ETV Bharat / state

সন্দেশখালিতে রাজ্যের 144 ধারা প্রয়োগের নির্দেশ খারিজ হাইকোর্টে - সন্দেশখালিতে 144 ধারা

Section 144 in Sandeshkhali: সন্দেশখালির সব জায়গায় রাজ্য সরকারের 144 ধারা প্রয়োগের নির্দেশ খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ গোটা ঘটনায় রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে এ দিন প্রশ্ন তুলেছে আদালত ৷

ETV BHARAT
ETV BHARAT
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 13, 2024, 4:08 PM IST

Updated : Feb 13, 2024, 6:47 PM IST

কলকাতা, 13 ফেব্রুয়ারি: সন্দেশখালি কাণ্ডে আদালতে ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার ৷ 144 ধারা জারি করার যে নির্দেশ রাজ্য দিয়েছিল তা খারিজ করার পাশাপাশি গোটা ঘটনায় রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি ৷

বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর কথায়, সন্দেশখালিতে এমন কোনও নথি রাজ্য দেখাতে পারেনি, যার জেরে মানতে হবে গোটা থানা এলাকায় 144 ধারা প্রয়োগ জরুরি ছিল । তাই 144 ধারা জারির নির্দেশ খারিজ করা হল বলে জানালেন বিচারপতি ।

বিচারপতি তাঁর নির্দেশে বলেন, শাসকদলের বিরুদ্ধে খুব গুরুতর অভিযোগ । মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করা, আবার 144 ধারা জারি করে গ্রামের মানুষকে আটকে দেওয়ার কৌশল বড় বিপদ ডেকে আনার জন্য যথেষ্ট । ইন্টারনেট বন্ধ করা হয় সাম্প্রদায়িকতা বা দেশবিরোধী প্রচার আটকানোর জন্য । এখানে কী কারণে সেটা করা হয়েছিল সেটাও স্পষ্ট নয় । কোন নির্দিষ্ট এলাকায় টেনশন, কতটা টেনশন তার কোনও ব্যাখ্যা নেই । অথচ বলা হচ্ছে, টেনশন কমানোর জন্য এটা করা হয়েছে । ম্যাজিস্ট্রেটের সন্তুষ্টি এখানে স্পষ্ট নয় । আরও বেশি দায়িত্বশীল হয়ে কারণ অনুধাবন করে 144 ধারা প্রয়োগ করা উচিত বলে অভিমত বিচারপতির ।

সন্দেশখালির বাসিন্দা দু'জনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে । শুনানিতে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য তাঁর সওয়ালে বলেন, "শেখ শাজাহান, উত্তম সর্দার ও শিবু হাজরা এলকার কৃষি জমিতে মাছের ভেরি করছে । না করতে দিলে নোনা জল ঢুকিয়ে দিচ্ছে জমিতে । মেয়েদের উপর অত্যাচার করছে ।" এ কথা শুনে রাজ্যকে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত বলেন, "এটা হালকা করে নেবেন না । এটা অনেক গভীর অভিযোগ । শুধু 144 ধারা তুলে নেওয়ার দাবি নয় ।"

এরপর বিকাশরঞ্জন বলেন, "144 ধারা প্রত্যাহার আপাতত দাবি । তবে এর গভীরে মানুষের অধিকার রক্ষার দাবি রয়েছে । একজন প্রাক্তন বিধায়ক চারদিন ধরে পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন । কারণ তিনি মানুষকে জড়ো করেছিলেন । সেখানে মানুষের অধিকার রক্ষার দাবিতে আন্দোলনের জন্য তাঁকে মুরগির খামার পোড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে । অভিযোগ জানানোর পরেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি । এমনকি যে পুলিশ অফিসাররা অভিযুক্ত, তাঁদের বিরুদ্ধেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি ।"

এই অভিযোগ শোনার পর বিচারপতি জানতে চান, "সেই অফিসাররা তদন্ত করছেন ? আবার তাঁরাই আইনশৃঙ্খলা সামলাচ্ছেন ?" জবাবে বিকাশরঞ্জন জানান, "হ্যাঁ, তাঁদের কাছেই আবার অভিযোগ জানাতে হচ্ছে ।"

সন্দেশখালিতে ইন্টারনেট কাল অর্থাৎ সোমবার রাত থেকে চালু করা হয়েছে বলে রাজ্যের তরফে আদালতে জানানো হয় । সেই নিয়ে ফের রাজ্যের উদ্দেশে কড়া ভাবে বিচারপতি বলেন, "গোটা সন্দেশখালি এলাকা জুড়ে টেনশন রয়েছে, তাই 144 ধারা ! আমি বুঝতাম নির্দিষ্ট দুটো বা তিনটে জায়গা হলে । গোটা এলাকা জুড়ে টেনশন ! এর পরে বলবেন, গোটা কলকাতা জুড়ে টেনশন । তাই 144 ধারা গোটা শহরে ।"

বিচারপতির এই মন্তব্য শোনার পর রাজ্যের তরফে বলা হয়, বহু লোক একসঙ্গে জড়ো হয়েছে । বিক্ষোভ করছে । তার যথাযথ কারণ আছে কি না সেটাও কোর্টের দেখা দরকার । কোর্টকে বলব 144 ধারা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সেটা খতিয়ে দেখতে ৷ আর এখানে কতজন মামলা করেছেন ? দুটো লোক । তাঁরা বলছেন গোটা এলাকা নিয়ে অভিযোগ ।"

এ কথা শোনার পর ক্ষোভের সুরে রাজ্যের উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, "তিন বছর ধরে অভিযোগ নেননি । এলাকার মহিলারা নিরাপত্তার অভাব অভিযোগ করেছেন । আর এখন মামলার টেকনিক্যালিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলে ব্যাপারটা অন্য দিকে ঘোরাচ্ছেন !" রাজ্য জানায়, এফআইআর-এ নাম থাকা এক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন। এ কথা শুনে বিচারপতি বলেছেন, "তারপরেও বলছি, এখানে এমন কিছু অভিযোগ করা হয়েছে, যেগুলো দেখে কোর্ট চোখ বন্ধ করে রাখতে পারে না ।"

আরও পড়ুন:

  1. সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতনের অভিযোগের তদন্তে 10 সদস্যের কমিটি গঠন পুলিশের
  2. 'সন্দেশখালির ঘটনা ভয়াবহ, রবীন্দ্রনাথের ভূমিতে ভাবাই যায় না', প্রতিক্রিয়া রাজ‍্যপালের‌
  3. 'শাহজাহান-শিবু গ্রেফতার না হলে অত‍্যাচার আরও বাড়বে', রাজ্যপালের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ মহিলাদের

কলকাতা, 13 ফেব্রুয়ারি: সন্দেশখালি কাণ্ডে আদালতে ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার ৷ 144 ধারা জারি করার যে নির্দেশ রাজ্য দিয়েছিল তা খারিজ করার পাশাপাশি গোটা ঘটনায় রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি ৷

বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর কথায়, সন্দেশখালিতে এমন কোনও নথি রাজ্য দেখাতে পারেনি, যার জেরে মানতে হবে গোটা থানা এলাকায় 144 ধারা প্রয়োগ জরুরি ছিল । তাই 144 ধারা জারির নির্দেশ খারিজ করা হল বলে জানালেন বিচারপতি ।

বিচারপতি তাঁর নির্দেশে বলেন, শাসকদলের বিরুদ্ধে খুব গুরুতর অভিযোগ । মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করা, আবার 144 ধারা জারি করে গ্রামের মানুষকে আটকে দেওয়ার কৌশল বড় বিপদ ডেকে আনার জন্য যথেষ্ট । ইন্টারনেট বন্ধ করা হয় সাম্প্রদায়িকতা বা দেশবিরোধী প্রচার আটকানোর জন্য । এখানে কী কারণে সেটা করা হয়েছিল সেটাও স্পষ্ট নয় । কোন নির্দিষ্ট এলাকায় টেনশন, কতটা টেনশন তার কোনও ব্যাখ্যা নেই । অথচ বলা হচ্ছে, টেনশন কমানোর জন্য এটা করা হয়েছে । ম্যাজিস্ট্রেটের সন্তুষ্টি এখানে স্পষ্ট নয় । আরও বেশি দায়িত্বশীল হয়ে কারণ অনুধাবন করে 144 ধারা প্রয়োগ করা উচিত বলে অভিমত বিচারপতির ।

সন্দেশখালির বাসিন্দা দু'জনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে । শুনানিতে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য তাঁর সওয়ালে বলেন, "শেখ শাজাহান, উত্তম সর্দার ও শিবু হাজরা এলকার কৃষি জমিতে মাছের ভেরি করছে । না করতে দিলে নোনা জল ঢুকিয়ে দিচ্ছে জমিতে । মেয়েদের উপর অত্যাচার করছে ।" এ কথা শুনে রাজ্যকে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত বলেন, "এটা হালকা করে নেবেন না । এটা অনেক গভীর অভিযোগ । শুধু 144 ধারা তুলে নেওয়ার দাবি নয় ।"

এরপর বিকাশরঞ্জন বলেন, "144 ধারা প্রত্যাহার আপাতত দাবি । তবে এর গভীরে মানুষের অধিকার রক্ষার দাবি রয়েছে । একজন প্রাক্তন বিধায়ক চারদিন ধরে পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন । কারণ তিনি মানুষকে জড়ো করেছিলেন । সেখানে মানুষের অধিকার রক্ষার দাবিতে আন্দোলনের জন্য তাঁকে মুরগির খামার পোড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে । অভিযোগ জানানোর পরেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি । এমনকি যে পুলিশ অফিসাররা অভিযুক্ত, তাঁদের বিরুদ্ধেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি ।"

এই অভিযোগ শোনার পর বিচারপতি জানতে চান, "সেই অফিসাররা তদন্ত করছেন ? আবার তাঁরাই আইনশৃঙ্খলা সামলাচ্ছেন ?" জবাবে বিকাশরঞ্জন জানান, "হ্যাঁ, তাঁদের কাছেই আবার অভিযোগ জানাতে হচ্ছে ।"

সন্দেশখালিতে ইন্টারনেট কাল অর্থাৎ সোমবার রাত থেকে চালু করা হয়েছে বলে রাজ্যের তরফে আদালতে জানানো হয় । সেই নিয়ে ফের রাজ্যের উদ্দেশে কড়া ভাবে বিচারপতি বলেন, "গোটা সন্দেশখালি এলাকা জুড়ে টেনশন রয়েছে, তাই 144 ধারা ! আমি বুঝতাম নির্দিষ্ট দুটো বা তিনটে জায়গা হলে । গোটা এলাকা জুড়ে টেনশন ! এর পরে বলবেন, গোটা কলকাতা জুড়ে টেনশন । তাই 144 ধারা গোটা শহরে ।"

বিচারপতির এই মন্তব্য শোনার পর রাজ্যের তরফে বলা হয়, বহু লোক একসঙ্গে জড়ো হয়েছে । বিক্ষোভ করছে । তার যথাযথ কারণ আছে কি না সেটাও কোর্টের দেখা দরকার । কোর্টকে বলব 144 ধারা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সেটা খতিয়ে দেখতে ৷ আর এখানে কতজন মামলা করেছেন ? দুটো লোক । তাঁরা বলছেন গোটা এলাকা নিয়ে অভিযোগ ।"

এ কথা শোনার পর ক্ষোভের সুরে রাজ্যের উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, "তিন বছর ধরে অভিযোগ নেননি । এলাকার মহিলারা নিরাপত্তার অভাব অভিযোগ করেছেন । আর এখন মামলার টেকনিক্যালিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলে ব্যাপারটা অন্য দিকে ঘোরাচ্ছেন !" রাজ্য জানায়, এফআইআর-এ নাম থাকা এক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন। এ কথা শুনে বিচারপতি বলেছেন, "তারপরেও বলছি, এখানে এমন কিছু অভিযোগ করা হয়েছে, যেগুলো দেখে কোর্ট চোখ বন্ধ করে রাখতে পারে না ।"

আরও পড়ুন:

  1. সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতনের অভিযোগের তদন্তে 10 সদস্যের কমিটি গঠন পুলিশের
  2. 'সন্দেশখালির ঘটনা ভয়াবহ, রবীন্দ্রনাথের ভূমিতে ভাবাই যায় না', প্রতিক্রিয়া রাজ‍্যপালের‌
  3. 'শাহজাহান-শিবু গ্রেফতার না হলে অত‍্যাচার আরও বাড়বে', রাজ্যপালের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ মহিলাদের
Last Updated : Feb 13, 2024, 6:47 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.