কলকাতা, 10 এপ্রিল: সন্দেশখালিকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ আর আদালতের থেকে তদন্তের নির্দেশ আসার সঙ্গে সঙ্গেই বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করল সিবিআই ৷ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর, এই সিটে রয়েছেন একজন ডিআইজি, একজন এসপি পদমর্যাদার আধিকারিক ও দু'জন ডিএসপি ।
বুধবার সকালেই সন্দেশখালির ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট । এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে সব রকম সাহায্য করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারকে । সেখানকার মানুষ তাঁদের অভিযোগ সরাসরি সিবিআইকে জানাতে পারবে । এ দিন হাইকোর্ট বলেছে, জমি দখল, ধর্ষণ, চাষের জমিকে ভেড়িতে পরিবর্তন করা-সহ সমস্ত অভিযোগের তদন্ত করবে সিবিআই ৷ আদালতের নির্দেশগুলি দেখে নেব একনজরে,
- সন্দেশখালির ঘটনায় সিবিআই তদন্ত করবে
- রাজ্যকে সবরকম সাহায্য করতে হবে
- সন্দেশখালির মানুষ তাঁদের অভিযোগ সরাসরি সিবিআই-কে জানাতে পারবেন
- সিবিআইকে পোর্টাল তৈরি করতে হবে, ইমেল আইডিতে জানানো যাবে অভিযোগ
- জমি দখল, ধর্ষণ, চাষের জমিকে ভেড়িতে পরিবর্তন করা-সহ সমস্ত অভিযোগের তদন্ত করবে সিবিআই
- আদালতের নজরদারিতে হবে তদন্ত
- স্পর্শকাতর এলাকায় 15 দিনের মধ্যে সিসিটিভি বসাতে হবে
- 15 দিনের মধ্যে এলইডি আলো বসাতে হবে
- সাক্ষীদের নিরাপত্তা দিতে হবে
- যে কোনও পদমর্যাদার যে কোনও ব্যক্তিকে তদন্তের স্বার্থে ডেকে পাঠাতে পারবে সিবিআই
- আদালতের নজরদারিতে হবে তদন্ত
- 2 মে এই মামলার পরবর্তী শুনানি
- সে দিনই রিপোর্ট দেবে সিবিআই
মূলত আদালতের তরফ থেকে সন্দেশখালি ঘটনায় সিবিআইয়ের উদ্দেশে বলা হয়, যেভাবে সন্দেশখালিতে মহিলাদের উপর নির্যাতন হয়েছে, ব্যবসায়ীদের মাছের ভেড়ি একের পর এক আত্মসাৎ করা হয়েছে, সেই সমস্ত এলাকায় সিবিআইকে যেতে হবে । নির্যাতিতাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, প্রয়োজনে যে কোনও সরকারি আধিকারিককে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে সিবিআই । এছাড়াও ইমেল আইডি ক্রিয়েট করে সেখানে গোপনীয়তার সঙ্গে অভিযোগকারীদের অভিযোগ যথাযথভাবে গ্রহণ করতে হবে । পাশাপাশি সন্দেশখালিতে যে সব ফাঁকা রাস্তায় বিভিন্ন অনৈতিক কাজকর্ম হচ্ছে, সেখানে তদন্ত করতে হবে এবং এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা ইনস্টল করতে হবে ।
সন্দেশখালির ঘটনায় যাবতীয় তদন্ত করে আগামী সপ্তাহের মধ্যে আদালতে এই সংক্রান্ত ঘটনায় রিপোর্ট পেশ করবে সিবিআই । অভিযোগকারীদের গোপনীয়তা বজায় রাখতে এই ব্যবস্থা করতে হবে । সন্দেশখালি এলাকায় ওই ইমেল আইডির প্রচার করতে হবে উত্তর 24 পরগনার জেলাশাসককে । স্থানীয় ভাষায় সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক সংবাদপত্রেও ওই বিষয়ে মানুষকে অবহিত করতে হবে বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট ।
সন্দেশখালিতে যা ঘটেছে এবং তার স্বপক্ষে যে অভিযোগ জমা পড়ছে তার একটিও যদি সত্যি হয়, তাহলে তা লজ্জাজনক বলে এ দিন উল্লেখ করেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম । এ দিন সন্দেশখালি সংক্রান্ত হাইকোর্টের স্বতঃস্ফূর্ত মামলার শুনানি ছিল । সেখানেই তিনি বলেন, "ন্যাশানাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর রিপোর্ট অনুয়ায়ী এই রাজ্য মেয়েদের জন্য সব থেকে নিরাপদ বলা হয়েছে । কিন্তু সন্দেশখালিতে মহিলাদের উপর যা ঘটনা ঘটেছে এবং আইনজীবীরা হলফনামা দিয়ে তাঁদের উপর অত্যাচারের ঘটনার কথা আদালতকে জানিয়েছেন । এত অভিযোগের একটাও যদি সত্যি হয়, তবে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক ৷"
শেখ শাহজাহানের আইনজীবী আর্জি জানিয়েছিলেন, যাতে তাঁর বিরুদ্ধে যে ভূরি ভূরি অভিযোগ নিয়ে আসা হচ্ছে, সেই অভিযোগের উত্তর দিতে সুযোগ দেওয়া হয় তাঁকে । তখনই শাহজাহানের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে কটাক্ষ করেন প্রধান বিচারপতি । একইসঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের ভুমিকায়ও তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি ।
এ দিন আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল প্রায় 600টিরও বেশি অভিযোগের কথা জানিয়েছেন, যাঁদের জমি জোর করে দখল করে নেওয়া হয়েছে । একইসঙ্গে মহিলাদের উপর নির্যাতনের যে অভিযোগ উঠেছে, সেই ব্যাপারে খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করার আর্জি জানান তিনি । অন্যদিকে, ইডির তরফে আইনজীবী এসভি রাজু সন্দেশখালির ঘটনায় আরও যে এফআইআর দায়ের হয়েছে, সেগুলি এবং চার্জিশিটের কপি ইডিকে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন ৷
আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় এই মামলার আদালত বান্ধব হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন ৷ তিনি প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষের জমি দখল করেছে কিছু দুস্কৃতী । সেই জমি রাজ্য কীভাবে ফেরত দেবে ? রাজ্য কি জমি দখল করেছিল ? এই সব বক্তব্যের পালটা জবাব দিয়ে রাজ্যের এজি কিশোর দত্ত বলেন, "জনস্বার্থ মামলা ব্যক্তিগত স্বার্থের মামলা বা রাজনৈতিক স্বার্থের মামলা হয়ে যাচ্ছে না তো ! এখানে সেটাই বেশি হচ্ছে ।"
প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়ালের উদ্দেশে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, "2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছিল । কিন্তু সেই অভিযোগের কতগুলো শেষ পর্যন্ত সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে, তার হিসাব নিয়ে দেখুক আদালত ।" সন্দেশখালির মহিলারা দীর্ঘদিন ধরে মুখ খুলতে পারেননি বলে যে বড় মাত্রায় অভিযোগ করা হচ্ছে তা পুরোপুরি সত্য নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি ।তাঁর বক্তব্য, "যাঁরা আদালতে জনস্বার্থ মামলা করছেন তাঁরা কি সত্যিই জনস্বার্থে মামলা করছেন ? এই দিকটা খতিয়ে দেখার আর্জি জানাচ্ছি । প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল যে মামলা করেছেন, তিনি কি কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসাবে নাকি একজন সাধারণ ভারতবাসী হিসাবে মামলা করেছেন সেটা স্পষ্ট হওয়া জরুরি ।" তাঁর কথায়, মেয়েদের উপর নির্যাতনের, অত্যাচারের বিষয়টি হাইলাইট করার চেষ্টা করা হয়েছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ।
আরও পড়ুন: