কলকাতা, 4 মার্চ: সন্দেশখালিতে ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনার তদন্তভার দেওয়া হোক সিবিআইকে ৷ এমনটাই বলে, প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানাল ইডি। তারা জানায় সন্দেশখালিতে ইডির আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনার তদন্ত নিজেদের হাতে নিতে চাইছে রাজ্য পুলিশ । প্রধান বিচারপতি বিষয়টি শুনে আপাতত রায় দেননি এই মামলার। তবে, শীঘ্রই রায় দেবেন বলে জানিয়েছেন বিচারপতি।
সন্দেশখালিতে ইডির আধিকারিকরা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় সিবিআই ও ইডির সিট গঠন করে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছিল বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত'র বেঞ্চ। কিন্তু প্রধান বিচারপতি সেই নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছেন। সেই ঘটনার তদন্ত রাজ্য পুলিশ সিআইডির হাতে হস্তান্তর করতে চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ জানালেন, অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু। একইসঙ্গে অবিলম্বে এই মামলা সিবিআইয়ের হাতে ট্রান্সফার করা হোক বলে আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
এদিন শাহজাহানের তরফে আইনজীবী সব্যসাচী বন্দ্যোপাধ্যায় আর্জি জানান, তাঁর মক্কেলের আগাম জামিনের আবেদন সংক্রান্ত মামলার শুনানি করুক প্রধান বিচারপতি। যদিও প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, তিনি এই মামলা যথাযথ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠাবেন। প্রধান বিচারপতি রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের কাছে জানতে চান, যেখানে তদন্তে স্থগিতাদেশ দেওয়া রয়েছে। সেখানে কীভাবে সিআইডির হাতে তদন্ত হস্তান্তর করল রাজ্য পুলিশ? এবং কীভাবে রাজ্য পুলিশ শাহজাহানকে নিজেদের হেফাজতে রেখেছে?
সিবিআইয়ের তরফে আইনজীবী এসভি রাজু বলেন, "যদি তদন্ত সিআইডির হাতে থাকে তাহলে তা সাংঘাতিকভাবে ব্যাহত হবে। তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হতে পারে। তাই অবিলম্বে এই মামলার তদন্ত হস্তান্তর করা উচিত সিবিআইয়ের হাতে। অন্যদিকে, রাজ্যে এজি কিশোর দত্ত এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে বলেন, "রেশন দুর্নীতি মামলায় 5 জানুয়ারি ইডি শাহজাহানের বাড়িতে গিয়েছিল তখন ইডির আধিকারিকরা পুলিশকে জানায়নি। পরে পুলিশ গিয়েছিল তাঁদের উদ্ধার করতে বা বাঁচাতে । কিন্তু পুলিশ সেখানে যুক্ত ছিল না। পরে পুলিশ নতুন এফআইআরের ভিত্তিতে গ্রেফতার করেছে শাহজাহানকে। ফলে এখন আর তদন্ত হস্তান্তর করার প্রশ্ন ওঠে না।"
এসভি রাজু আরও বলেন, "রাজ্য পুলিশ তদন্তকে বিভ্রান্ত করবে। অন্যদিকে ঘোরাতে চাইবে। যারা ইডি আধিকারিকদের উপর আক্রমণ করেছিল তাদের কিছু হল না। উলটে ইডি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে মহিলাদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ করা হয়েছে। ফলে অনুমান করা যায় এই মামলা পুলিশ চাইবে অন্যদিকে ঘোরাতে। রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আমরা সন্দিহান। সেই জন্য সিবিআইয়ের হাতে দেওয়া হোক তদন্তের দায়িত্ব। এজি কিশোর দত্ত পালটা ফের 5 জানুয়ারির ঘটনার কথা উল্লেখ করে জানান, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলেও রাজ্য পুলিশ সেদিন ইডির আধিকারিকদের ক্ষুব্ধ দুষ্কৃতীদের হাত থেকে বাঁচিয়েছিল। সেদিনের ঘটনায় মোট তিনটি এফআইআর দায়ের হয়েছিল। তাতে ইডির দায়ের করা একটি এফআইআরও রয়েছে। এজির আরও বক্তব্য রাজ্য পুলিশ সিআইডির হাতে তদন্তভার দিয়ে আইনগত দিকে কিছু ভুল করেনি।"
ইডির আইনজীবী ধীরজ ত্রিবেদী বলেন, "পুলিশ কিছু করেনি সেটা তাদের অভিযোগ নয়। কিন্তু তিনি প্রশ্ন তোলেন পুলিশ এতদিন বসেছিল কেন? হাইকোর্ট নির্দেশ দিল যখন ইডি, সিবিআই বা পুলিশ যে কেউ গ্রেফতার করতে পারে তারপর তারা গ্রেফতার করল। এখন তাদের হেফাজতে রেখে দিয়েছে ৷ তাদের সবসময় উদ্দেশ্য তদন্তের পথে বাধা সৃষ্টি করা? রাজ্যপুলিশ পরিকল্পিতভাবে তদন্ত ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করল ইডির অভিযোগের ভিত্তিতে।"
তিনি আরও বলেন, "এখনও তার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ কিছুই করেনি। ধরে রেখে দিয়েছে। এই জন্যই তদন্ত হস্তান্তর করা প্রয়োজন। একইকথা অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেলও বলেন, "রাজ্য পুলিশের উপর তাদের ভরাসা নেই। সিবিআইয়ের হাতে তদন্ত হস্তান্তর করা হোক। তারা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এখনও কোনও রায় হয়নি এই মামলার। শীঘ্রই রায় দেবেন বলে জানিয়েছেন বিচারপতি।
আরও পড়ুন: