতিবাদ করলেও তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।"
প্রাক্তন ওই সিপিএম নেতার কথায়, "সারা দেশ জুড়ে বামপন্থী দল সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করবে, আবার একশ্রেণীর নেতারা গোপনে বিজেপির সঙ্গে আঁতাত করবে, এটা মেনে নিয়ে কি দলে থাকা যায় ? সেই জন্যই দল ছেড়েছি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছি।" রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, প্রদীপ মজুমদারের হাত ধরে রবিবার তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন পশ্চিম বর্ধমান জেলার সিপিএম শ্রমিক সংগঠন সিটু'র সম্পাদক পঙ্কজ রায় সরকার।
পঙ্কজ রায় সরকারের শুরুটা হয়েছিল সিপিএম-এর ছাত্র সংগঠন এসএফআই থেকে। তারপর যুব সংগঠন, তারপর জেলা এবং রাজ্যস্তরেও জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। একসময় সিপিএম-র পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য পদও পান তিনি ৷ পঙ্কজ রায় তৃণমূলে যোগদানের পর দাবি করেন, "কমিউনিস্ট পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী হওয়ার জন্য আমি ইস্টার্ন কোলফিল্ড লিমিটেডের চাকরিও ছেড়ে দিয়েছি। 15 বছরের বেশি চাকরি ছিল আমার। আমি পার্টির জন্য সেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম।" কয়েকদিন ধরে জেলা জুড়ে পঙ্কজ রায় সরকার তৃণমূলে যোগদান করতে চলেছেন এই নিয়েও জোর জল্পনা শুরু হয়েছিল।
এদিন সকালে পশ্চিম বর্ধমান জেলা সিপিএমের সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে পঙ্কজ রায় সরকারকে বহিষ্কারের কথা জানান ৷ তিনি বলেন, "দলবিরোধী কাজ এবং দলের রণকৌশলের বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। তৃণমূলের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগও রেখেছিলেন।" আর এদিনই বিকেলে দুর্গাপুরের অরবিন্দ এভিনিউতে জেলা তৃণমূলের কার্যালয়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন পঙ্কজ রায় সরকার।
এদিন বামদল প্রসঙ্গে পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, "কেন্দ্রীয় নেতা সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাতদের সামনে বলেছিলাম বামের ভোট রামে যাচ্ছে কারণ বামের মধ্যেই রয়েছে রামের নেতা। কিন্তু তারপরেও কোনও ব্যবস্থা তো নেওয়াই হয়নি, বরং বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই বামপন্থী দল সাম্প্রদায়িক নেতাদের নিয়ে লড়াইয়ে নামবে সেটা মেনে নিতে পারিনি। আইএসএফ আর কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের জন্যও বামপন্থীদের উপর আস্থা হারাচ্ছিল মানুষ।"
রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর কর্মযজ্ঞে সামিল হয়েছেন পঙ্কজ, পাশাপাশি 1200 জন সিপিএম শ্রমিক সংগঠনের কর্মী সমর্থক। বিজেপির অনেক বড় বড় নেতা সিপিএমের বড় বড় নেতারা তৃণমূলে আসছেন। দল যাকে যাকে বলছে তাকে তাকে আমরা দলে নিচ্ছি।"