কলকাতা, 11 জানুয়ারি: জলবায়ু পরিবর্তন, যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল বিশ্ব উষ্ণায়ন ৷ আর এই বিশ্ব উষ্ণায়ন কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে ? এর ফলে কোন কোন ক্ষতির সম্মুখীন প্রাণীকূলকে হতে হচ্ছে ? আর এর থেকে বাঁচতে হলে কী কী করণীয় ?
এমন নানান বিষয় নিয়ে দেশের প্রথম জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক স্থায়ী গ্যালারি 'অন দ্য এজ'-এর উদ্বোধন হল সায়েন্স সিটিতে ৷ শনিবার ইএম বাইপাস সংলগ্ন সায়েন্স সিটিতে নয়া এই গ্যালারির উদ্বোধন করলেন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত ৷
সমগ্র বিশ্বের কাছে এখন জলবায়ুর পরিবর্তন ও তার ফলে প্রতিনিয়ত মানুষ-সহ গোটা জীবকূলের উপর প্রকৃতির রোষ নেমে আসছে ৷ এর প্রভাব কতটা ও কীভাবে জীবকূলে পড়ছে, আর এর থেকে বাঁচার কী উপায়, সেই সবকিছু এই গ্যালারিতে তুলে ধরা হয়েছে ৷
এ নিয়ে গ্যালারির দায়িত্বে থাকা এবং সায়েন্স সিটির কিউরেটর শুভশঙ্কর ঘোষ বলেন, "প্রযুক্তির মাধ্যমে, খেলার ছলে ও সহজভাবে পুরো বিষয়টিকে আমরা তুলে ধরেছি ৷ জলবায়ু পরিবর্তন ও তার কুপ্রভাব বোঝার জন্য বিজ্ঞান জানতে হবে না ৷ খালি চোখে পুরো বিষয়টি চাক্ষুস করলেই, তা বোঝা যাবে ৷"
এই জলবায়ুর পরিবর্তন ও তার প্রভাব কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে, সে নিয়ে শুভশঙ্কর ঘোষ বলেন, "গতকালই (শুক্রবার) 'দ্য নেচার' পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, '1.5 ডিগ্রি, আইপিসিসি (জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেল) বলেছিল যে তাপমাত্রাটা ছুঁয়ে ফেললে পৃথিবী বিনাশের দিকে এগোবে ৷ যা গত দু’বছরে পৃথিবীতে শুরু হয়ে গিয়েছে ৷' বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখনই যদি পদক্ষেপ না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ দিন আসছে ৷"
'অন দ্য এজ' গ্যালারির প্রদর্শনী নিয়ে তিনি বলেন, "আমরা এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে মানুষকে বোঝাতে চাইছি, সত্যিই জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে ৷ আর সেটা যে হচ্ছে, তা কেদারনাথ হোক বা সুন্দরবন, প্রকৃতি সেই ধ্বংসলীলা শুরু করে দিয়েছে ৷ আর এক্ষেত্রে মানুষ ভাবতে পারে, আমরা কী করতে পারি ! মানুষ চাইলেই জলবায়ুর এই পরিবর্তনকে 25 শতাংশ রোধ করতে পারে ৷ শুধু তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের বেশকিছু অভ্যাস বদলে ফেলতে হবে ৷ সেই জিনিসগুলিই সহজভাবে গ্যালারির প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হয়েছে ৷"
গ্যালারির উদ্বোধনে এসে মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত বলেন, "জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বের কাছে সবচেয়ে বড় বিপদ ৷ মানবতার অস্তিত্ব রক্ষায় এক বড় সংকট ৷ গোটা বিশ্বের মানুষকে এই সংকট মোচনে একসঙ্গে কাজ করতে হবে ৷ জলবায়ুর পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবকে আটকানো কোনও নির্দিষ্ট দেশ বা কোনও নির্দিষ্ট সরকারের একার কাজ নয় ৷ আসন্ন ক্ষতি সম্পর্কে সাধারণকে সচেতন করতেই এই পদক্ষেপ ৷ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খুব সহজেই মানুষের কাছে তুলে ধরা হয়েছে এই গ্যালারিতে ৷"
গোটা গ্যালারিটি ডিজিটাল করা হয়েছে ৷ গেমিং জোনে বাইক বা কার রেসিং যেভাবে সামনের পর্দায় ভেসে ওঠে ৷ ঠিক সেই আদলেই এখানে মুরুপ্রদেশের অনুভূতি পাবেন দর্শকরা ৷ আছে মডেলের মাধ্যমে জলোচ্ছ্বাস বোঝানোর ব্যবস্থা ৷ এ দিন উদ্বোধনের পর থেকে বিনামূল্যে এই প্রদর্শনী দেখতে পারবেন সাধারণ দর্শকরা ৷ পরবর্তী সময়ে এই প্রদর্শনী গাইড দিয়ে দেখানোর ব্যবস্থা করা হবে ৷ সেই সময় একটি নির্দিষ্ট মূল্যে টিকিট কাটতে হবে দর্শকদের ৷
গ্যালারিটি মূলত চারটি ভাগে তৈরি করা হয়েছে ৷ যার প্রথম ভাগের বিষয়বস্তু প্রমাণ ৷ দ্বিতীয় ভাগের বিষয়বস্তু বিজ্ঞানের চোখে কারণ কী ৷ তৃতীয় ভাগে কার্বন যাতে না-বাড়ে সেই পদক্ষেপ এবং চতুর্থ ভাগে জলবায়ু পরিবর্তনে নিজেদের কীভাবে মানিয়ে নেওয়া যাবে ৷