ETV Bharat / state

তিস্তা চুক্তিকে সমর্থন নয়, দিল্লির দরবারে মমতা - MAMATA ON TEESTA AGREEMENT

Mamata on Teesta agreement: বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকলেও রাজ্যের স্বার্থ উপেক্ষা করবেন না ৷ আর তাই তিস্তা চুক্তি কোনওভাবেই সমর্থন করা সম্ভব নয় বলে ফের বিধানসভায় সরব হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কেন্দ্রের বিরুদ্ধেও তোপ দাগলেন তিনি ৷

Mamata Teesta agreement
তিস্তা চুক্তিকে সমর্থন নয় (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jul 29, 2024, 5:36 PM IST

Updated : Jul 29, 2024, 8:27 PM IST

কলকাতা, 29 জুলাই: গত কয়েকদিনে বারবার আলোচনায় ঘুরে ফিরে এসেছে 'তিস্তা জল চুক্তি'। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বারবার দাবি করা হয়েছে, একতরফাভাবে রাজ্যকে উপেক্ষা করেই ফরাক্কা চুক্তির নবীকরণ এবং তিস্তা চুক্তি নিয়ে এগোতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার । এই অবস্থায় সোমবার ফের রাজ্য বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তিস্তা জল চুক্তি নিয়ে নিজের অসন্তোষ ও ক্ষোভ উগড়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷

দিল্লি যাওয়ার ডাক মমতার

ইন্দো-ভুটান যৌথ নদী কমিশন নিয়ে রাজ্য বিধানসভায় আনা প্রস্তাবে পরিষদীয় কমিটি গড়ে দিল্লি যাওয়ার ডাক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, "এগুলি রুখতে এই কমিশন দ্রুত জরুরি।" এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রস্তাব দিয়ে বলেন, "রাজ বিধানসভা থেকে একটি প্রতিনিধি দল গিয়ে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সেচমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসুক। নীতি আয়োগে ইতিমধ্যে বিষয়টি রেকর্ড হয়েছে। আগামিদিনে এই বিষয়টি নিয়ে আমি চিঠিও দেব।"

তিস্তা চুক্তি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া

এদিন রাজ্য বিধানসভায় ভুটান পাহাড় থেকে আসা নদীগুলির পর্যবেক্ষণ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রস্তাব আনেন আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল ৷ সেই প্রস্তাবের উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন, কোনওভাবেই রাজ্যের স্বার্থ উপেক্ষা করে তিস্তা চুক্তি সম্ভব নয়।

মুখ্যমন্ত্রীকে এও বলতে শোনা যায়, "চাইলে রাজ্যের মানুষ আমাকে ভোট নাও দিতে পারে। কিন্তু রাজ্যকে উপেক্ষা করে এই চুক্তিকে সমর্থন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এই চুক্তির ক্ষেত্রে যেখানে বাংলা প্রধান অংশীদার সেখানে কোনওভাবেই আমাদের উপেক্ষা করা যায় না । সবচেয়ে বড় কথা, সেচের জল তো ছেড়েই দিলাম । তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়িত হলে উত্তরবঙ্গের মানুষ খাওয়ার জলও পাবে না । এই অবস্থায় কীভাবে চুক্তি সম্ভব !"

তিস্তা চুক্তি নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ মমতার

মুখ্যমন্ত্রী এদিন বিধানসভায় দাঁড়িয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, "তিস্তায় জল আছে ? 14টা হাইডেল পাওয়ার পাম্প আছে । এগুলো যখন তৈরি হচ্ছিল তখন কী করছিল কেন্দ্র ? কালিম্পং থেকে শুরু করে আপার শিলিগুড়ি যখন ভেসে যায়, তখন কি কেন্দ্র চোখ বন্ধ করে বসে থাকে ? জলবিদ্যুৎ তৈরির কারণে এবং গাছ কাটার ফলে আগেই তিস্তার জল কমে গিয়েছে। যখন জলবিদ্যুৎ তৈরির জন্য গাছ কাটা হল তখনই সতর্ক হওয়া দরকার ছিল। এখন আবার বাংলাদেশকে জল দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।"

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মমতা

মুখ্যমন্ত্রী এদিন বাংলাদেশ প্রসঙ্গেও মুখ খুলেছেন ৷ তিনি বলেন, "ওরা আমাদের ভাই-বোনের মতো ৷ ওদের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ওদের আমরা ভালোবাসি । কিন্তু জল দিয়ে দিলে উত্তরবঙ্গের মানুষ ভুগবে । একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে । আর এসব থেকে নজর ঘোড়াতেই বলা হচ্ছে উত্তরবঙ্গ ভাগ করে দাও । এতো সস্তা ? সব গায়ের জোর ? বাংলাকে দেবেন না কিছু, আর যা ইচ্ছে তাই করবেন !"

মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরও বলেন, "ফরাক্কা চুক্তির সময় কথা ছিল, জল বণ্টনের জন্য যা ক্ষতি হবে কেন্দ্র রাজ্যকে ক্ষতিপূরণ দেবে । এক পয়সা দেয়নি। ফরাক্কার উপর এই বাংলার বিশাল সংখ্যক মানুষ নির্ভরশীল । আজ বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ বানভাসি । বাংলার স্বার্থ আপোস করে আমি কোনও চুক্তিতে যেতে পারব না । কে আমায় ভোট দিল, দিল না আমি জানি না । বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো । কেন্দ্র এই নিয়ে কথা তুলল কী করে ? আমি মানব না ।"

তিস্তা জল বন্টন চুক্তি নিয়ে নতুন করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে কিছুদিন আগে থেকে ৷ সম্প্রতি ভারত সফরে আসেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৷ সে সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর হয় ৷ সেখানে তিস্তা জল চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন হয় ৷ তখন থেকেই প্রতিক্রিয়া দিতে শুরু করেছেন মমতা৷ তাঁর দাবি, বাংলার সঙ্গে আলোচনা না করে এমন কোনও পদক্ষেপ কেন্দ্র নিতে পারে না ৷ মমতার ক্ষোভ নিয়ে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথাও বলেছেন হাসিনা ৷ তাঁর দাবি মমতার সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন ৷ কিন্ত তা হয়ে ওঠেনি ৷ এবার রাজ্য বিধানসভায় এ নিয়ে সরব হলেন মমতা ৷

কলকাতা, 29 জুলাই: গত কয়েকদিনে বারবার আলোচনায় ঘুরে ফিরে এসেছে 'তিস্তা জল চুক্তি'। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বারবার দাবি করা হয়েছে, একতরফাভাবে রাজ্যকে উপেক্ষা করেই ফরাক্কা চুক্তির নবীকরণ এবং তিস্তা চুক্তি নিয়ে এগোতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার । এই অবস্থায় সোমবার ফের রাজ্য বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তিস্তা জল চুক্তি নিয়ে নিজের অসন্তোষ ও ক্ষোভ উগড়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷

দিল্লি যাওয়ার ডাক মমতার

ইন্দো-ভুটান যৌথ নদী কমিশন নিয়ে রাজ্য বিধানসভায় আনা প্রস্তাবে পরিষদীয় কমিটি গড়ে দিল্লি যাওয়ার ডাক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, "এগুলি রুখতে এই কমিশন দ্রুত জরুরি।" এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রস্তাব দিয়ে বলেন, "রাজ বিধানসভা থেকে একটি প্রতিনিধি দল গিয়ে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সেচমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসুক। নীতি আয়োগে ইতিমধ্যে বিষয়টি রেকর্ড হয়েছে। আগামিদিনে এই বিষয়টি নিয়ে আমি চিঠিও দেব।"

তিস্তা চুক্তি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া

এদিন রাজ্য বিধানসভায় ভুটান পাহাড় থেকে আসা নদীগুলির পর্যবেক্ষণ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রস্তাব আনেন আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল ৷ সেই প্রস্তাবের উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন, কোনওভাবেই রাজ্যের স্বার্থ উপেক্ষা করে তিস্তা চুক্তি সম্ভব নয়।

মুখ্যমন্ত্রীকে এও বলতে শোনা যায়, "চাইলে রাজ্যের মানুষ আমাকে ভোট নাও দিতে পারে। কিন্তু রাজ্যকে উপেক্ষা করে এই চুক্তিকে সমর্থন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এই চুক্তির ক্ষেত্রে যেখানে বাংলা প্রধান অংশীদার সেখানে কোনওভাবেই আমাদের উপেক্ষা করা যায় না । সবচেয়ে বড় কথা, সেচের জল তো ছেড়েই দিলাম । তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়িত হলে উত্তরবঙ্গের মানুষ খাওয়ার জলও পাবে না । এই অবস্থায় কীভাবে চুক্তি সম্ভব !"

তিস্তা চুক্তি নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ মমতার

মুখ্যমন্ত্রী এদিন বিধানসভায় দাঁড়িয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, "তিস্তায় জল আছে ? 14টা হাইডেল পাওয়ার পাম্প আছে । এগুলো যখন তৈরি হচ্ছিল তখন কী করছিল কেন্দ্র ? কালিম্পং থেকে শুরু করে আপার শিলিগুড়ি যখন ভেসে যায়, তখন কি কেন্দ্র চোখ বন্ধ করে বসে থাকে ? জলবিদ্যুৎ তৈরির কারণে এবং গাছ কাটার ফলে আগেই তিস্তার জল কমে গিয়েছে। যখন জলবিদ্যুৎ তৈরির জন্য গাছ কাটা হল তখনই সতর্ক হওয়া দরকার ছিল। এখন আবার বাংলাদেশকে জল দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।"

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মমতা

মুখ্যমন্ত্রী এদিন বাংলাদেশ প্রসঙ্গেও মুখ খুলেছেন ৷ তিনি বলেন, "ওরা আমাদের ভাই-বোনের মতো ৷ ওদের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ওদের আমরা ভালোবাসি । কিন্তু জল দিয়ে দিলে উত্তরবঙ্গের মানুষ ভুগবে । একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে । আর এসব থেকে নজর ঘোড়াতেই বলা হচ্ছে উত্তরবঙ্গ ভাগ করে দাও । এতো সস্তা ? সব গায়ের জোর ? বাংলাকে দেবেন না কিছু, আর যা ইচ্ছে তাই করবেন !"

মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরও বলেন, "ফরাক্কা চুক্তির সময় কথা ছিল, জল বণ্টনের জন্য যা ক্ষতি হবে কেন্দ্র রাজ্যকে ক্ষতিপূরণ দেবে । এক পয়সা দেয়নি। ফরাক্কার উপর এই বাংলার বিশাল সংখ্যক মানুষ নির্ভরশীল । আজ বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ বানভাসি । বাংলার স্বার্থ আপোস করে আমি কোনও চুক্তিতে যেতে পারব না । কে আমায় ভোট দিল, দিল না আমি জানি না । বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো । কেন্দ্র এই নিয়ে কথা তুলল কী করে ? আমি মানব না ।"

তিস্তা জল বন্টন চুক্তি নিয়ে নতুন করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে কিছুদিন আগে থেকে ৷ সম্প্রতি ভারত সফরে আসেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৷ সে সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর হয় ৷ সেখানে তিস্তা জল চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন হয় ৷ তখন থেকেই প্রতিক্রিয়া দিতে শুরু করেছেন মমতা৷ তাঁর দাবি, বাংলার সঙ্গে আলোচনা না করে এমন কোনও পদক্ষেপ কেন্দ্র নিতে পারে না ৷ মমতার ক্ষোভ নিয়ে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথাও বলেছেন হাসিনা ৷ তাঁর দাবি মমতার সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন ৷ কিন্ত তা হয়ে ওঠেনি ৷ এবার রাজ্য বিধানসভায় এ নিয়ে সরব হলেন মমতা ৷

Last Updated : Jul 29, 2024, 8:27 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.