কলকাতা, 25 এপ্রিল: "বেআইনি নির্মাণ বন্ধ করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে শুধু সরকারি বিধিনিষেধ তৈরি করে কিছু হবে না ৷ রাজনৈতিক সদিচ্ছা আছে কি না সেটা দেখুন", রাজ্যের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে এই মন্তব্য করলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবাজ্ঞানম ৷
তিনি বলেন, "যে সব এলাকায় দিনের পর দিন বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে, সেখানকার জনপ্রতিনিধি তাঁর কিছুই জানেন না, এটা হতে পারে না ৷ এমন প্রতিনিধিদের পদে থাকার কোনও অধিকার নেই ৷ শুধু সরকারি অফিসারদের দোষ দিয়ে বা তাঁদের শাস্তি দিয়ে এই সমস্যার কোনও সমাধান হবে না ৷ রাজনীতিকদের আগে সৎভাবে এই বেআইনি বন্ধ করার ইচ্ছে দেখাতে হবে ৷"
এদিন প্রধান বিচারপতি বলেন, "রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে আপনারা আপনাদের কেএমসি হেড অফিসের সামনে থেকে বেআইনি হকার সরাতে পারেননি ৷ আপনাদের নেতারা সব জেনেও চুপ থাকেন ৷ যেমন বিধাননগর পৌরসভা ৷ তারা বেআইনি নির্মাণ ভাঙার বদলে হাত তুলে নিল, বাসিন্দাদের বিক্ষোভের কথা বলে ৷ আবারও বলছি রাজনৈতিক সদিচ্ছা খুব জরুরি ৷"
গার্ডেনরিচের বহুতল ভাঙার মামলায় বেআইনি নির্মাণ রুখতে রাজ্য কী পদক্ষেপ করছে, সে ব্যাপারে দু'সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি টিএস শিবাজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ ৷
একই সঙ্গে বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত মামলার শুনানি করতে হাইকোর্টে আলাদা কোনও ডিভিশন বেঞ্চ তৈরি করা যায় কি না, সে বিষয়ে আদালত বিবেচনা করবে বলেও জানালেন প্রধান বিচারপতি ৷
গার্ডেনরিচের ঘটনায় মৃতদের 5 লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া যাবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ৷ একইভাবে আহতদের 1.50 লক্ষ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া যাবে না জানালো ডিভিশন বেঞ্চ।
মামলাকারীর আইনজীবী বলেন, গার্ডেনরিচের ঘটনায় আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। গোটা রাজ্যে একইরকম অবস্থা। বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে অন্তত ২০০ টি মামলা রয়েছে। হাইকোর্টের উচিত এই বিষয়টি স্বতপ্রনোদিত মামলা হিসাবে গ্রহণ করা। বিচারপতি সিনহা ও সৌগত ভট্টাচার্যর ডিভিশন বেঞ্চ তৈরি করে মামলার শুনানি করার আর্জি।
কলকাতা পুরসভার আইনজীবী জয়দীপ কর কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানাতে গেলে ক্ষুব্ধ প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, কোথাও বহুতল ভেঙে পড়ে ১০জন মারা গেলাও, তারপর প্রশাসন জানালো তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের আবার কয়েকদিন পরে জামিন হয়ে গেছে। আক্রন্তদের ক্ষতিপুরন দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ফের নতুন প্লট খুঁজে প্রোমোটর বেয়াইনি নির্মান করছে তাহলে আখেরে হচ্ছে কি?পুরসভার আইনজীবীকে প্রধান বিচারপতি - আপনারা আপনাদের অফিসারদের আরো সক্রিয় করুন,তাদের ক্ষমতাবৃদ্ধি করুন।
বেআইনি নির্মান বন্ধ করার বিষয়ে রাজ্যের ভুমিকার কড়া সমালোচনা প্রধান বিচারপতির।মুলত বিধাননগর ও কলকাতা পুর এলাকায় যেভাবে পুকুর বা জলাশয় ভরাট করে বেয়াইনি নির্মান হচ্ছে সে ব্যাপারে প্রশাসন কোনো কঠোর পদক্ষেপ করছে না বলেই মনে করে আদালত। লোকাল রাজনৈতিক নেতাদের সমর্থন না থাকলে এই ধরনের বেয়াইনি নির্মান তৈরি সম্ভব নয় বলেও জানালেন প্রধান বিচারপতি।
আরও পড়ুন:
বেআইনি নির্মাণ ঠেকাতে কড়া দাওয়াই কলকাতা পৌরনিগমের, চিঠিতে নয়া নির্দেশ পৌর কমিশনারের