কলকাতা, 9 ডিসেম্বর: রাজভবনের সঙ্গে নবান্নের দূরত্ব কি কমছে ? পরিস্থিতি খানিকটা তেমনই । সোমবার সন্ধ্যায় মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে সঙ্গে নিয়ে রাজভবনে চায়ের আমন্ত্রণে যোগ দিতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেচ্ছা বিনিময়ের একটি ছবি এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করা হয়েছে রাজভবনের তরফে ৷ তাতে রাজ্যের সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক প্রধান-দু'জনকেই হাসিমুখে দেখা গিয়েছে ৷
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, রাজ্যের দুই শীর্ষ কর্তার মধ্যে সুসম্পর্ক ফিরছে ৷ দিন কয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে রাজ্যপাল কোনও সংঘাতমূলক পরিস্থিতিতে না-জড়ানোর বার্তা দিয়েছেন ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন ৷
পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ সন্ধ্যায় রাজভবনে মাননীয় রাজ্যপালের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং মত বিনিময় করেন।
— Raj Bhavan Media Cell (@BengalGovernor) December 9, 2024
বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক। pic.twitter.com/1jUywDjuLD
এদিকে গত সোমবার, 2 ডিসেম্বর বিধানসভায় উপস্থিত হয়ে ছয় বিধায়কের শপথ বাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ৷ দিন দুই আগে রাজ্যের 6 বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগে রাজ্যের তালিকাতেই কার্যত সিলমোহর দিয়েছেন রাজ্যপাল ৷ এরপর সোম-সন্ধ্যায় চা পানের আমন্ত্রণে সাড়া দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
সূত্রের খবর, চা পানের আমন্ত্রণের মাঝেই রাজ্যের বাকি 25টি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ ও রাজ্য মন্ত্রিসভার রদবদল নিয়ে দু'পক্ষের আলোচনা হয়েছে ৷ খুব শীঘ্রই ধাপে ধাপে বাকি 25টি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্যের নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে ৷ সন্ধ্যা 5:42 মিনিটে রাজভবনে প্রবেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ রাজভবন ছাড়েন ঠিক সন্ধ্যা 6:18 মিনিটে ৷
রাজ্যপাল পদে দু'বছর পূর্তির দিনই 'দ্বন্দ্ব' ভুলে মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল রাজভবন ৷ যদিও সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজভবনে আসেননি ৷ কারণ, অনেকগুলি বিষয়ে দু'পক্ষের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে মতবিরোধ চলছিল ৷ শুরুটা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ ও বিধায়কদের শপথ গ্রহণ পর্ব নিয়ে ৷ কয়েক মাস আগে বরানগর ও ভগবানগোলা উপনির্বাচনে জয়ী দুই তৃণমূল বিধায়কের শপথ ঘিরেও জটিলতা দেখা যায় ৷
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে জটিলতা শীর্ষ আদালতে গড়ায় ৷ নানা টানাপোড়নের পর বিষয়টা থিতু হতে শুরু করে ৷ রাজভবন সূত্রের দাবি, আজ সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্য নিয়েই আলোচনা হয়েছে রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে ৷ সূত্রের আরও খবর, শুধু স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ নয়, আরও বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে ৷ যদিও সে বিষয়ে দু'পক্ষের তরফে কেউ মুখ খোলেননি ৷
উল্লেখ্য, এর আগে গত 15 অগস্ট স্বাধীনতা দিবসের বিকেলে রাজভবনে এলেও রাজ্যপালকে এড়িয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী ৷ রাজভবনের উত্তর অলিন্দে বসেই সময় কাটিয়ে বেরিয়ে যান তিনি ৷ তবে, কয়েক মুহূর্তের জন্য দু'জনের মধ্যে সৌজন্য বিনিময় হয়েছিল ৷ সে সময় রাজভবন ও নবান্নের মধ্যে চরম মতানৈক্য ছিল ৷ রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হেনস্তার অভিযোগে নিয়ে তৃণমূল সরব ছিল ৷ আবার বিল আটকে রাখা নিয়ে সরকার পক্ষ বারবার আক্রমণ করেছে রাজভবনকে ৷ এসব পর্ব কাটিয়ে ফের মসৃণ পথে হাঁটার চেষ্টায় রাজভবন ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷