কলকাতা, 31 মার্চ: গার্ডেনরিচকাণ্ডে চাপের মুখে এবার কলকাতা পৌরনিগমের নজিরবিহীন নির্দেশিকা। সাফাই কর্মী থেকে সম্পত্তি কর বিভাগের কর্মী-সহ আরও বেশ কয়েকটি বিভাগের কর্মীদের এবার নয়া দায়িত্ব দিল পৌরনিগম কর্তৃপক্ষ। শহরের বড় রাস্তা বা অলিগলি কোথাও বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে কি না, বা পরিত্যক্ত বাড়ি আছে কি না, তা কলকাতা কর্পোরেশনের গোচরে আনার কাজ করবেন তারা ! এমনই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে কলকাতা কর্পোরেশনের পৌর কমিশনারের তরফ থেকে। যা নিয়ে রীতিমত তোলপাড় পড়ে গিয়েছে কলকাতা কর্পোরেশনের অভ্যন্তরেই।
গার্ডেনরিচে বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনার পর থেকেই একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কলকাতা পৌরনিগম কর্তৃপক্ষ। সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে কলকাতা কর্পোরেশনের ওয়ার্ক ডায়েরি অ্যাপ মারফত কাজ করা। সেই প্রশিক্ষণ ইতিমধ্যে শনিবার দেওয়া হয়েছে বিল্ডিং বিভাগের সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারদের ৷ জানা গিয়েছে, ধাপে ধাপে বাকি বিভাগের কর্মীদেরও সেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে কলকাতা কর্পোরেশনের আইটি বিভাগের তরফে। কলকাতা কর্পোরেশনের নয়া এক নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বেআইনি বাড়ি সংক্রান্ত বিষয় তারা জিরো টলারেন্স বার্তা দিতে চায় নাগরিকদের ৷ আর তারজন্য নির্মাণ কাজে শুরু থেকেই নজরদারির পাশাপাশি প্রতিমুহূর্তে প্রতিদিনের নজরদারি চালাবে বিল্ডিং বিভাগ। সেই সঙ্গে, সম্পত্তি কর বিভাগের কর্মীরা যারা অনেকেই বকেয়া কর আদায় করতে যান অথবা কর সম্পর্কিত কাজে যান বাড়িতে, কলকাতা কর্পোরেশনের বিল্ডিং সার্ভেয়ার বিভাগের কর্মীরা, সাফাই বিভাগের কর্মীরা জঞ্জাল তুলতে গিয়ে যদি তাদের নজরে আসে কোনও আশপাশের পরিত্যক্ত বাড়ি অথবা সাধারণভাবে দেখে মনে হয় কোনও বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে, তার ছবি তুলে ঠিকানা-সহ বিস্তারিত তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে ডাউনলোড করতে হবে।
এই অ্যাপে বিল্ডিং বিভাগের ডিজি নজরে আসবে সেই ঘটনা তিনি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বোরোর আধিকারিককে পাঠিয়ে যত উপযুক্ত পরিদর্শন ও ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেবেন। নির্দেশিকা অনুসারে, কলকাতা কর্পোরেশনের সম্পত্তিকর মূল্যায়ন বিভাগ, জমি জরিপ বিভাগ, পার্কিং বিভাগ, লাইসেন্স বিভাগ, জঞ্জাল সাফাই বিভাগের কর্মীদের এই বাড়তি নজরদারি দায়িত্ব আরোপ করা হয়েছে। এই নির্দেশিকা ঘিরে রীতিমতো তোলপাড় কলকাতা পৌরনিগমের অভ্যন্তর। অনেকেরই বক্তব্য, যে সমস্ত বিভাগের কর্মীদের এই নজরদারি চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা কেউই ‘টেকনিক্যাল ক্যাডার’ নয়। তারা কীভাবে একটি বাড়ি আইনি না বেআইনিভাবে হচ্ছে তা বুঝবে ? সম্পূর্ণ তাদের মনে হওয়ার উপরেই নির্ভর করবে তথ্য পাঠানো। পর্যাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারদের অভাববোধকে লাগাম দিতেই কি এমন অদ্ভুত নির্দেশিকা ? যারা ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা বিল্ডিং আইনের সম্পর্কে অবগত নন তেমন কর্মীদের উপরে নির্ভর করছে শুধুমাত্র উপযুক্ত ইঞ্জিনিয়ারের অভাব লাঘব করতে ?
পৌরনিগমের কেরানিরাও বুঝতে পারেন ইঞ্জিনিয়ারদের কাজকর্ম আইন-কানুন ! নয়া নির্দেশিকার পরে এমনটাই প্রশ্ন তুলছেন খোদ কর্পোরেশনের কর্মচারীদের একাংশ ৷
আরও পড়ুন