কলকাতা, 25 ফেব্রুয়ারি: মহাকুম্ভ 144 বছর পর হচ্ছে ৷ এই তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ মঙ্গলবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, " 144 বছর আগে হয়েছিল, আবার 144 বছর পর মহাকুম্ভ হবে। এমনটা ভাবা ঠিক নয় ৷" পাশাপাশি তিনি জানান, কোনও ধর্মকেই অসম্মান করেননি।
এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, "আমি যা বলছি সেটা ভুলও হতে পারে ৷ কারণ, আমি এ বিষয়ে অজ্ঞ ৷ যাঁরা এ বিষয়টি জানেন তাঁদের কাছে অনুরোধ, আমাকে গবেষণা করে জানাবেন সঠিকটা কী ! গঙ্গাসাগর প্রতি বছর হয় ৷ মহাকুম্ভ বারো বছর অন্তর হয় ৷ পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের নিমকাঠের মূর্তি তৈরিরও অনেক নিয়ম আছে ৷ আমি যতদূর জানি, সেটা ভুল হতে পারে, পুরীর নিয়ম অনুযায়ী সম্ভবত বারো বছর পরপর নিমকাঠের মূর্তি বদলানো হয় ৷ 2014 সালে মহাকুম্ভ হয়েছিল ৷ আমার যদি ভুল হয়, তাহলে আপনারা সংশোধন করে দেবেন ৷ 144 বছর পর কুম্ভ হচ্ছে, এটা ঠিক নয় ৷"
এদিন ফের প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলায় একের পর এক দুর্ঘটনা নিয়ে সমালোচনা করেন মমতা ৷ মহাকুম্ভকে কেন্দ্র করে একের পর এক দুর্ঘটনায় বহু মানুষের প্রাণ গিয়েছে ৷ সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, "দুর্ঘটনার আগে বা পরে আমরা যদি তা নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা না করি তাহলে সাধারণ মানুষের সমস্যা হয় ৷ যোগী সাহেব যতই আমাকে গালাগালি দিন, তাতে আমার ফোসকা পড়বে না ৷ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আপনার উপর আমার নিশ্চয়ই শ্রদ্ধা আছে ৷ অনেক পরিবার বিপদে পড়েছে। তাদের হাতে মৃতদেহ তুলে দেওয়ার আগে আপনারা ময়নাতদন্ত করেননি ৷ আমরা বাধ্য হয়েছি ময়নাতদন্ত করাতে ৷ আপনারা অর্থ সাহায্যের ঘোষণা করেছেন। সেই পরিবারগুলিকে দ্রুত সেই অর্থ দিয়ে দেওয়া উচিত ৷"
গত 18 ফেব্রুয়ারি রাজ্য় বিধানসভায় মহাকুম্ভ ঘিরে একের পর দুর্ঘটনা নিয়ে যোগী সরকারকে কড়া আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ একটি প্রসঙ্গে তাঁকে বলতে শোনা যায় মহাকুম্ভ মৃত্যুকুম্ভে পরিণত হয়েছে। তাঁর মন্তব্যে বিতর্ক তৈরি হয় ৷ বিজেপি নেতারা এমনকী উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের পাল্টা সমালোচনা করেন ৷
এদিন রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, "কোনও ধর্মকে আমি অসম্মান করিনি ৷" তিনি জানান, কুম্ভে যে ধরনের অব্যবস্থা হয়েছে সেটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন ৷ মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট দাবি, কুম্ভে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, দ্রুত তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক ৷
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমি কুম্ভস্নান নিয়ে একটি কথাও বলিনি ৷ কে কোথায় যাবেন, কী খাবেন, কোথায় স্নান করবেন, এটা তাঁর নিজস্ব ব্যাপার ৷ ধর্ম যার যার ৷ যে যে ধর্মে বিশ্বাস করেন, সেটা পালন করুন ৷ আমরা যেটা জানি, অন্য স্নান যেটা হয় সেটা সংক্রান্তিতেই হয় ৷ সেক্ষেত্রে নিয়ম-কানুন মেনেই হয় ৷ তাই 144 বছর পরে আবার কুম্ভ হবে, বা 144 বছর আগে কুম্ভ হয়েছিল, এটা ঠিক নয় ৷"
মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন, "যে পরিবারগুলি তাঁদের পরিজনকে হারিয়েছেন, তাঁরা যেন যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিপূরণের টাকা পান ৷ অনেকেরই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৷ রেলের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৷ অন্যান্য দুর্ঘটনাতেও অনেকের মৃত্যু হয়েছে ৷ তাঁরাও যেন ক্ষতিপূরণের আওতায় আসেন ৷"
একটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "400 লোককে নিমন্ত্রণ করলে 600 লোকের ব্যবস্থা রাখতে হয় ৷ ধর্মীয় ব্যাপার একটা উৎসব ৷ কতটা ক্ষমতা আছে, সেখানে কত মানুষ যেতে পারে, কীভাবে যেতে পারে, সেগুলো ভাবনাচিন্তা করেই সব করতে হয় ৷ আমরা পরিকল্পনার ব্যাপারে বলেছিলাম ৷ অনেকে এটাকে বিকৃত করেছে ৷ অনেক অ-কথা, কু-কথা বলেছেন ৷ তাঁদের আমি বলব আপনারা যেটা বলছেন, সেটা অসত্য ৷ সম্পূর্ণ মিথ্যা ৷"
সেদিন সোজাসুজি না বললেও মমতা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মেলায় দুর্ঘটনা হলে তার দায় আয়োজকদেরই থাকে ৷ এক্ষেত্রে আয়োজক যেহেতু যোগী সরকার তাই তারা এই দায় অস্বীকার করতে পারে না ৷ এদিন তিনি সাফ বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁর সমালোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল অব্যবস্থা ৷ কোনও ধর্মকে অবমাননা বা অসম্মান করা নয় ৷
মমতার কথায়, "আমি কোনও ধর্মকে অসম্মান করিনি ৷ কোনওদিন করবও না ৷ সর্বধর্ম সমন্বয় আমাদের লক্ষ্য ৷ আমরা সব ধর্মকে সম্মান করি ৷ গঙ্গাসাগর মেলার সময় পাঁচ-ছ'দিন আমাদের কারও ঘুম হয় না ৷ জেগে থাকতে হয় ৷ জলে পার হয়ে যাতায়ত করতে হয় ওখানে ৷ মেলার জন্যই আমরা গঙ্গাসাগর সেতু তৈরি করছি ৷ এই সেতু তৈরি হতে দু'বছর সময় লাগবে ৷"