কলকাতা, 26 নভেম্বর: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জামিন মিলেছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের 'ঘনিষ্ঠ' বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ৷ এর পর প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর জামিন মেলার সম্ভাবনা ৷ তাই পার্থর জামিন আটকাতে এবার তৎপর সিবিআই ৷ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় 'কালীঘাটের কাকু' ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চায় এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা । তাঁকে এই ঘটনায় জেরা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা ।
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, 'কালীঘাটের কাকু'র হেফাজত চেয়ে ব্যাঙ্কশালে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে আবেদন করে সিবিআই । সেই আবেদন নাকি ইতিমধ্যে মঞ্জুরও করা হয়েছে । আজ, মঙ্গলবারই কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে সিবিআই আদালতে পেশ করাতে চেয়েছিল । অথচ আদালতে পেশ করার ঠিক আগের মুহূর্তে প্রবল বুকে যন্ত্রণা অনুভব করেন কালীঘাটের কাকু । তাই তাঁকে এদিন আদালতে পেশ করা যায়নি ৷
মূলত সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা মনে করছেন, 'কালীঘাটের কাকু'কে জেরা করে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে আরও নতুন তথ্য মিলতে পারে । আর তাতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন আটকানো যেতে পারে । তাই সিবিআই মহলের মতে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন রোখার জন্যই 'কালীঘাটের কাকু'কে হেফাজতে চাইছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ।
এরপর প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের তরফ থেকে জানানো হয় যে কালীঘাটের কাকুকে তারা ভার্চুয়ালি আদালতে পেশ করবে। তবে আদালতের তরফে স্পষ্ট বলা হয় যেহেতু সিবিআই তাকে হেফাজতে নিতে চায়। ফলে অনলাইনে না। স্বশরীরে আসতে হবে তাকে। আদালতের তরফে ২৮ নভেম্বর ফের কাকুকে আদালতে পেশ করার দিন ঠিক করেছে সিবিআই।
এর আগে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মানিক ভট্টাচার্য, জীবনকৃষ্ণ সাহা, এমনকি অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ও একে একে জামিন পেয়েছেন । এক্ষেত্রে সিবিআইয়ের দাবি, আচমকাই পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরও প্রমাণের অভাবে জামিন হলেও হতে পারে । আর প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর জামিন রোখার জন্য এবার নতুন নতুন তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করতে নেমেছে সিবিআই ৷ এর জন্যই সন্তু গঙ্গোপাধ্যায়কে সোমবার গ্রেফতার করেছে তারা । পাশাপাশি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন আটকানোর জন্যই 'কালীঘাটের কাকু'কে তারা নিজেদের হেফাজতে চাইছেন বলে মনে করা হচ্ছে ।
সোমবার রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ 'বান্ধবী' বলে পরিচিত অর্পিতা মুখোপাধ্যায় জামিন পান । প্রায় দু'বছর চার মাস পর সংশোধনাগার থেকে মুক্তি পেলেন তিনি । যদিও তাঁর মায়ের মৃত্যুর কারণে তিনি প্যারোলে বাইরে ছিলেন । প্যারোলে মুক্ত থাকাকালীনই তাঁর জামিন হয় ।
রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত নেমে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা । পরে সেখান থেকে তাঁর 'বান্ধবী' অর্পিতার হদিশ পান তাঁরা । অর্পিতার ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে কোটি কোটি টাকার সোনার গয়না ও নগদ উদ্ধার করেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা । পরে অর্পিতা ও পার্থকে গ্রেফতার করা হয় ।
এরপর থেকে গত দু'বছর ধরে শারীরিক অবস্থার অবনতির কথা জানিয়ে একাধিকবার আদালতে নিজের জামিনের আবেদন করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় । কিন্তু তাঁর জামিন হয়নি । বারংবার প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর জামিনের আবেদন বাতিল করেছে আদালত । গ্রেফতারির পর থেকেই প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে রয়েছেন তিনি । আর তাঁর 'বান্ধবী' অর্পিতা মুখোপাধ্যায় এতদিন বন্দি ছিলেন আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারে ।