জলপাইগুড়ি, 4 জানুয়ারি: রাজ্যের প্রথম লুপ সেতু তৈরি হচ্ছে জলপাইগুড়ির ডুয়ার্সের বাগরাকোটে ৷ যদিও সেতুটি এখনও জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি ৷ তবে রাস্তার মাঝে সর্পিল আকারে নির্মীয়মাণ লুপ সেতুটি দেখতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইতিমধ্যে বাগরাকোটে ভিড় জমাচ্ছেন পর্যটকরা ৷
শুধু সেতু নয়, সামরিক বাহিনীর প্রয়োজনে নির্মীয়মাণ রাস্তাও পর্যটকদের আকর্ষণের আর এক কেন্দ্রবিন্দু । বেশ কয়েক বছর ধরে জলপাইগুড়ি জেলার বাগরাকোট থেকে নাথুলা পর্যন্ত দুই লেনের এই রাস্তা তৈরি হচ্ছে ৷ এই রাস্তা সিকিমের সঙ্গে যুক্ত করবে পশ্চিমবঙ্গকে ৷ বাগরাকোট থেকে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের সামনের রাস্তা দিয়ে সামান্য গেলেই নতুন 717 নম্বর জাতীয় সড়কের এই রাস্তা । আগামিদিনে সেনার ভারত-চিন সীমান্তে যুদ্ধ সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়া বা যাতায়াতের জন্য এটি মূল রাস্তা হতে চলেছে ।
ডুয়ার্স বা শিলিগুড়ি থেকে সিকিম যাওয়ার বিকল্প রুট হিসেবে এই রাস্তাটি ভারত সরকারের সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে । সেভক বা 10 নম্বর জাতীয় সড়কের বিকল্প রাস্তা হবে এটি ৷ বাগরাকোট দিয়ে নাথুলা পর্যন্ত এই রাস্তাটি হাসিমারা ও বিন্নাগুড়ি সেনা ছাউনিকে যুক্ত করবে । একইসঙ্গে বাগরাকোট ডামডিম এলাকায় রেললাইনের উপর একটি বড় সেতুও তৈরি করা হচ্ছে । সব মিলিয়ে নাথুলা সীমান্তে চিনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বিকল্প রাস্তা হিসেবে ভারত সরকার এটি তৈরি করছে বলে জানা গিয়েছে ।
শিলিগুড়ি থেকে সেভক হয়ে 10 নম্বর জাতীয় সড়ক এতদিন ছিল বাংলা ও সিকিমের লাইফ লাইন ৷ তবে উত্তরবঙ্গ থেকে সিকিম যাওয়ার ওই রাস্তা মাঝেমধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় । এর কারণ তিস্তার ভাঙন ও ধস ৷ এতদিন ওটি ছিল সোনাবাহিনীর পরিবহণের একমাত্র রাস্তা । সীমান্তে চিনের আগ্রাসনের ফলে মাঝেমধ্যেই উত্তেজনা ছড়ায় । তাই 10 নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে গেলে দেশের সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় । সেই দিক থেকে বাগরাকোট থেকে নাথুলা পর্যন্ত এই রাস্তাটি হওয়ার ফলে এবার থেকে সামরিক পরিবহণের ক্ষেত্রে সুবিধা হবে । সেনার কাছে একটি বিকল্প রাস্তা থাকবে ৷
জলপাইগুড়ি জেলার বাগরাকোট থেকে প্রথম 18 কিলোমিটারের মধ্যে 12-14 কিলোমিটার রাস্তা পাহাড় কেটে তৈরি করা হচ্ছে । প্রথম 18 কিলোমিটার রাস্তার বরাত পেয়েছে ঝাড়খণ্ডের একটা সংস্থা । বাগরাকোট থেকে লুপ সেতুর দূরত্ব 4-5 কিলোমিটার । ছয় বছর ধরে 45 মিস্ত্রী ও শ্রমিক মিলে 350 জন কাজ করে চলেছেন এই সেতু তৈরির । দু’টি ভাগে সেতু রয়েছে ৷ একটির দৈর্ঘ্য 900 মিটার ও অপরটির 400 ও 500 মিটার ৷
বাগরাকোট থেকে 717 নম্বর জাতীয় সড়কটি ভারত-চিন সীমান্তে নাথুলা পর্যন্ত যাবে । পাহাড় কেটে রাস্তাটি 2018-2019 সাল থেকে তৈরি করা হচ্ছে । এই জাতীয় সড়কটির জলপাইগুড়ি জেলার বাগরাকোট থেকে চুইখিম 13 কিলোমিটার রাস্তার মাঝে বাগরাকোট চুইখিমে লুপ পুলটি তৈরি হয়েছে । বাগরাকোট থেকে চার কিলোমিটার দূরেই এই লুপ সেতুটি তৈরি হয়েছে, যা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ।
জলপাইগুড়ি জেলার বাগরাকোট থেকে চুইখিম, দাড়াগাও, বরবর হয়ে কাফের হয়ে কালিম্পং বাইপাস হয়ে আলগারা, ঋষি পেডং, রোরাথাং পাকয়াং এয়ারপোর্টের পাশ দিয়ে রানিপুল হয়ে ভারত-চিন সীমান্ত নাথুলা পর্যন্ত দুই লেনের জাতীয় সড়কটি যাবে । ন্যাশনাল হাইওয়ে অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড 717 নম্বর জাতীয় সড়কটি নির্মাণ করছে । জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, পাকয়াং ও গ্যাংটক জেলাকে জুড়বে এই জাতীয় সড়কটি । এই জাতীয় সড়কটি প্রায় 200 কিলোমিটার লম্বা ।
বাগরাকোট লুপ পুল দেখতে আসা পর্যটক তুষার রাউত বলেন, "বাগরাকোট লুপ সেতুটি দেখতে অপূর্ব । আজ দেখতে এলাম খুব ভালো লাগছে । দুটো সেতু হয়েছে । গাড়ি চালিয়ে আনন্দ পাওয়া যায় । উত্তরবঙ্গে এই প্রথম লুপ সেতু । এই রাস্তাটি আগামী দিনে পর্যটন মানচিত্রে একটা জায়গা করে নেবে । এই রাস্তা দিয়েই সিকিম আমরা যেতে পারব ।"
পর্যটক শঙ্কর মজুমদারের কথায়, "রাস্তা ও সেতু তৈরি হওয়ায় এদিকের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই উন্নত হবে । সামরিক পরিবহণের ক্ষেত্রে এই রাস্তাটি গুরুত্বপূর্ণ হবে ৷ এই রাস্তাটি ভারত-চিন সীমান্ত নাথুলা পর্যন্ত যাবে । বর্ডার সিকিউরিটির ক্ষেত্রে এই রাস্তাটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ হবে ৷ তেমনই এখানকার নতুন পর্যটনস্থল হবে এই লুপ সেতুটি ।"
শিলিগুড়ির বাসিন্দা তনুশ্রী মজুমদারের বক্তব্য, "এত সুন্দর সেতু এদিকে নেই । এই রাস্তাটি হয়ে যাওয়ার ফলে প্রচুর পর্যটক ঘুরতে আসবে এখানে । তিস্তার ভাঙনের ফলে আমাদের 10 নম্বর জাতীয় সড়ক মাঝে মধ্যে খারাপ হয়ে যায় ।" বাগরাকোটে আসা পর্যটক সালমা বেগম, হেনা পারভিন ও সাগর রাই বলেন, "এই বাগরাকোট লুপ সেতুটি দেখতে প্রচুর মানুষ আসছে । আমরাও ঘুরতে এলাম । আগামীতেও প্রচুর মানুষ আসবে ।"
নতুন এই জাতীয় সড়কের সাইট ইনচার্জ মুস্তাফা আলম বলেন, "ভারত-চিন সীমান্ত পর্যন্ত এই রাস্তাটি যাবে । প্রচুর মানুষ আসছে এই সেতুটি দেখার জন্য । বিগত 6 বছর ধরে আমরা কাজ করছি । উত্তরবঙ্গে এই ধরনের সেতু আর নেই । তাই প্রচুর মানুষ দেখতে আসছে । ভিড় ঠেকাতে পুলিশ থাকছে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ।"