ETV Bharat / state

স্ত্রীর ক্যানসারের চিকিৎসায় মুম্বই যাচ্ছিলেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় আতঙ্কে বলাগড়ের দম্পতি - HOWRAH MUMBAI TRAIN ACCIDENT

Howrah Mumbai CSMT Express Accident: রাজখরসাওয়ান রেলওয়ে স্টেশনের কাছে ভোররাতে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে হাওড়া-মুম্বই সিএসএমটি এক্সপ্রেস ৷ এই রেল দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন হুগলির বলাগড়ের হালদার দম্পতি ৷ কী ঘটেছিল ? দুর্ঘটনার পরের পরিস্থিতি কেমন ছিল ? সেই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন হালদার দম্পতি ৷

ETV BHARAT
হাওড়া-মুম্বই সিএসএমটি এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার কবলে বলাগড়ের বিশ্বাস দম্পতি (ডানদিকে) ৷ (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jul 30, 2024, 2:17 PM IST

সরায়কেলা, 30 জুলাই: ঘড়ি কাঁটায় তখন 3টে 35 বেজে গিয়েছে ৷ হাওড়া-মুম্বই সিএসএমটি এক্সপ্রেসের গতি তখন প্রায় 110 কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা ৷ ভোররাতে তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন যাত্রীরা ৷ ঝড়খণ্ডের চক্রধরপুর ডিভিশনে রাজখরসাওয়ান রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রায় 22 কিলোমিটার দূরে হঠাৎই তীব্র ঝাঁকুনি ৷ আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সব শান্ত ৷ তবে, এর মধ্যে কামে ভেসে আসতে থাকে কান্না ও চিৎকারের শব্দ ৷

কী হয়েছে ? কেন এই চিৎকার ? কীসের কারণ এরকম তীব্র ঝাঁকুনি দিয়ে সব থেমে গেল ? কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না, হুগলির বলাগড়ের খামারগাছির মুক্তকেশি তলার বাসিন্দা শ্যামাপ্রসাদ হালদার ৷ তিনি ওই ট্রেনে এসি বি-2 কামরায় ছিলেন ৷ স্ত্রী অঞ্জনা হালদারের ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য, তাঁকে নিয়ে মুম্বইয়ের টাটা মেডিক্যাল সেন্টারে যাচ্ছিলেন ৷ ইটিভি ভারতকে ভয়াবহ এই রেল দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে, আঁতকে উঠছিলেন শ্যামপ্রসাদ হালদার ৷

তিনি বলেন, "তখন ভোর সারে তিনটে হঠাৎ ঝাঁকুনি আর প্রচণ্ড শব্দে ট্রেনের কামরা হেলে পড়ল ৷ আমরা B-2 কামারায় ছিলাম ৷ আমাদের ট্রেন হাওড়া থেকেই প্রায় 3 ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে ৷ তাই রাতে ট্রেনের গতিও বেশি ছিল ৷ ট্রেনের সকলেই প্রায় ঘুমাচ্ছিলেন ৷ হঠাৎই, বিকট শব্দ ও তীব্র ঝাঁকুনি ৷ সে সব থামার পর ধাতস্ত হতেই বেশ কয়েক মিনিট লেগে গিয়েছিল ৷ তার মধ্যে ট্রেনের আপার বাথে ছিলাম ৷ মাথায় চোট পাই ৷ জানি না কীভাব বেঁচে গেলাম ৷ আমার স্ত্রী মিডলে ছিলেন ৷ তাঁরও চোট লেগেছে ৷ উল্টোদিকের বাথে একজন বয়স্ক ব্যক্তি ছিলেন, তাঁর হাঁটুতেও লেগেছে ৷"

দুর্ঘটনার পরের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, "আমি প্রথমে বার্থ থেকে নেমে, স্ত্রীকে খুঁজতে শুরু করি ৷ তারই মধ্যে লোকজন ট্রেন থেকে নামার চেষ্টা শুরু করে ৷ আমি দেখি আমার স্ত্রী এক পাশে সিঁটিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, ওর চোখেমুখে আতঙ্ক ৷ ওকে নিয়ে আগে ট্রেন থেকে নামাই ৷ বাইরে বেরিয়ে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না, পুরো অন্ধকার ৷ এরপর ফের ট্রেনের ভিতরে যাই আমি ৷ আমাদের ব্যাগ নামিয়ে আনি ৷ আমার ব্যাগে একটা টর্চ ছিল ৷ সেটা আজ এভাবে কাজে লাগবে, ভাবতেও পারিনি ! বাকিদের ট্রেন থেকে নামতে সাহায্য় করি ৷ তার মধ্যে আমাদের বগির অ্যাটেনডেন্টের পা ভেঙে গিয়েছে ৷ রেলের লোকজন ওকে হাসপাতালে নিয়ে যায় ৷"

শ্যামাপ্রসাদ হালদারের বর্ণনায়, "আধঘণ্টা পরে অ্যাম্বুল্যান্সের আওয়াজ পাই ৷ পুলিশও ততক্ষণে চলে এসেছিল ৷ ভোরের আলো ফুটতে দেখি, সামনে থেকে পিছন পর্যন্ত সব বগি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ৷ আর পাশে, 30-40 ফুট গভীর খাদ ৷ আমাদের ট্রেনের বাঁ-দিকে একটা নতুন লাইন হচ্ছে ৷ সেটা উঁচুতে ৷ সেই লাইনের কংক্রিটের রেলিংয়ে আমাদের ট্রেনের বগিগুলি আটকে যায় ৷ তা না হলে, সোজা 40 ফুট গভীর খাদে গিয়ে পড়তাম ৷ সেটা হলে আর আপনাদের সঙ্গে এভাবে কথা বলতে পারতাম না ৷ প্রাণটাই হয়তো এতক্ষণে চলে যেত !"

তিনি বলেন,"আমাদের পুলিশ পিছনের দিকে যেতে দেয়নি ৷ ওদিকের কী অবস্থা ছিল, বলতে পারব না ৷ তবে, পিছনের দিকের বগিগুলির অবস্থা খুব খারাপ ছিল ৷ আমাদের এরপর একটা লোকাল ট্রেনে করে পরের স্টেশনে নিয়ে আসা হয়েছে ৷ এখান থেকে আমাদের মুম্বই যাওয়ার ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ এই ট্রেনেও আমরা বি-2 কামরায় বসে আছি ৷ এখনও সব যাত্রী আসেনি ৷ সবাই এলে আমাদের নিয়ে ট্রেন রওনা দেবে ৷"

কিন্তু, কীভাবে হল এই দুর্ঘটনা ? শ্যামাপ্রসাদ হালদার জানিয়েছেন, "আমি যা শুনলাম, ট্রেনের গতি প্রায় 120 কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা ছিল ৷ আমাদের ট্রেনের পাশে একটা মালগাড়ি রয়েছে ৷ সেটির ওয়াগনগুলি কালো প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকা ৷ কোনওভাবে একটি ওয়াগনের প্লাস্টিক বাঁধা ছিল না ৷ সেটি আমাদের ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে জড়িয়ে যায় ৷ ফলে চালক ভিশন হারিয়ে ফেলেন ৷ তিনি দ্রুত ব্রেক কষতেই মনে হয়, বগিগুলি লাইনচ্যুত হয়েছে ৷ তবে, পুরোটা তদন্ত সাপেক্ষ ৷ তদন্ত না হলে, তো নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাবে না ৷"

তবে, ভারতীয় রেলে যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শ্যামাপ্রসাদ হালদার ৷ তীব্র ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, "রেলের নিরাপত্তা কোন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে ! আগে লোকে রেল মানেই জানত, নিরাপদে গন্তব্য পৌঁছাবে ৷ এখন প্রাণ হাতে নিয়ে ভারতীয় রেলের সফর করতে হচ্ছে ৷ কী দুরাবস্থা আমাদের রেল ব্যবস্থার ! মানুষ ট্রেনে করে দূরদুরান্তে চিকিৎসার জন্য যায়, সুস্থ হতে ৷ কিন্তু, এখন ভাবতে হয়, মাঝপথে প্রাণটা না হারাতে হয় ! এত টাকা দিয়ে লোকজন টিকিট কাটছে ৷ তাহলে নিরাপত্তা কোথায় ? রেলে খালিপদ পড়ে আছে ৷ কিন্তু, লোক নিচ্ছে না ৷ এরা যাত্রীদের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা শুরু করেছে ৷"

অন্যদিকে রেল দুর্ঘটনার খবর পেয়ে, দুঃশ্চিন্তায় হালদার দম্পতির পরিজনরা ৷ দর্ঘটনার পর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন শ্যামাপ্রসাদ এবং অঞ্জনা ৷ জানিয়েছেন, তাঁরা ভালো আছেন এবং মুম্বই যাওয়ার বিকল্প ট্রেনে উঠেছেন ৷ অঞ্জনা হালদার চন্দননগর কমিশনারেটের পুলিশ কর্মী ৷ স্বামীর সঙ্গে মুম্বই যাচ্ছেন চিকিৎসার জন্য ৷ কিন্তু, পথে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতা ৷ যা আজীবন হালদার দম্পতির মনে একটি কালো-অধ্যায় হয়ে থাকবে ৷

তবে, শ্যামাপ্রসাদ হালদার যে প্রশ্ন ও অভিযোগ তুলেছেন, তা কোনওভাবেই এড়িয়ে যাওয়ার নয় ৷ যে ভারতীয় রেলের উপর পুরো দেশবাসীর জীবন-যাপন ও দেশের অর্থনীতির অধিকাংশটাই নির্ভরশীল ৷ সাম্প্রতিক সময়ে সেই রেলের নিরাপত্তা যে তলানিতে এসে ঠেকেছে, তা অস্বীকার করার জায়গা নেই ৷ আর তার জ্বলন্ত উদাহরণ সপ্তাহখানেক আগের গন্ডা রেল দুর্ঘটনা ৷ গত 17 জুন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা ৷ গত একবছরে এমন প্রায় এক ডজনের বেশি রেল দুর্ঘটনার তালিকা বেরিয়ে আসবে ৷ ফলে ভারতীয় রেলের যাত্রী সুরক্ষা যে সত্যিই প্রশ্নের মুখে, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই ৷

সরায়কেলা, 30 জুলাই: ঘড়ি কাঁটায় তখন 3টে 35 বেজে গিয়েছে ৷ হাওড়া-মুম্বই সিএসএমটি এক্সপ্রেসের গতি তখন প্রায় 110 কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা ৷ ভোররাতে তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন যাত্রীরা ৷ ঝড়খণ্ডের চক্রধরপুর ডিভিশনে রাজখরসাওয়ান রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রায় 22 কিলোমিটার দূরে হঠাৎই তীব্র ঝাঁকুনি ৷ আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সব শান্ত ৷ তবে, এর মধ্যে কামে ভেসে আসতে থাকে কান্না ও চিৎকারের শব্দ ৷

কী হয়েছে ? কেন এই চিৎকার ? কীসের কারণ এরকম তীব্র ঝাঁকুনি দিয়ে সব থেমে গেল ? কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না, হুগলির বলাগড়ের খামারগাছির মুক্তকেশি তলার বাসিন্দা শ্যামাপ্রসাদ হালদার ৷ তিনি ওই ট্রেনে এসি বি-2 কামরায় ছিলেন ৷ স্ত্রী অঞ্জনা হালদারের ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য, তাঁকে নিয়ে মুম্বইয়ের টাটা মেডিক্যাল সেন্টারে যাচ্ছিলেন ৷ ইটিভি ভারতকে ভয়াবহ এই রেল দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে, আঁতকে উঠছিলেন শ্যামপ্রসাদ হালদার ৷

তিনি বলেন, "তখন ভোর সারে তিনটে হঠাৎ ঝাঁকুনি আর প্রচণ্ড শব্দে ট্রেনের কামরা হেলে পড়ল ৷ আমরা B-2 কামারায় ছিলাম ৷ আমাদের ট্রেন হাওড়া থেকেই প্রায় 3 ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে ৷ তাই রাতে ট্রেনের গতিও বেশি ছিল ৷ ট্রেনের সকলেই প্রায় ঘুমাচ্ছিলেন ৷ হঠাৎই, বিকট শব্দ ও তীব্র ঝাঁকুনি ৷ সে সব থামার পর ধাতস্ত হতেই বেশ কয়েক মিনিট লেগে গিয়েছিল ৷ তার মধ্যে ট্রেনের আপার বাথে ছিলাম ৷ মাথায় চোট পাই ৷ জানি না কীভাব বেঁচে গেলাম ৷ আমার স্ত্রী মিডলে ছিলেন ৷ তাঁরও চোট লেগেছে ৷ উল্টোদিকের বাথে একজন বয়স্ক ব্যক্তি ছিলেন, তাঁর হাঁটুতেও লেগেছে ৷"

দুর্ঘটনার পরের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, "আমি প্রথমে বার্থ থেকে নেমে, স্ত্রীকে খুঁজতে শুরু করি ৷ তারই মধ্যে লোকজন ট্রেন থেকে নামার চেষ্টা শুরু করে ৷ আমি দেখি আমার স্ত্রী এক পাশে সিঁটিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, ওর চোখেমুখে আতঙ্ক ৷ ওকে নিয়ে আগে ট্রেন থেকে নামাই ৷ বাইরে বেরিয়ে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না, পুরো অন্ধকার ৷ এরপর ফের ট্রেনের ভিতরে যাই আমি ৷ আমাদের ব্যাগ নামিয়ে আনি ৷ আমার ব্যাগে একটা টর্চ ছিল ৷ সেটা আজ এভাবে কাজে লাগবে, ভাবতেও পারিনি ! বাকিদের ট্রেন থেকে নামতে সাহায্য় করি ৷ তার মধ্যে আমাদের বগির অ্যাটেনডেন্টের পা ভেঙে গিয়েছে ৷ রেলের লোকজন ওকে হাসপাতালে নিয়ে যায় ৷"

শ্যামাপ্রসাদ হালদারের বর্ণনায়, "আধঘণ্টা পরে অ্যাম্বুল্যান্সের আওয়াজ পাই ৷ পুলিশও ততক্ষণে চলে এসেছিল ৷ ভোরের আলো ফুটতে দেখি, সামনে থেকে পিছন পর্যন্ত সব বগি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ৷ আর পাশে, 30-40 ফুট গভীর খাদ ৷ আমাদের ট্রেনের বাঁ-দিকে একটা নতুন লাইন হচ্ছে ৷ সেটা উঁচুতে ৷ সেই লাইনের কংক্রিটের রেলিংয়ে আমাদের ট্রেনের বগিগুলি আটকে যায় ৷ তা না হলে, সোজা 40 ফুট গভীর খাদে গিয়ে পড়তাম ৷ সেটা হলে আর আপনাদের সঙ্গে এভাবে কথা বলতে পারতাম না ৷ প্রাণটাই হয়তো এতক্ষণে চলে যেত !"

তিনি বলেন,"আমাদের পুলিশ পিছনের দিকে যেতে দেয়নি ৷ ওদিকের কী অবস্থা ছিল, বলতে পারব না ৷ তবে, পিছনের দিকের বগিগুলির অবস্থা খুব খারাপ ছিল ৷ আমাদের এরপর একটা লোকাল ট্রেনে করে পরের স্টেশনে নিয়ে আসা হয়েছে ৷ এখান থেকে আমাদের মুম্বই যাওয়ার ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ এই ট্রেনেও আমরা বি-2 কামরায় বসে আছি ৷ এখনও সব যাত্রী আসেনি ৷ সবাই এলে আমাদের নিয়ে ট্রেন রওনা দেবে ৷"

কিন্তু, কীভাবে হল এই দুর্ঘটনা ? শ্যামাপ্রসাদ হালদার জানিয়েছেন, "আমি যা শুনলাম, ট্রেনের গতি প্রায় 120 কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা ছিল ৷ আমাদের ট্রেনের পাশে একটা মালগাড়ি রয়েছে ৷ সেটির ওয়াগনগুলি কালো প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকা ৷ কোনওভাবে একটি ওয়াগনের প্লাস্টিক বাঁধা ছিল না ৷ সেটি আমাদের ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে জড়িয়ে যায় ৷ ফলে চালক ভিশন হারিয়ে ফেলেন ৷ তিনি দ্রুত ব্রেক কষতেই মনে হয়, বগিগুলি লাইনচ্যুত হয়েছে ৷ তবে, পুরোটা তদন্ত সাপেক্ষ ৷ তদন্ত না হলে, তো নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাবে না ৷"

তবে, ভারতীয় রেলে যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শ্যামাপ্রসাদ হালদার ৷ তীব্র ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, "রেলের নিরাপত্তা কোন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে ! আগে লোকে রেল মানেই জানত, নিরাপদে গন্তব্য পৌঁছাবে ৷ এখন প্রাণ হাতে নিয়ে ভারতীয় রেলের সফর করতে হচ্ছে ৷ কী দুরাবস্থা আমাদের রেল ব্যবস্থার ! মানুষ ট্রেনে করে দূরদুরান্তে চিকিৎসার জন্য যায়, সুস্থ হতে ৷ কিন্তু, এখন ভাবতে হয়, মাঝপথে প্রাণটা না হারাতে হয় ! এত টাকা দিয়ে লোকজন টিকিট কাটছে ৷ তাহলে নিরাপত্তা কোথায় ? রেলে খালিপদ পড়ে আছে ৷ কিন্তু, লোক নিচ্ছে না ৷ এরা যাত্রীদের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা শুরু করেছে ৷"

অন্যদিকে রেল দুর্ঘটনার খবর পেয়ে, দুঃশ্চিন্তায় হালদার দম্পতির পরিজনরা ৷ দর্ঘটনার পর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন শ্যামাপ্রসাদ এবং অঞ্জনা ৷ জানিয়েছেন, তাঁরা ভালো আছেন এবং মুম্বই যাওয়ার বিকল্প ট্রেনে উঠেছেন ৷ অঞ্জনা হালদার চন্দননগর কমিশনারেটের পুলিশ কর্মী ৷ স্বামীর সঙ্গে মুম্বই যাচ্ছেন চিকিৎসার জন্য ৷ কিন্তু, পথে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতা ৷ যা আজীবন হালদার দম্পতির মনে একটি কালো-অধ্যায় হয়ে থাকবে ৷

তবে, শ্যামাপ্রসাদ হালদার যে প্রশ্ন ও অভিযোগ তুলেছেন, তা কোনওভাবেই এড়িয়ে যাওয়ার নয় ৷ যে ভারতীয় রেলের উপর পুরো দেশবাসীর জীবন-যাপন ও দেশের অর্থনীতির অধিকাংশটাই নির্ভরশীল ৷ সাম্প্রতিক সময়ে সেই রেলের নিরাপত্তা যে তলানিতে এসে ঠেকেছে, তা অস্বীকার করার জায়গা নেই ৷ আর তার জ্বলন্ত উদাহরণ সপ্তাহখানেক আগের গন্ডা রেল দুর্ঘটনা ৷ গত 17 জুন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা ৷ গত একবছরে এমন প্রায় এক ডজনের বেশি রেল দুর্ঘটনার তালিকা বেরিয়ে আসবে ৷ ফলে ভারতীয় রেলের যাত্রী সুরক্ষা যে সত্যিই প্রশ্নের মুখে, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.