বসিরহাট, 1 ফেব্রুয়ারি: শ্যালিকার নাবালিকা মেয়েকে লাগাতার ধর্ষণের কথা জেনে ফেলেছিলেন স্ত্রী । সেই কারণে স্বামীর হাতে খুন হতে হয়েছিল তাঁকে । আপাতত খুনের মামলায় ছয় বছর পরে সাজা ঘোষণা হল আসামির ।
শনিবার দোষী সাব্যস্ত ওই ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন বসিরহাট মহকুমা আদালতের বিচারক । সেই সঙ্গে 10 হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে আদালত । সাজা শুনে আদালত চত্বরেই কান্নায় ভেঙে পড়ে আসামি । কাঁদতে কাঁদতেই অপরাধের কথা অস্বীকার করে সে ।
আদালত সূত্রে খবর, ঘটনাটি ঘটেছে 2018 সালের 8 এপ্রিল । বাদুড়িয়া থানার যদুরহাটি এলাকার বাসিন্দা ওই ব্যক্তি তার স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে খুন করে । অভিযোগ, স্বামীর কুকর্মের কথা জেনে ফেলায় সেদিন খুন হতে হয়েছিল ওই মহিলাকে ৷
জানা যায়, ওই ব্যক্তির শ্যালক ও শ্যালিকা কাজের সূত্রে ভিনরাজ্যে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান । তাঁদের কোনও হদিস না মেলায় ওই দম্পতির নাবালিকা মেয়েকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন মামা ৷ চার বছর বয়স থেকে সাত বছর বয়স পর্যন্ত মেয়েটি মামার বাড়িতেই ছিল ।
এরপর ওই নাবালিকাকে মাসি (খুন হয়ে যাওয়া মহিলা) নিজের বাড়িতে নিয়ে যান । সন্তানস্নেহে ওই নাবালিকাকে বড় করছিলেন তিনি । মেয়েটির বয়স যখন 11 বছর, তখন তাঁর উপর কুনজর পড়ে মেসোর । ওই মহিলা জানতে পারেন বোনঝির উপর শারীরিক নির্যাতন চলছে । অভিযুক্ত আর কেউ নন, তাঁর স্বামী । নাবালিকা সব খুলে বলার পরে চমকে গিয়েছিলেন ওই মহিলা ।
কারণ, দীর্ঘদিন ধরে শ্যালিকার মেয়েকে ধর্ষণ ও হুমকি দিয়ে আসছিল ওই ব্যক্তি । এর পরই ওই মহিলা ও তাঁর স্বামীর মধ্যে অশান্তি শুরু হয় । স্বামীকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন ওই মহিলা । তখনই স্ত্রীকে গলা টিপে খুন করে ওই ব্যক্তি । ঘটনার পরদিনই পুলিশের হাতে ধরা পড়েন অভিযুক্ত ।
তাঁর বিরুদ্ধে দু’টো মামলা রুজু হয় । একটি নাবালিকাকে ধর্ষণ, অন্যটি স্ত্রীকে খুনের । এত দিন বসিরহাট আদালতে দু’টি মামলারই বিচার চলছিল । সেই মামলায় শুক্রবার জামশেদকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক । শনিবার তাঁর যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা হল বসিরহাট মহকুমা আদালতে । পকসো মামলাটি এখনও বিচারাধীন ।
এই বিষয়ে মামলার সরকারি আইনজীবী গোলাম মোস্তফা বলেন, "মেয়েটিকে প্রায় তিন মাস ধরে ধর্ষণ করে আসছিল অভিযুক্ত মেসো । তা দেখে ফেলায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি শুরু হয় । এরপরই স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে খুন করে সে । পকসো মামলাটি এই ঘটনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত । সেটি এখনও পকসো আদালতে বিচার চলছে । সেটিরও সাজা ঘোষণা হওয়া বাকি রয়েছে ।"