কলকাতা, 24 জানুয়ারি: সিবিআই তদন্তে ডিভিশন বেঞ্চের স্থগিতাদেশের নির্দেশের নথি বা লাইভ স্ট্রিমিংয়ের ভিডিয়ো কোথায় ? বিচারপতির প্রশ্নে, জবাব বা নথি কিছুই নেই রাজ্য সরকারের আইনজীবীর কাছে ৷ ফলে নিজের পূর্ব নির্দেশ অনুযায়ী, সিবিআই আধিকারিকদের হাতে মেডিক্যাল কলেজে ভুয়ো জাতি শংসাপত্রের সাহায্যে ভরতির মামলার নথি তুলে দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ সঙ্গে সিবিআই আধিকারিকদের তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, ভুয়ো জাতি শংসাপত্র মামলায় এফআইআর দায়ের করে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে ৷
মেডিক্যাল কলেজে ভুয়ো জাতি শংসাপত্র দেখিয়ে ভরতির মামলার শুনানিতে, পরতে পরতে নাটকীয় মোড় ৷ আজ দুপুরে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিবিআই তদন্তের নির্দেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেছিলেন অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত ৷ একঘণ্টার মধ্যে সিঙ্গল বেঞ্চের সেই রায়ে স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে বলে জানা যায় ৷ এবার সেই স্থগিতাদেশ নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল ! কারণ, বেলা আড়াইটার সময় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে দ্বিতীয় দফার শুনানি শুরু হয় ৷
সেখানে বিচারপতিকে রাজ্য সরকারের আইনজীবী বিশ্বব্রত বসু মল্লিক জানান, বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ তাঁর রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছে ৷ যে কথা শুনে তিনি আইনজীবীর কাছে স্থগিতাদেশের নথি অথবা লাইভ স্ট্রিমিংয়ের ভিডিয়ো দেখতে চান ৷ কিন্তু, সরকারি আইনজীবী কোনও প্রামাণ্য নথি পেশ করতে পারেননি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে ৷ তাই রাজ্য সরকারি আইনজীবীর দাবি খারিজ করে দেন বিচারপতি ৷ সেই সঙ্গে সিবিআই আধিকারিকদের হাতে মামলা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি তুলে দেন ৷ সঙ্গে নির্দেশ দিয়েছেন, এফআইআর দায়ের করে এই মামলার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করতে ৷
উল্লেখ্য, এ দিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পরেই ডিভিশন বেঞ্চে যান অ্যাডভোকেট জেনারেল ৷ জরুরি ভিত্তিতে তিনি সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের বিরুদ্ধে আবেদন করেন এবং স্থগিতাদেশ চান ৷ আবেদনে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, "মেডিক্যাল কলেজে ভরতিতে ভুয়ো জাতি শংসাপত্র মামলায় রাজ্য সরকারের বক্তব্য শুনতেই চায়নি সিঙ্গল বেঞ্চ ৷ আমাদের বক্তব্য না শুনেই বিচারপতি একতরফা ভাবে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ৷ আমাদের আবেদন, আগে আমাদের বক্তব্য শোনা হোক ৷" এর পরেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চের দেওয়া সিবিআই তদন্তের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ ৷
আগামিকাল এই মামলার পরবর্তী শুনানি হতে পারে ডিভিশন বেঞ্চে ৷ আজ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ভুয়ো জাতি শংসাপত্র মামলা সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন ৷ যে নির্দেশ দেওয়ার সময় তিনি মন্তব্য করেছিলেন, "রাজ্য বিষয়গুলিকে আড়াল করার চেষ্টা করছে ৷ আপনারা শেখ শাজাহানকে গ্রেফতার করতে পেরেছেন কি ? এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে আমার রাজ্যের উপর ভরসা নেই ৷ অবিলম্বে কারা এই ফেক সার্টিফিকেট ইস্যু করেছে ? এর পেছনে কোনও আর্থিক লেনদেন আছে কি না, তা সিবিআইকে খুঁজে বার করতে হবে ৷"
উল্লেখ্য, গত শুনানিতেই মেডিক্যাল নিট-এ ভুয়ো জাতি শংসাপত্র দেখিয়ে ভরতির মামলায় সিবিআই তদন্তের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বিচারপতি ৷ সেই সময় তিনি বলেছিলেন, "একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ৷ সব পক্ষের বক্তব্য জানতে চাই ৷ আদালত মনে করলে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেবে ৷"
মেডিক্যাল নিট-এ ভুয়ো জাতি শংসাপত্র দেখিয়ে কিছু ছাত্রছাত্রী সংরক্ষিত কোটায় সরকারি মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে ৷ এই জাতি শংসাপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে, দাবি করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন পশ্চিম বর্ধমানের ইতশা সরেন ৷ 2023 সালে নিট দিয়ে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পান ইতশা ৷ প্রায় 27 জনের নামে ভুয়ো জাতি শংসাপত্র দেখিয়ে সরকারি মেডিক্যাল কলেজের আসন দখলের অভিযোগ করেন তিনি ৷
সেই মামলায় বিচারপতি প্রশ্ন তুলেছিলেন, "সিনহা, ভৌমিক, মণ্ডল, বড়ুয়া- এঁরা কি সত্যি সংরক্ষিত কোটায় পড়েন ?" পাশাপাশি অভিযুক্ত সমস্ত ছাত্রছাত্রীর নাম, ঠিকানা ও জাতি শংসাপত্র হলফনামা আকারে জমা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি ৷ সেই সময় মেডিক্যাল এডুকেশন বোর্ডের ডিরেক্টরকে ডেকে বিচারপতির প্রশ্ন করেছিলেন, "অভিযোগ ভিত্তিহীন হতেই পারে ৷ কিন্তু, সেই অভিযোগের ভিত্তিতে কেন তদন্ত করেনি বোর্ড ? এ দিন সেই হলফনামা জমা পড়ার পর, আদালত মনে করছে অভিযোগের সারবত্তা রয়েছে ৷
আরও পড়ুন: